ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ আবদুল হাই

অভিমত ॥ প্রসঙ্গ ॥ রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

অভিমত ॥ প্রসঙ্গ ॥ রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম

স্বদেশ রায় শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের একজন শুভাকাক্সক্ষী এ কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। যে লেখাটি নিয়ে আলোচনা করছি সেটি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থার ওপর লেখাÑ তাই কিছু মন্তব্য সংযোজন দরকার বলে মনে হয়। গতকাল ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম ‘ইউনিয়ন ছাত্রলীগ বা থানা ছাত্রলীগ কিভাবে হয়; থানা বা ইউনিয়ন তো কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়।’ ছাত্রলীগ ছাত্রদের সংগঠন; এটা হওয়ার কথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক। ইউনিট তথা থানা বা জেলা বা ইউনিয়নভিত্তিক ছাত্রলীগ কিভাবে হয়? ছয় নারী নিয়ে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদকের ঘটনা খবরের কাগজেই ছাপা হয়েছে। সংগঠন কিভাবে সাজানো হবে তার একটি সাংগঠনিক কাঠামো থাকে। শোসনিক বিন্যাস কমান্ড স্ট্রাকচার সবই অনুমোদিত থাকে। স্বদেশ রায়ের লেখায়ই উল্লেখ আছে বারো বছর ধরে কোথাও কোথাও একই কমিটি আছে কোথাও আহ্বায়ক কমিটি দ্বারাই বছরের পর বছর চলছে; কোন খোঁজ-খবর নেই। আহ্বায়ক কমিটি করতে নাকি নেতাকে দশ লাখ টাকা দিতে হবে- এ কারণে আহ্বায়ক কমিটিই হচ্ছে না এমন নজিরও আছে। সংগঠন হিসাবে রাজনৈতিক দল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন, সংবিধানে যার স্বীকৃতি আছে। বাংলাদেশে যে কোন সংগঠন হোক তা সমবায় সমিতি বা সমাজকল্যাণ সমিতি বা এনজিও সব সমিতিই কোন না কোন কর্তৃপক্ষের অধীনে ন্যস্ত; কেবল রাজনৈতিক দলই কোন মন্ত্রণালয় বা দফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। এই সংগঠনটিকে অবাধ স্বাধীনতা দেয়ার কারণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনার মূল যে সংস্থা সরকার, তা গঠিত হয় রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে। রাজনৈতিক দল তাদের আদর্শে লোকজনকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করে; বিপদে-আপদে জনগণের পাশে দাঁড়ায়; জনগণের সামাজিক আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে সহায়তা করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন যার রয়েছে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে স্বাধীনতা অর্জনের মতো গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। সে দল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কেন আওয়ামী লীগের সংগঠন শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তাকে তাদের ভোটে রূপান্তরিত করতে পারছেন না? বাস্তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোর অবস্থাটা কী? কেন তারা পারছে না? স্বদেশ রায় কিছু উদাহরণ টেনেছেন যেখানে দেখা যাচ্ছে বারো বছর আগে গঠিত কমিটি আর নবায়ন হয়নি; এখনও চলছে; তদারকি বলতে কিছু নেই; যার যার মতো চলছে। সারাদেশেই সাংগঠনিক অবস্থা মোটামুটি একই। আমার দৃষ্টিতে এর কারণ হলোÑ যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সংগঠনে কোন আধুনিকতার ছাপ না লাগা। সেই মান্দাতার আমলের প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠন, কমিটির অনুমোদন সবই সত্তরের দশকে পড়ে আছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজেকে যতটা সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ ততটা সমৃদ্ধ হতে পারেনি। সেই ‘সিল মাররে ভাই সিল মার কিংবা হাতি না নৌকা; নৌকা নৌকা’ জাতীয় স্লোগান দিয়ে এখনও মাঠ গরম করা হয়। এত পরিবর্তন হয়ে গেল; ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দিয়ে শেখ হাসিনাই বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেলেন; দলকে আধুনিকায়ন করার জন্য রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধি জারি করা হলো; নির্বাচন কমিশনকে নিবন্ধকের দায়িত্ব দেয়া হলো; ছবিযুক্ত এনআইডি কার্ড থেকে স্মার্টকার্ড পর্যন্ত হয়ে গেল অথচ তার কোন ছোঁয়া লাগল না রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায়; এটা ভাবতে কষ্ট হয়। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী সর্বনি¤œ স্তর যদি ধরি ওয়ার্ড তবে নেমে আসি ওয়ার্ড কমিটি কিভাবে গঠিত হবে। একটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের যারা কার্ডধারী সদস্য তারা হলেন ভোটার। সাধারণ ভোটাররা সরাসরি গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটির সদস্যদের নির্বাচন করবেন। প্রয়োজনে নিবন্ধক হিসেবে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণ তদারকি করবেন। ওয়ার্ড কমিটির সদস্যরা ইউনিয়ন কমিটি নির্বাচিত করবেন অথবা হতে পারে প্রতি ওয়ার্ড থেকে গ্রাম প্রতি ডেলিগেট মনোনীত করে তাদের মাধ্যমে ইউনিয়ন কমিটি নির্বাচিত হবে। ওয়ার্ড কমিটি ও ইউনিয়ন কমিটির সদস্যরা থানা কমিটি নির্বাচনে ভোটার হবেন। ওয়ার্ড-ইউনিয়ন-থানা প্রত্যেক ক্ষেত্রেই নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সভাপতি নির্বাচন করবেন। জেলা বা জাতীয় কমিটি আলোচনার বাইরে রাখলাম আপাতত কমিটি অনুমোদনের বর্তমান পদ্ধতি অচল। প্রত্যেক ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত ভোটের ফলাফল হবে চূড়ান্ত। এখানে আলাদা অনুমোদনের প্রয়োজন অবান্তর। কমিটির মেয়াদ, দায়-দায়িত্ব দলের গঠনতন্ত্রে থাকবে; গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত হবে যা দলনিবন্ধন বিধিতে উল্লেখ আছে। নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিলে ছয় মাসের মধ্যে সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় কাঠামোর নির্বাচন করতে অবশ্যই তৎপর হবে। যেসব কমিটির কথা দল নিবন্ধন বিধিতে বলা আছে তার বাইরে কোন দলই কমিটি করতে পারবে না, বিশেষ করে ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবীদের নিয়ে কোন দলীয় সংগঠন করা যাবে না বলে যে বিনির্দেশ নিবন্ধন বিধিতে আছে তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। বিদেশে কোন দলের কোন অফিস থাকবে না বা অঙ্গ সংগঠন থাকতে পারবে না বলে যে বিধান নিবন্ধন বিধিতে আছে তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি যদি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জারি করা নিবন্ধন বিধি মেনে চলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস রাজনীতিতে সুবাতাস বইতে বাধ্য। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি যদি রাজনীতির ব্যাকরণ মেনে চলে; বিএনপির আজগুবি দাবি সহায়ক সরকার কিংবা দল নিরপেক্ষ সরকার তার কোনটাই লাগবে না। লেখক : সাবেক আমলা
×