ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৮ হাজার হেক্টর নির্ধারণ ॥ তা নিয়েও সংশয়

দ্রুত কমছে তিস্তার পানি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

দ্রুত কমছে তিস্তার পানি

তাহমিন হক ববী, তিস্তা ব্যারেজ (ডালিয়া) থেকে ॥ বাংলাদেশের ডালিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ অব্যাহতভাবে শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। জানুয়ারি মাসে সেচনির্ভর বোরো আবাদে কমান্ড এলাকার কৃষকরা তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের চাহিদা মোতাবেক পানি পাবে কিনা এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প এলাকা ঘুরে কৃষক ও ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে। শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, উজানের প্রবাহ না থাকায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি প্রতিদিন কমছে। এক সপ্তাহ আগে ওই পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ৪ হাজার কিউসেক। এখন সেটি এসে দাঁড়িয়েছে দেড় হাজার কিউসেকে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ডালিয়া পয়েন্টের তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় নদীর উজানের প্রবাহ গড় প্রবাহের (১৯৭৩-১৯৮৫ সাল পর্যন্ত) তুলনায় গতবারের মতো এবারও ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। সূত্রমতে ২০০১ হতে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিস্তা সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়েছিল। ওই সময় এই সেচের পানি পেত নীলফামারী, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, সৈয়দপুর, রংপুর জেলার তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া ও দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর, খানসামা, চিরিরবন্দর পর্যন্ত। ২০১১ সালের পর হতে শুষ্ক মৌসুমে উজানের পানি প্রবাহ এতটাই নেমে আসে যে, সে সময় ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি। সূত্র বলছে, উজান হতে নদীর পানির প্রাপ্ততা না পাওয়া যাওয়ায় ২০১৫ সাল হতে বোরো মৌসুমে আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এবং সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর পর্যন্ত সেচ দেয়া সম্ভব হয়েছিল ২০১৬ সালে। ২০১৭ সালে বোরো মৌসুমে উজানের পানি কিছুটা বেশি থাকায় সেচপ্রদান করা হয় ২০ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে। চলতি বোরো মৌসুমে (২০১৮) আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচের অক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। সূত্রমতে, তিস্তা চুক্তি সই না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সেচ প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত ও নদী রক্ষার লক্ষ্যে ন্যায়সঙ্গত পরিমাণ পানি ছাড়তে দিল্লীকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে ঢাকা।ডিমলা উপজেলার নাউতরা ইউনিয়নের সাতজান গ্রামে তিস্তা সেচপ্রকল্পের প্রধান খালের পাশের কৃষক সাইদুর রহমান অভিযোগ করেন, উজানের প্রবাহ না থাকায় তিস্তা সেচ প্রকল্প আগের মতো পানি দিতে পারে না। ফলে নিজস্ব সেচযন্ত্র দিয়ে এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করতে খরচ হয় ৫ হাজার টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের আওতায় নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২টি উপজেলার এক লাখ ১১ হাজার ৪০৬ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের জুনে এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের নির্মাণকাজ ১৯৭৯ সালে এবং ক্যানেল সিস্টেমের নির্মাণকাজ ১৯৮৪-৮৫ সালে শুরু হয়। কিন্তু শুরুর দিকে ৭৯ হাজার হেক্টরে সেচ দেয়া গেলেও পানির অভাবে প্রতি বছর সেচযোগ্য জমির পরিমাণ কমতে থাকে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সাল পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে প্রথম তিন মাসে গড়ে সর্বোচ্চ তিন হাজার থেকে সর্বনিম্ন ৯০০ কিউসেক, ২০১৩ সালের প্রথম তিন মাসে গড়ে সর্বোচ্চ তিন হাজার থেকে সর্বনিম্ন দেড় হাজার, ২০১৪ সালের প্রথম তিন মাসে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৭০০ থেকে সর্বনিম্ন ৫৫০ কিউসেক, ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ এক হাজার ২শ’ থেকে সর্বনিম্ন ৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া গেছে। ২০১৬ সালেও একই অবস্থা ছিল। এবার ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে শুক্রবার পর্যন্ত পানি প্রবাহ এক হাজার ৫০০ কিউসেক ছিল। তবে প্রতিদিন উজানের পানি কমছে। তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান বোরো মৌসুমের জন্য জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে কৃষকদের সেচ প্রদান কার্যক্রম শুরুর সম্ভাব্য দিন ধার্য করে এবারও আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সেচ দেয়ার স্থানগুলো ধরা হয়েছে নীলফামারী সদরে আট শ’ হেক্টর, ডিমলা উপজেলার ৫ হাজার হেক্টর, জলঢাকা উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর, কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ২০০ হেক্টর। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আট হাজার হেক্টরে সেচ প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে উজান থেকে তিস্তায় পানি প্রাপ্তিতার ওপর নির্ভর করবে আমরা কত পরিমাণ জমিতে বোরো আবাদে সেচ প্রদান করতে পারব। তবে গত বোরো মৌসুমে উজানের পানি বেশি পাওয়া যাওয়ায় ২০ হাজার ১২০ হেক্টরে সেচ প্রদান সম্ভব হয়েছিল।
×