ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্রিকেটে ভাল-মন্দের বছর

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

ক্রিকেটে ভাল-মন্দের বছর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জাতীয় দল গেল এক বছর কেমন পারফর্ম করল? জবাবে মাশরাফি ভাল-মন্দের বছরের কথাই বললেন। জানালেন, ‘আমাদের সবকিছু আমার কাছে মনে হয় ভাল-খারাপ দুটাই ছিল। কিছু কিছু ভাল পারফরম্যান্স ছিল। আবার শুরু এবং শেষটাও ভাল হয়নি। যদি বলেন যে নিউজিল্যান্ড দিয়ে শুরু হয়েছিল, ওটা আমরা ভাল করিনি। টেস্ট ম্যাচে ভাল করেছিলাম। আবার সাউথ আফ্রিকায় শেষ হলো, এটা সবাই জানে ভাল হয়নি। কিছু পারফরম্যান্স হয়তবা আমরা ভাল করেছি। আমার কাছে মনে হয় ভাল খারাপ দুইটা দিয়েই ছিল।’ আসলেই তাই। ২০১৭ সাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভাল-মন্দের বছরই গেছে। ক্রিকেটবিশ্ব এক নতুন বাংলাদেশ দেখেছিল ২০১৫ সালে। সে বছর অসাধারণ কিছু সাফল্য দিয়ে সারা দুনিয়াকে রীতিমতো অবাক করে দিয়েছিল লাল-সবুজের দল। সে ধারাবাহিকতা ছিল ২০১৬ সালেও। ২০১৭ সাল রবিবার শেষ হবে। সোমবার শুরু হবে নতুন বছর। নতুন পথচলাও শুরু হয়ে যাবে। থাকবে চ্যালেঞ্জ। ২০১৭ সালে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে হিসাব কষার পালাও শেষ হচ্ছে। এ বছর বাংলাদেশ কয়েকটি সিরিজ ও টুর্নামেন্ট খেলেছিল। তবে শেষ দিকের কিছু ব্যর্থতা বাদ দিলে অর্জনটাই বেশি মাশরাফি-সাকিবদের। তবে সবমিলিয়ে ভাল-মন্দের মধ্যেই গেছে বছর। নিউজিল্যান্ডে টেস্ট খেলা দিয়ে বছর শুরু। হার হয়েছে সফরজুড়ে। শেষ হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর দিয়ে। সেখানেও একই অবস্থা। মন্দ বলতে এ দুই সিরিজে বাংলাদেশের পারফর্ম। আর বছরের বাকি সময়টুকুতে সাফল্যেই কেটেছে বাংলাদেশের। সেই সাফল্যগুলোই ভাল দিক ফুটিয়ে তুলছে। টেস্ট সাফল্যের কথাই ধরা যাক, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ নয়টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। তার মধ্যে দুটি টেস্ট জিতেছে, হেরেছে সাতটি ম্যাচ। অঙ্কের হিসাবে এই সাফল্য কমই। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য দুটি টেস্ট জয় ছিল অনেক বড় সাফল্য। বিশেষ করে গত মার্চে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐতিহাসিক শততম টেস্টে চার উইকেটে জয় ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য বিশাল অর্জন। এর পর আগস্টে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয় আরেকটি ইতিহাস রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটে। দুর্দান্ত প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়াকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২০ রানে হারিয়ে ছিল মুশফিক বাহিনী, যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ছিল দারুণ একটি মাইলফলক। টেস্টে বাংলাদেশের এ দুটি সাফল্য অন্য সব ব্যর্থতাকে একেবারেই ঢেকে দিয়েছে। তবে সাফল্য না হলেও টেস্টে বাংলাদেশের আরেকটি অর্জন ছিল। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ পর কোন সিরিজ খেলতে ভারত সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে ভারতে হায়দরাবাদে একমাত্র টেস্ট ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ ২০৮ রানে হেরেছিল। ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের ঝুলিতে ছিল দারুণ কিছু অর্জন। বছরের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ শুরু করেছিল জয় দিয়ে। এ বছর মার্চে ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কাকে ৯০ রানে হারিয়েছিল মাশরাফিরা। সে ধারাবাহিকতা বছরজুড়ে না থাকলেও ১৪টি ওয়ানডে খেলে চারটিতে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। অবশ্য এর মধ্যে তিনটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল। তবে এ বছর ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল, কয়েকটি পরাশক্তি দলকে টপকে মে-জুনে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে ওঠে লাল-সবুজের দল। এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা সাফল্য বললে ভুল বলা হবে না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডকে পেছনে ফেলে সেমিফাইনালে খেলে বাংলাদেশ। তার আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের দুটি ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয় পেয়েছিল আট উইকেটে এবং সিরিজের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ উইকেটে জেতে মাশরাফির দল। এই সফল্য চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বেশ কাজে আসে। তবে বছরের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে একেবারেই নাকাল ছিল বাংলাদেশ দল। তিনটি ম্যাচ খেলে তিনটিতেই হেরেছিল, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুনতে হয় ক্রিকেটারদের। টি২০তে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সাতটি ম্যাচ খেলে। এর মধ্যে ছয়টিতেই হেরেছিল, আর জয় পায় মাত্র একটি ম্যাচে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত এপ্রিলে সে ম্যাচে ছয় উইকেটে জিতেছিল মাশরাফির দল। এই সিরিজের পরই টি২০ থেকে অবসরে যান অধিনায়ক মাশরাফি। মাশরাফির অবসর এ বছর বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্যতম আলোচিত ঘটনা। এর পর বছরের শেষদিকে দলের কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করেন চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। তিনি এখন শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের কোচ। বছরের শেষ দিকে এসে এই ডিসেম্বরে অন্যতম আলোচিত ঘটনা ছিল মুশফিকুর রহীমকে টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তার জায়গায় আবার অধিনায়ক হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়েছে সাকিব আল হাসানকে। আর তামিম ইকবালকে সরিয়ে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। বছরজুড়ে আরও সাফল্য হয়ত মিলত। কিন্তু দুর্ভাগ্য, দেশের মাটিতে এ বছর একটি ওয়ানডেও খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। তা যদি খেলত, তাহলে হয়ত আরও সাফল্য যুক্ত হতো। তবে শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হারানো এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলাই বাংলাদেশের পালে বছরটিতে সাফল্যের হাওয়া দিচ্ছে। বাকি ব্যর্থতাগুলো মন্দ আভাস দিলেও, মন্দ আর ভালর মধ্যেই শেষ হচ্ছে দেশের ক্রিকেটের বছর।
×