ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যক্তিগত সাফল্যে উজ্জ্বল সাকিব

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

ব্যক্তিগত সাফল্যে উজ্জ্বল সাকিব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেটে সেরা অলরাউন্ডার কে? একটি নামই সবার চোখের সামনে ভাসে। তিনি সাকিব আল হাসান। যিনি ২০১৭ সালেও তার অলরাউন্ড নৈপুণ্য দিয়ে ব্যক্তিগত সাফল্যে উজ্জ্বলই হয়ে আছেন। টেস্টে এ বছর বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন মুশফিকুর রহীম (৭৬৬ রান)। পরের অবস্থানেই আছেন সাকিব (৬৬৫ রান)। ওয়ানডেতে এ বছর বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন তামিম ইকবাল (৬৪৬ রান)। তার পরে আছেন মুশফিক (৪৫৮ রান)। তৃতীয় স্থানে আছেন সাকিব (৪৩০ রান)। টি২০ তে এ বছর বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন সৌম্য সরকার (২৩৫ রান)। সাকিব আছেন চার নম্বরে (১২০ রান)। বল হাতে ওয়ানডেতে এ বছর দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান (১৪ উইকেট)। সাকিব আছেন ছয় নম্বরে (৬ উইকেট)। এদিক থেকে সাকিব পেছনে। আর কোন স্থান কী আছে, সাকিবকে পেছনে ফেলে? সাকিব আর সবদিকেই উজ্জ্বল। দলকে জেতানোতে তো সাকিবই এ বছর সেরা। সাকিবের নৈপুণ্য ছাড়া জয় যেন এ বছর কল্পনাই করা যেত না! এ বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে বছর শুরু হয় বাংলাদেশের। সাকিব ২১৭ রানের একটি ইনিংস খেলেন। যা কিনা দেশের হয়ে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস হয়ে গেছে। ভারতের বিপক্ষে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। এক ইনিংসে ৮২ রান করেন সাকিব। দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখান। কলম্বোয় দেশের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে যে হারায় বাংলাদেশ, সেই ম্যাচের এক ইনিংসে ১১৬ রান করেন সাকিব। ইনিংসটি না খেললে কী বাংলাদেশের জেতা সম্ভব ছিল! তামিম ইকবাল তো তাই ম্যাচ সেরা সাকিবকেই ভেবে নিয়েছিলেন। ব্যাট হাতে সাকিবের নৈপুণ্যের ধার তো বুঝেছে আসলে অস্ট্রেলিয়া। এক ইনিংসে ৮৪ রানের ইনিংস খেলে দলকে বড় স্কোর গড়ায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়। এ তো গেল টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং। বোলিংটা তো আরও দুর্দান্ত। টেস্টে এ বছর সাকিবই সবচেয়ে বেশি ২৯ উইকেট নিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেতা টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন। আবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট নিয়ে তো ম্যাচ সেরাই হয়েছেন। সাকিবের অলরাউন্ড নৈপুণ্য ছাড়া অসিদের হারানো খুবই কঠিন ছিল। টেস্টে এ বছর ২টি সেঞ্চুরিসহ ৪৭.৫০ গড়ে ৬৬৫ রানসহ ২৯ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। টেস্টে বিশ্বসেরা অলরাউন্ড এখনও আছেন সাকিবই। এবার ওয়ানডেতে আসা যাক। একটি সেঞ্চুরিসহ ৩৫.৮৩ গড়ে ৪৩০ রানসহ ৬ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। বছরের প্রথম ম্যাচেই যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে জিতেছিল বাংলাদেশ, সেই ম্যাচটিতে ৭২ রান ও ১ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। ম্যাচ জেতায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ওয়ানডেতে এ বছর আসল কাজটিই সাকিবের ব্যাট থেকে হয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে না জিতলে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়বে বাংলাদেশ। এমন মুহূর্তে বিপদে পড়া দলকে টেনে তুলে ১১৪ রানের ইনিংস খেলেন। বাংলাদেশও জিতে। ম্যাচ সেরাও হন সাকিব। বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস রচনা করে। প্রথমবার বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলে। সাকিবের অসাধারণ ব্যাটিংয়েই তা সম্ভব হয়। টেস্ট ও ওয়ানডেতেই শুধু নয়, দলের জয়ে টি২০তে শূল ভূমিকা পালন করেছেন সাকিব। বছরজুড়ে ৭ টি২০ ম্যাচের মধ্যে একটি ম্যাচই জিতে বাংলাদেশ। সেটি জিতে সাকিবের নৈপুণ্যের কল্যাণেই। বছরজুড়ে ১২০ রান ও ৮ উইকেট শিকারী এ অলরাউন্ডার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের জেতা ম্যাচটিতে ৩৮ রান ও ৩ উইকেট নেন। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে। ম্যাচ সেরা হন সাকিব। একটি টি২০ জিতে বাংলাদেশ। সেটিও সাকিবের দুর্দান্ত নৈপুণ্যেই। বছরের শেষ সিরিজ (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ) না খেলা, বিপিএলে ফাইনালে উঠে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারা, সাবেক কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহের সমালোচনার তীর হওয়া ছাড়া আর কোন ব্যর্থতাই বছরটিতে সাকিবকে ছুঁতে পারেনি। শুধু সাফল্যই মিলেছে। ব্যক্তিগত সাফল্যে তাই ২০১৭ সালে উজ্জ্বলই সাকিব!
×