ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুরালি, মাহেলা ও সাঙ্গাকারাকে ডেকেছেন খেলোয়াড়দের সহায়তায়, নতুন মনোবিদ নিয়োগ, অনুশীলন চলাকালীন ক্রিকেটারদের সঙ্গীত শ্রবণ নিষিদ্ধ, দল নির্বাচনে নিজের মতামতের প্রয়োগ চান হাতুরাসিংহে

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হাতুরাসিংহের কৌশল

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হাতুরাসিংহের কৌশল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেটের ধারাটাই পাল্টে গিয়েছিল। স্পিননির্ভর একটি দল ক্রমেই পেস নির্ভরতা খুঁজে পাচ্ছিল। পরিবর্তন এসেছিল কৌশলগত এবং দলের সমন্বয়েও। কিন্তু সবকিছুতেই সফল হয়েছেন কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহে। তার অধীনে বাংলাদেশ ক্রিকেট সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছিল। বাংলাদেশ দলের প্রতিটি ইঞ্চি তার জানা। এবার সেই জানাটাকেই কাজে লাগাবেন তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সেজন্য শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের প্রধান কোচ হওয়ার পর ভিন্ন ধারা তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। শুরুতেই তিনি দলের অনুশীলনে যে কোনো ধরনের সঙ্গীত শ্রবণ, বাজানো নিষিদ্ধ করেছেন। আর খেলোয়াড়দের মানসিক উন্নতির স্বার্থে নিয়োগ করেছেন অস্ট্রেলিয়ান মনোবিদ স্যান্ডি গর্ডন বা ফিল জনসিকে। আর তিন কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরন, কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনেকে ডেকেছেন ক্যাম্পে এসে বর্তমান ক্রিকেটারদের পরামর্শ দিতে। এছাড়া শ্রীলঙ্কার ক্রীড়া আইনে দল নির্বাচনে কোচের মতামত দেয়ার নিয়ম না থাকলেও সেটা বদলে নিজের নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছেন হাতুরাসিংহে। বেশ আটঘাট বেঁধেই নেমেছেন হাতুরাসিংহে। বাংলাদেশের কোচ হিসেবে পদত্যাগের পর সেই দলটির বিরুদ্ধেই তার মিশন শুরু শ্রীলঙ্কার হয়ে। আগামী জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ, দুই টেস্ট ও দুই টি২০ ম্যাচের সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসবে শ্রীলঙ্কা দল। এটিই হবে হাতুরাসিংহের প্রথম দায়িত্ব। তাই যেভাবেই হোক নিজের গড়ে তোলা বাংলাদেশকেই শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে এখন তাদের বিরুদ্ধেই সফল হওয়ার ফর্মুলা তৈরিতে ব্যস্ত এ লঙ্কান কোচ। বাংলাদেশের দায়িত্বে থাকাকালীন সর্বময় ক্ষমতার পাশাপাশি সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন হাতুরাসিংহে। দল গঠনেও ছিল তার বড় প্রভাব। এখন শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটেও (এসএলসি) তিনি একই অবস্থান আদায়ের চেষ্টায় আছেন। সেদিক থেকে সফলতাও পাবেন বলেই মনে হচ্ছে। কারণ তিনি অনুশীলন চলার সময় ক্রিকেটারদের সব ধরনের বাদ্য-বাজনা এবং সঙ্গীত থেকে দূরে থাকার উদ্যোগ নিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে খুবই বাজে সময় কাটছে লঙ্কানদের। কোন ফরমেটেই ভাল কোন নৈপুণ্য দেখাতে পারেনি চলতি বছর। কিন্তু সেই অবস্থার উন্নতি ঘটানোর দৃঢ় শপথ নিয়েই এগিয়ে চলেছেন হাতুরাসিংহে। বৃহস্পতিবার থেকে আসন্ন বাংলাদেশ সফরের অনুশীলন শুরু করেছেন তিনি নতুন শিষ্যদের নিয়ে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা যদি সঙ্গীতের প্রতি খুব আগ্রহী হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে হবে।’ দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী দয়াসিরি জয়াসেকেরার বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে দল গঠনে। খাদ্যাভ্যাসের কারণে ক্রিকেটাররা মেদবহুল হয়ে পড়েছেন এমন অভিযোগ করে তিনি খাদ্য তালিকাতেই পরিবর্তন আনেন। আর সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার টি২০ দলকেও তিনি আটকে দেন ভারত যাওয়ার ক্ষেত্রে কারণ নির্বাচিত দল পছন্দসই হয়নি তার। দলের প্রধান কোচ নিজ পছন্দে কোন খেলোয়াড় নিতে পারেন না। কিন্তু হাতুরাসিংহে এর পরিবর্তন চান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার পুরো নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন এবং দায়িত্ব পাওয়া উচিত একাদশ গঠনের ক্ষেত্রে। দেশের ক্রীড়া আইন অনুসারে কোচের দল নির্বাচনে কোন সংশ্লিষ্টতা থাকার নিয়ম নেই। কিন্তু সেটা বদলাতে হবে। ইতোমধ্যেই তারা এ বিষয়ে আমার সঙ্গে সম্মত হয়েছেন।’ এছাড়া নিউ সাউথ ওয়েলস ও বাংলাদেশের হয়ে কাজ করা মনোবিদ জনসিকেও আনতে চাইছেন তিনি। এ বিষয়ে হাতুরাসিংহে বলেন, ‘আমি যখনই প্রয়োজন পড়বে তাকে আমার দলের সঙ্গে কাজে পেতে চাই।’ এটাকে লঙ্কান ক্রিকেটে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হিসেবেই দেখছেন হাতুরাসিংহে। বাংলাদেশের দায়িত্ব নেয়ার পরও তিনি মনোবিদ এনেছিলেন ক্রিকেটারদের জন্য। নতুন মনোবিদ চলতি সপ্তাহেই শ্রীলঙ্কা এসে পৌঁছুবেন অস্ট্রেলিয়া থেকে। তবে তিনি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ সফর করবেন না। শ্রীলঙ্কায় অনুশীলনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই অস্ট্রেলিয়ান ক্রীড়া মনোবিদ কাজ করবেন ক্রিকেটারদের সঙ্গে। একই কাজের জন্য এর আগে স্যান্ডি গর্ডনের শরণাপন্ন হয়েছিল এসএলসি। সেক্ষেত্রে জনসি বা গর্ডনের মধ্যে যে কোন একজন আসবেন এবার। মনোবিদই শুধু নয় সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটারদেরও সহায়তা চেয়েছেন হাতুরাসিংহে। তরুণদের উজ্জীবিত করতে এবং পরামর্শ দিয়ে সহায়তা দিতে তিনি মুরালিধরন, জয়াবর্ধনে ও সাঙ্গাকারাকে চেয়েছেন দলের সঙ্গে। এ বিষয়ে হাতুরাসিংহে বলেন, ‘আমি সাঙ্গাকারাকে পাব। তাকে আমাদের সহায়তা করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি নিজের বিশিষ্ট গুণাগুণগুলো ভাগাভাগি করতে। আমাকে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে সেই অবস্থান থেকে যদি আমি তার সহায়তা না নেই তাহলে সুযোগটা পুরোপুরি নষ্ট করব। শুধু তিনিই নয়, আমি জয়াবর্ধনে ও মুরালিধরনের মতো খেলোয়াড়দেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আশা করছি তারাও দলের জন্য কাজ করবেন। যখনই তারা সময় বের করতে পারবেন তখনই আমরা এই সম্পদগুলো কাজে লাগাব।’
×