ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাম্বানটোটা বন্দর লিজ দেয়া যার সর্বশেষ উদাহরণ

চীনের ঋণ কূটনীতির জালে আটকা শ্রীলঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

চীনের ঋণ কূটনীতির জালে আটকা শ্রীলঙ্কা

চীনের ঋণ-কৌশল-কূটনীতির সাম্প্রতিক শিকার শ্রীলঙ্কা। চীনের কাছে শ্রীলঙ্কা এর গুরুভার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে এর কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হাম্বানটোটা এ এশীয় ক্ষমতাধর দেশটির কাছে এ মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছে। চীনের বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) জন্য এটি এক বড় ধরনের আইন। প্রেসিডেন্ট শিজিনপিং এটিকে এ শতাব্দীর প্রকল্প হিসেবে এবং চীনের ঋণ-কৌশল-কূটনীতি কতটা সক্রিয় হতে পারে তারই প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। খবর এশিয়া টাইসম অনলাইনের। চীনের ঋণ শর্ত আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের মতো নয়। চীনের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করলে তা ফেরত দিতে অসমর্থ হলে মূল্যবান কিছু দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং তা হবে কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ যা দীর্ঘ-মেয়াদে মূল্যবান (এমনকি তা স্বল্প-মেয়াদের বাণিজ্যিক গুরুত্ব কম থাকলেও)। শ্রীলঙ্কা ঋণ হ্রাস চুক্তির অংশ হিসেবে হাম্বানটোটা বন্দর চীনের কাছে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, হাম্বানটোটা প্রশান্ত মহাসাগর এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে এশিয়ার সংযোগরক্ষাকারী রুটের মাঝ-অবস্থানে রয়েছে। অধিকতর দরিদ্র দেশগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো অর্থায়ন ও নির্মাণের বিনিময়ে চীনের জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদে অনুকূল প্রবেশ। উপরন্তু শ্রীলঙ্কার স্পষ্ট অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, চীনের অর্থায়ন এর অংশীদার দেশগুলোর জন্য অধীনস্থতার সৃষ্টি হতে পারে। অনুদান বা সুবিধাজনক ঋণ না দিয়ে চীন বরং বাজার-ভিত্তিক দরে বিশাল প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ঋণ দিতে সমর্থ হয় কোন স্বচ্ছতা ও সামাজিক প্রভাব নিরূপণ ছাড়াই। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন সম্প্রতি বিআরআই বিষয়ে বলেছেন। চীন এর নিজস্ব নিয়ম-নীতি ও ধরন নিরূপণ করতে চাইছে। চীন এর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার জন্য যেখানে সম্ভব কৌশলগত বন্দরগুলো সরাসরি কেনার জন্য দেশের কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করে এসেছে। একটি চীনা প্রতিষ্ঠান গত বছর গ্রিসের কাছ থেকে ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর পাইরাইউজের অর্জন লাভ করে ৪৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে। এ বন্দরটি ইউরোপে বিআরআইয়ের ‘ড্রাগন হেড’ হিসেবে অবদান রাখবে। চীন এভাবে এর অর্থনৈতিক প্রভাব তৈরির মধ্য দিয়ে এক ঢিলে দু’পাখি মারতে চাইছে। প্রথম দেশটি রফতানি বৃদ্ধির মধ্যে দেশে অতিরিক্ত ভার লাঘব করতে চাইছে এবং দ্বিতীয়ত, দেশটি এর কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদ অর্জন, এর মুদ্রার আন্তর্জাতিক ব্যবহার বৃদ্ধি এবং অন্যান্য শক্তি বিষয়ে সম্পৃক্ত অগ্রগতি অর্জনসহ এর কৌশলগত দিকে অগ্রগতি অর্জনের প্রত্যাশা করছে। চীনের এ উদ্যোগ এবং হাম্বানটোটা বন্দরের লিজ গ্রহণ এক দিক থেকে পরিহাসপূর্ণ অন্তত বলা যায় কিছুটা হলেও। শ্রীলঙ্কার মতো ছোট দেশগুলোর সঙ্গে চীনের এ ধরনের উদ্যোগ ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক যুগে দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবহৃত আচরণের প্রতিরূপ। চীনের বিরুদ্ধে এ অপমানজনক আচরণের শুরু হয় ১৮৩৯-১৮৬০ সালে আফিম যুদ্ধের সূচনায় এবং তার অবসান হয় ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্টদের দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে। ১৯৯৭ সালে হংকংয়ের ওপর চীন এর সার্বভৌমত্ব পুনপ্রতিষ্ঠা করে এক শতাব্দীকাল ব্রিটিশ শাসনে থেকে। চীন এখন চাইছে এর নিজস্ব হংকং স্টাইলে নতুন ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে।
×