ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইবতেদায়িতে ৯২.৯৪

প্রাথমিক সমাপনীর পাসের হার ৯৫.১৮ ভাগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রাথমিক সমাপনীর পাসের হার ৯৫.১৮ ভাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গেল বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে প্রায় চার শতাংশ, কমেছে সর্বোচ্চ স্কোর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। তবে তারপরেও ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে পঞ্চম শ্রেণীতে অনুষ্ঠিত দেশের সর্ববৃহত পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া খুদে শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর এ পরীক্ষায় এবার পাস করেছে ৯৫ দশমিক ১৮ শতাংশ, গত বছর ছিল ৯৮ দশমিক ৫১। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৬০৯ জন, গত বছর ছিল দুই লাখ ৮১ হাজার ৮৯৮। সাত বিভাগের মধ্যে ৯৬ দশমিক ২২ শতাংশ নিয়ে শীর্ষে বরিশাল, ৬৪ জেলার মধ্যে ৯৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ নিয়ে শীর্ষে আছে গোপালগঞ্জ। ৫০৮ উপজেলা/ থানার মধ্যে ৩টিতে শতভাগ শিশু পাস করেছে। এদিকে সমমানের মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনীতে পাস করেছে ৯২ দশমিক ৯৪ ভাগ। গত বছর ছিল ৯৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে পাঁচ হাজার ২৩ জন, যা গত বছর ছিল পাঁচ হাজার ৯৪৮ জন। ইবতেদায়িতে সর্বোচ্চ পাসের হারে ৭ বিভাগের মধ্যে রাজশাহী বিভাগ আছে শীর্ষে। যেখানে পাসের হার ৯৬ দশমিক ২৮ ভাগ। পঞ্চগড় জেলার পাসের হার সর্বোচ্চ, যেখানে পাস করেছে ৯৯ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। এ স্তরের ৬১টি উপজেলায় শতভাগ ছাত্রছাত্রী পাস করেছে। শনিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অধীনে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার দুপুর ১টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সারাদেশের ফলাফল প্রকাশ করেন। এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আসিফ উজ্জামান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। দেশের সর্ববৃহত এ পাবলিক পরীক্ষায় এবার অংশ নিয়েছিল মোট ২৯ লাখ ৫০ হাজার ৬১৫ জন ছাত্রছাত্রী। এর মধ্যে পাস করেছে ২৮ লাখ দুই হাজার ৭১৫ জন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে এবার নিয়ে পঞ্চমবারের মতো সবচেয়ে ভাল ফল করেছে বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। গত বছরের মতো এবারও সবচেয়ে কম পাস করেছে সিলেট বিভাগে ৯১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। জেলার মধ্যে সবচেয়ে কম ঝালকাঠিতে ৮৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে কম পাস করেছে যশোরের কোশবপুরে। যেখানে পাসের হার ৭১ দশমিক ২০ শতাংশ। বিদ্যালয়ের ধরন অনুসারে ফল ॥ ধরন অনুযায়ী সর্বোচ্চ পাসের হার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে, যেখানে পাস করেছে ৯৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ, অন্যান্য বিদ্যালয়ে পাসের হার যথাক্রমে পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে ৯৯ দশমিক ২৪, ব্র্যাক পরিচালিত বিদ্যালয়ে ৯৮ দশমিক ৩২, উচ্চ বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৮ দশমিক ১০ শতাংশ, কিন্ডারগার্টেনে ৯৮ দশমিক শূন্য ৬, মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ, রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ শিশু পাস করেছে। এছাড়া ১৫০০ বিদ্যালয় নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত বিদ্যালয়ে ৯৪ দশমিক ৫১, নতুন জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯২ দশমিক ৪১, নন রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯০ দশমিক ৮৪ শতাংশ, অস্থায়ী/অনুমতিপ্রাপ্ত বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯০ দশমিক ৫০ শতাংশ পাস করেছে। এছাড়া শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ে ৮৬ দশমিক ৫২, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৬ দশমিক ৪৫ এবং এবং আনন্দ স্কুলে ৭৭ দশমিক ৮০ শতাংশ শিশু পাস করেছে। কোন বিষয়ে কেমন ফল ॥ বিষয়ভিত্তিক কৃতকার্যের চিত্র বলছে, বাংলায় পাস করেছে ৯৮ দশমিক ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী, ইংরেজীতে ৯৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, গণিতে ৯৮ দশমিক ২১ শতাংশ, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়ে ৯৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, প্রাথমিক বিজ্ঞানে ৯৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে পাস করেছে ৯৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ফল ॥ সারাদেশে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন চার হাজার ২৬৬ জন ছাত্রছাত্রী এবার পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছি। তার মধ্যে তিন হাজার ৯৮৪ জন পরীক্ষায় অংশ নেয়। যাদের আবার ছাত্র দুই হাজার ১৫৭, ছাত্রী এক হাজার ৮২৭ জন। মোট পাস করেছে তিন হাজার ৫৫৩ জন, পাসের হার ৮৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। কোন গ্রেডে কত শিশু ॥ মোট পরীক্ষার্থীর ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ জিপিএ-৫ পেয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৬০৯ জন, জিপিএ ৪ থেকে ৫ এর নিচে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ১৯৬ জন, জিপিএ ৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ এর নিচে প্রাপ্ত ৪ লাখ ৫ হাজার ৩৩৯ জন, জিপিএ ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ এর নিচে ৪ লাখ ৯ হাজার ৭৫০ জন, জিপিএ ২ থেকে ৩ এর নিচে ৬ লাখ ৫ হাজার ৯১৮ জন এবং জিপিএ ১ থেকে ২ এর নিচে এক লাখ ৮৫ হাজার ৪৫৯ জন। ইবতেদায়ি সমাপনীর ফলের নানা দিক ॥ ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় মোট দুই লাখ ৫৪ হাজার ৩৯৯ ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করে। ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৪ জন পাস করেছে। পাসের হার ৯২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। উত্তীর্ণদের মধ্যে এক লাখ ১৯ হাজার ৯৪৪ জন ছাত্র এবং এক লাখ ১৬ হাজার ৫০০ জন ছাত্রী। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ২৩ জন। তার মধ্যে ছাত্র দুই হাজার ৬০৭ জন এবং ছাত্রী দুই হাজার ৪১৬ জন। ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ছাত্রদের সংখ্যা বেশি হলেও গড় পাসের দিক থেকে মেয়েরা এগিয়ে আছে। ছাত্রদের পাসের হার ৯২ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সর্বোচ্চ পাসের হার বিবেচনায় ৭ বিভাগের মধ্যে রাজশাহী বিভাগ শীর্ষে। পাসের হার ৯৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। পঞ্চগড় জেলার পাসের হার সর্বোচ্চ, যার শতকরা হার ৯৯ দশমিক ২ শতাংশ। মোট ৬১টি উপজেলায় শতভাগ ছাত্র-ছাত্রী পাস করেছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ৩৫১ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে ৩১৪ জন পাস করেছে। পাসের হার ৮৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফলাফল নিয়ে যা বলছে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর ॥ সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল এবার খারাপ ফলের কারণ কি? আগের বছরের চেয়ে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমার কারণ কি? এমন প্রশ্নে মন্ত্রী সুনর্দিষ্ট কোন কারণ বলতে পারেননি। তবে বলেন, এজন্য গবেষণা দরকার। গবেষণা করে দেখতে হবে। গেল বছরও তথ্যের জন্য গবেষণার কথা বলা হয়েছিল। কর্মকর্তাদের কাছে এমন প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, দেখেন হঠাৎ ফসলে পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে কেউ যদি এক বাক্যে জানতে চায় কেন, তাহলে আমার পক্ষে বলা কঠিন। এরপর মন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরা একদিন আগে ফল ফাঁস হয়ে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরেন। এক সাংবাদিক প্রমাণ তুলে ধরে বলেন, আমার কাছে ফাঁস হওয়া ফলের স্ক্রীন শর্টও আছে। এ প্রশ্নে মন্ত্রী কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এরপর মন্ত্রী বলেন, ‘দেখেন প্রথম দ্বিতীয় শ্রেণীর পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস, নকল হয় এমন তথ্যওতো প্রচার হয়। আর স্ক্রীন শর্টতো আপনি বানাতেও পারেন।’
×