ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাখাইন থেকে এখনও আসছে রোহিঙ্গারা ॥ দুদিনে এসেছে ২৫২

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

রাখাইন থেকে এখনও আসছে রোহিঙ্গারা ॥ দুদিনে এসেছে ২৫২

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতিত নিপীড়িত ও ঘরবাড়ি হারিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে যখন দুই দেশের তৎপরতা চলছে ঠিক তখনও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। গত শুক্র ও শনিবার দুদিনে টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছে ২৫২ রোহিঙ্গা। এদের টেকনাফের নয়াপাড়া আশ্রয় ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ হোসেন সিদ্দিক। এদিকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক আগামী ১৫ জানুয়ারি মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় দুদেশের পক্ষে ১৫ জন করে ৩০ সদস্যের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠিত হয়। জানা গেছে, ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে প্রথম পর্যায়ে এক লাখ রোহিঙ্গার নামের তালিকা প্রত্যাবাসনের জন্য উত্থাপন করা হবে। নামের তালিকা নিয়ে সে দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্যরা সম্মতি দিলে শুরু হয়ে যাবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। প্রাথমিকভাবে এক লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে পরবর্তীদের নিয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিষয়টি যতই ঘনিয়ে আসছে উখিয়া টেকনাফে আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের মাঝে ফিরে না যেতে উস্কানিমূলক তৎপরতা শুরু হয়েছে। নানা গুজবও ছড়ানো হচ্ছে। সেখানে ফিরে গেলে তাদের রিফিউজি হয়ে থাকতে হবে, খাদ্যাভাবে জীবন বাঁচানো কঠিন হবে, সর্বোপরি যেহেতু তাদের নাগকিত্বের অধিকার নেই, সেক্ষেত্রে তাদের অধিকার বলতে কোন কিছুই মিলবে না। এ জাতীয় কথাবার্তা ছাড়াও আরও বিভিন্ন বিষয়ে রোহিঙ্গাদের উস্কানি দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত না হয়। এদিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে সেখানকার উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে তিনটি ব্যারাক নির্মাণাধীন। প্রাথমিক পর্যায়ে ফিরিয়ে নেয়া রোহিঙ্গাদের সেখানে রাখা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রথম পর্যায়ের যে ৪৫০ জন আরাকানী সনাতন সম্প্রদায়ের সদস্যদের নেয়ার কথা বলা হয়েছে তা নিয়ে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু রোহিঙ্গা বলছে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি মূলত শুরু হচ্ছে বিশ্ব চাপের মুখে। আর সনাতনী সম্প্রদায়ের সদস্যদের শুরুতে নেয়ার বিষয়টিও ওই চাপের অংশ। তাদের বাড়িঘর ফিরিয়ে দেবে। আর রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর সদস্যদের রাখা হবে ব্যারাকে। এসব নিয়ে নানা ধরনের উস্কানিমূলক কথাবার্তা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশে আশ্রিত আট লাখ রোহিঙ্গার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে সরকারী পর্যায়ে। এদের মধ্য থেকেই এক লাখের তালিকা ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। নাম উপস্থাপনের প্রক্রিয়াটি এসেছে মূলত মিয়ানমারের শর্তের কারণে। ইতোমধ্যে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তাদের সেখানে বসবাসের কোন না কোন প্রমাণ দেখাতে হবে। অন্যথায় তারা কাউকে ফেরত নেবে না। মূলত এ কারণে নাম চেয়েছে মিয়ানমার পক্ষ এবং তা তারা যাচাই বাছাই করে দেখবে। এছাড়া বাংলাদেশে এ পর্যন্ত নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের সকলকে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির আওতায় আনা হয়েছে। তাদের কাছে এ সংক্রান্তে কার্ড প্রদান করা হয়েছে।
×