ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্কুলে শিক্ষার মান ঠিক রাখুন ॥ তদারকি বাড়ান

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

স্কুলে শিক্ষার মান ঠিক রাখুন ॥ তদারকি বাড়ান

বিডিনিউজ ॥ সারাদেশে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার মান ঠিক রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ফল হাতে পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এ নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কুলগুলোর দিকে একটু নজর দেয়া দরকার। সেখানে সঠিকভাবে পড়াশোনা হচ্ছে কিনা; এই বিষয়টার দিকে একটু বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। এটা খুবই জরুরী বলে আমি মনে করি’। গণভবনে এই ফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা সচিব এবং মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সারাদেশে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে যার যার বোর্ডের ফলাফলের পরিসংখ্যান তুলে দেন। জেএসসি ও জেডিসিতে এবার পাসের হার এবং জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা গতবারের চেয়ে কমেছে। সম্মিলিতভাবে এবার পাস করেছে ৮৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী; এক লাখ ৯১ হাজার ৬২৮ জন পেয়েছে জিপিএ-৫। গত বছর জেএসসি-জেডিসিতে ৯৩ দশমিক ০৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। দুই লাখ ৪৭ হাজার ৫৫৮ জন পূর্ণ জিপিএ পায়। পাসের হার কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ বছর যেহেতু আপনাদের নজরদারি বেড়েছে; সে কারণে হয়ত একটু কম। আশাকরি ভবিষ্যতে যেন বাড়ে’। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করছে, আমরা সব রকম সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। সেখানে তারা ফেল করবে কেন? তাদের মেধা আছে’। স্কুলগুলোতে নজরদারির পাশাপাশি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠক্রম পরিবর্তনের তাগিদ দেন তিনি। এর আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এবারের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি পরীক্ষার ফলাফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। এবার প্রাথমিকে ৯৫ দশমিক ১৮ শতাংশ ও ইবতেদায়িতে ৯২ দশমিক ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এর মধ্যে প্রাথমিকে ২ লাখ ৬২ হাজার ৬০৯ জন এবং ইবতেদায়িতে ৫ হাজার ২৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এই হিসাবে পঞ্চমের এই সমাপনী পরীক্ষাতেও পাসের হারের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ জিপিএ পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে এবার। প্রাথমিকের ফল পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষায় এখনকার ছেলেমেয়েদের এখন আর ভয় কাজ করে না। তারা তো পরীক্ষা দিয়ে একটা সার্টিফিকেট পাচ্ছে। ক্লাস ফাইভে একটা সার্টিফিকেট পাচ্ছে, এইটে একটা সার্টিফিকেট পাচ্ছে’। আগের বৃত্তি পরীক্ষায় সকলের মেধার প্রকাশ ঘটত না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে বৃত্তিটা আমরা দেব... সবাই পরীক্ষা দেবে। কোথায় যে কার মাঝে কোন মেধাটা লুকিয়ে আছে; আমরা তা জানব কী করে?” প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে থাকতে পারে না? আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে; আমাদের ছেলেমেয়েরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে এবং আমাদের দেশ এগিয়ে নিয়ে যাবে’। সরকার যা চাইছে, শিক্ষক-কর্মকর্তারা তা ‘অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে’ করছেন মন্তব্য করে এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধন ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। ১ জানুয়ারি দেশব্যাপী ‘জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ অনুষ্ঠিত হবে। শেখ হাসিনা শনিবার সকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বই হস্তান্তরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচী উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে মাধ্যমিক পর্যায়ের এক সেট এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান প্রাথমিক পর্যায়ের এক সেট পাঠ্যপুস্তক হস্তান্তর করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী প্রি-প্রাইমারী, প্রাইমারী, সেকেন্ডারি, ইবতেদায়ি, দাখিল-ভোকেশনাল, এসএসসি-ভোকেশনাল, স্মল এনথ্রোপলোজিক্যাল গ্রুপ এবং ভিজুয়ালিটি-চ্যালেঞ্জের চার কোটি ৩৭ লাখ ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২ পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে। বর্তমান সরকার ২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ শুরু করেছে। গণভবন প্রাঙ্গণে খেলা করল শিশুরা বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাঠ্যবই নেয়ার পর স্কুলশিশুরা গণভবন প্রাঙ্গণে খেলাধুলা করেছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটান। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন জানান, ‘পাঠ্যপুস্তক গ্রহণ করার পর ২০ স্কুলশিশু প্রধানমন্ত্রীর কাছে গণভবন প্রাঙ্গণে খেলা করার অনুমতি চায়’। প্রধানমন্ত্রী শিশুদের খেলার অনুমতি দিলে তারা খুশিতে গণভবনের দক্ষিণ প্রাঙ্গণে খেলাধুলা শুরু করে। তারা সেখানে থাকা দোলনা, মই ও স্লিপারসহ বিভিন্ন রাইডারে আরোহণ করে।
×