ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জেএসসি ও জেডিসিতে পাসের হার ও জিপিএ ৫ কমেছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

জেএসসি ও জেডিসিতে পাসের হার ও জিপিএ ৫ কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও (জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট) জেডিসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। বেড়েছে শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। কমেছে শতভাগ উত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। গুরুত্বপূর্ণ সব সূচকেরই ফলের অবনতি ঘটেছে। এবার পাস করেছে ৮৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং এক লাখ ৯১ হাজার ৬২৮ জন পেয়েছে জিপিএ-৫। গত বছর পাস করেছিল ৯৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। এক বছরের ব্যবধানে পাসের হার কমেছে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। জিপিএ-৫ কমেছে ৫৫ হাজার ৯৬০ জন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শনিবার দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এবারের ফলের পরিসংখ্যান তুলে দেন। পরে বেলা ২টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী পরীক্ষার বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। এরপরই সারাদেশের শিক্ষার্থী নিজ নিজ কেন্দ্র ও স্কুল থেকে ফল জানতে পারে। ফল জানা যায় ইমেইল, ওয়েবসাইট, মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও। এবার আট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেএসসিতে পাসের হার ৮৩ দশমিক ১০ শতাংশ এবং মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত বছর এই দুই পরীক্ষায় সম্মিলিতভাবে পাস করেছিল ৯৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জেএসসিতে ৯২ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং জেডিসিতে ৯৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। জেএসসি ও জেডিসিতে এবার মোট এক লাখ ৯১ হাজার ৬২৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে জেএসসিতে এক লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৭ জন এবং জেডিসিতে সাত হাজার ২৩১ জন জিপিএ-৫ অর্থাৎ পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে। জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় এবার অংশ নিয়েছিল ২৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৪২ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২০ লাখ ১৮ হাজার ২৭১ জন। আর গত বছর এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯৫৯ জন, যার মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭৫ জন। এ হিসেবে এবার এক লাখ ৬৫ হাজার ৭০৪ জন কম উত্তীর্ণ হয়েছে। জেএসসি ও জেডিসির বেশিরভাগ পরীক্ষার প্রশ্নই এবার পরীক্ষার আগে ফেইসবুসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ উঠে। এ বিষয়ে সৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১৯৬১ সাল থেকে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। আগে বিজি প্রেস থেকে পরীক্ষার ২ মাস আগে প্রশ্ন ফাঁস হতো। এখন পরীক্ষার দিন সকালে ফাঁস হয়। কিছু শিক্ষক প্রশ্ন ফাঁস করছেন। আমরা চেষ্টায় আছি এটাও পুরোপুরি বন্ধ করার। সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পরপরই সারাদেশের শিক্ষার্থী নিজ নিজ স্কুল ও কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার ফলাফল জানতে পায়। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন, আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান। যে কোনো মোবাইল ফোন থেকে ঔঝঈ/ঔউঈ লিখে স্পেস দিয়ে নিজ বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০১৭ লিখতে এসএমএস করলে ফিরতি এসএমএসে জেএসসি/জেডিসির ফল জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। শিক্ষাবোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট (যঃঃঢ়://িি.িবফঁপধঃরড়হনড়ধৎফৎবংঁষঃং.মড়া.নফ) এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকেও জেএসসি ও জেডিসির ফল জানা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ই-মেইলেও জেএসসি ও জেডিসির ফলাফলের সফটকপি পাঠায় শিক্ষা বোর্ড। ফল বিপর্যয়ের কারণ ও সরকারের মূল্যায়ন ফল কেন খারাপ হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা কোনো কিছু গোপন করিনি। যা ফল হয়েছে, তাই প্রকাশ করেছি। সার্বিক মূল্যায়নের জন্য সময় দরকার। ফল মূল্যায়নে সবকটি শিক্ষা বোর্ডকে দায়িত্ব দিয়ে পরিপূর্ণ একটি মূল্যায়ন করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এই মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটা সময় ছিল পরীক্ষায় ৫০ শতাংশও পাস করতো না। কিন্তু এখন পাসের হার অনেক বাড়াতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তবে এবার পাসের হার কমেছে। এটা লুকানোর কিছু নেই। তবে কেন কমলো তা এখনি বলা যাবে না। আমরা স্টাডি করব। তারপর বলতে পারব। কুমিল্লা বোর্ডে এবারও পাসের হার কেন কম-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরীক্ষার খাতা খুব সচেতনভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে বলেই ফলের হার কমছে বলে মনে করি। তবে আরও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। নূরুল ইসলাম নাহিদ আরও বলেন, স্কুলে যেন সব শিশুকে আনা যায় সেটাই প্রথম দিকে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এখন চ্যালেঞ্জ সব শিক্ষার্থী যেন পাস করতে পারে। আমরা অনেক কষ্ট করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে এনেছি। উপবৃত্তি দিচ্ছি, বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। স্কুলের অবকাঠামো থেকে সবকিছু সুন্দর করা হয়েছে। টেকনিক্যাল শিক্ষার অগ্রগতি হয়েছে। আমরা প্রযুক্তির কল্যাণকে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাইছি যেন তারা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। শিক্ষকদের জন্যেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর একেএম সায়েফ উল্লাহ বলেন, মাদ্রাসায় ইংরেজি ও আরবি বিষয়ে এবার খারাপ ফল হয়েছে। এজন্য গড় পাসের হার কমেছে। বোর্ডভিত্তিক ফল ॥ আট বোর্ডে এবার বরিশালে পাসের হার সবচেয়ে বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। বরিশাল বোর্ডে গড় পাসের সর্বোচ্চ ৯৬ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং কুমিল্লা বোর্ডে সবচেয়ে কম- ৬২ দশমিক ৮৩ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। ঢাকা বোর্ড থেকে সবচেয়ে বেশি ৭৬ হাজার ৮৪৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। ঢাকা বোর্ড ॥ ঢাকা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ছয় লাখ ৮২ হাজার ৯৫৯ জন, পাস করেছে পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ৭২২ জন। পাসের হার ৮১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৬ হাজার ৮৪৮ জন, গত বছর যা পেয়েছিল ৮৬ হাজার ৩৫০ জন। রাজশাহী বোর্ড ॥ রাজশাহী বোর্ড থেকে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল দুই লাখ ৩৭ হাজার ১০০ জন। পাস করেছে দুই লাখ ২৬ হাজার ৫৩০ জন। পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত বছর যা ছিল ৯৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৭ হাজার ৬৩৩ জন, গত বছর যা ছিল ৪০ হাজার ৪৭১ জন। কুমিল্লা বোর্ড ॥ কুমিল্লা বোর্ডে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৫৩ জন। এর মধ্যে পাস করেছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৪৫৬ জন। গড় পাসের হার ৬২ দশমিক ৮৩ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৮৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এই বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে আট হাজার ৮৭৫ জন, গত বছর যা ছিল ১৯ হাজার ১৮৬ জন। যশোর বোর্ড ॥ যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল দুই লাখ ৯ হাজার ৫১৫ জন, পাস করেছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৭৭৬ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ৬১২ জন, গত বছর যা ছিল ২২ হাজার তিনজন। চট্রগ্রাম বোর্ড ॥ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ ৮০ হাজার ৮৬৮ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ৪৬ হাজার ৮১৪ জন। পাসের হার ৮১ দশমিক ১৭ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ৩১৫ জন, গত বছর যা পেয়েছিল ১৪ হাজার ১৩৫ জন। বরিশাল বোর্ড ॥ বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ ১৮ হাজার ৩৯৭ জন। এর মধ্যে পাস করেছে এক লাখ ১৪ হাজার ৩৫ জন শিক্ষার্থী। বরিশালে এবার গড় পাসের হার ৯৬ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে আট হাজার ৪৩১ জন, ২০১৬ সালে যা পেয়েছিল ১৫ হাজার ৫৭০ জন। সিলেট বোর্ড ॥ সিলেট শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ২০২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৮৮২ জন। এবার গড় পাসের হার ৮৯ দশমিক ৪১ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৯৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সিলেটে এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল সাত হাজার ৬২১ জন, গত বছর যা পেয়েছিল দশ হাজার ২৫৫ জন। দিনাজপুর বোর্ড ॥ দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল দুই লাখ ২৮ হাজার ৩৪৮ জন ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে দুই লাখ এক হাজার ৮০৯ জন শিক্ষার্থী। গড় পাসের হার ৮৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৯২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। দিনাজপুরে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৬২ জন, গত বছর যা ছিল ২৭ হাজার ৮৯ জন। মাদ্রাসা বোর্ড ॥ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে এবার জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল তিন লাখ ৫৮ হাজার ৫৬৯ জন ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে পাস করেছে তিন লাখ ১১ হাজার ২৪৭ জন। গড় পাসের হার ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ৯৪ দশমিক ০২ শতাংশ। মাদ্রাসায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে সাত হাজার ২৩১ জন, গত বছর যা ছিল ১২ হাজার ৫২৯ জন। শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ আসছে ॥ এবার সারাদেশের পাঁচ হাজার ২৭৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৪৫০টি। এ হিসেবে এবার শতভাগ উত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠান চার হাজার ১৭১টি কমেছে। অন্যদিকে এবার ৫৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেনি। গত বছর এই ধরনের প্রতিষ্ঠান ছিল ২৮টি। অর্থাৎ এ বছর শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠান ৩১টি বেড়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কী না জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শতভাগ ফেল বিদ্যালয়ের সংখ্যাও বেড়েছে। যেসব বিদ্যালয়ে কেউ পাস করে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেখানে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু কেউ পাস করে না সেহেতু তারা কিছুই পড়ায় না। তাদের পেছনে খরচ করে তো লাভ নেই। শুধু শুধু সরকারের টাকা নষ্ট।
×