ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রড বাঁধা শেষ,৭ জানুয়ারি ঢালাই

পদ্মা সেতুর ৪২ নম্বর খুঁটি পরে উঠছে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

পদ্মা সেতুর ৪২ নম্বর খুঁটি পরে উঠছে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ খর স্রোতা পদ্মায় একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে পদ্মা সেতু। জাজিরা ও মাওয়া দু’পারেই চলছে এখন পাইল স্থাপনের কর্মযজ্ঞ। থেমে নেই মাঝনদীতেও। পদ্মা সেতুর সর্বশেষ পিয়ার অর্থাৎ ৪২ নম্বর খুঁটি উপরে উঠতে শুরু করেছে। খুঁটির রড বাঁধা হয়েছে, ঢালাই ৭ জানুয়ারি। এদিকে মাওয়ার প্রান্তেও খুঁটি ওঠানোর কাজ চলছে হরদম। এ পর্যন্ত ৮১ পাইল সম্পূর্ণভাবে স্থাপন হয়েছে। ১৭ পাইল আংশিক হয়েছে। সব মিলিয়ে মূল সেতুর অগ্রগতি এখন দ্রুত এগুচ্ছে। পৌষের ঘন কুয়াশায় ফেরি বন্ধ থাকছে প্রতিদিনই। শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত এগারো ঘণ্টা ফেরি বন্ধ ছিল। কিন্তু কুয়াশার মধ্যেও পদ্মা সেতুর কাজ থেমে নেই। দিনরাত অবিরাম চলছে সেতু বুননের কাজ। পদ্মার মাটির বৈচিত্র্যতার কারণে নানা রকম চ্যালেঞ্জ আসছে, তাই অনেক কাজের সিডিউল কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু কর্মযজ্ঞ চলছেই। মাওয়ার ৩ নম্বর পিয়ারে পাইলের ওপর বেজ তৈরির কাজও এগিয়ে চলছে। সঙ্গে মাওয়ার ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটিতেও পাইলের কাজ শেষ। এখন খুঁটি উপরে চলমান রয়েছে। ২ নম্বর পিয়ারের কাজও চলছে। এদিকে পদ্মা সেতুর বাকি ৪ খুঁটির নতুন ডিজাইন অনুমোদন এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্ট) কাজও এগিয়ে চলেছে। সেতুর নদী শাসনের কাজও এগিয়ে চলেছে। কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ২য় স্প্যান পদ্মায় নামতে বিলম্ব হচ্ছে। স্প্যানের রং এবং খুঁটির বিয়ারিং স্থাপন নিয়ে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টির কারণে বিলম্ব হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ১ম স্প্যানে রং যথাযথ হলেও ২য় স্প্যানে এ নিয়ে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ সফলতায় রূপ নিচ্ছে। এখন ৩টি স্প্যানে চলছে রঙের কাজ। ২য় স্প্যান রং সম্পন্ন হলে এবং বিয়ারিং স্থাপন সম্পন্ন হলে এটি ভাসমান ক্রেনে করে ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিয়ারে নেয়া হবে। প্রায় ৩ হাজার টন ওজনের ‘৭বি’ নম্বর স্প্যানটি ৩৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে পদ্মা নদী পাড়ি দেবে। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ২য় স্প্যানটি স্থাপন হতে পারে মধ্য জানুয়ারি। সেই অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথমদিকে স্প্যানটি নেয়া হবে। তবে এখন ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ২য় স্প্যানটি কবে যাচ্ছে তা নিশ্চিত করা যায়নি। এর আগে সেতুর এই স্প্যান যেখানে বসছে এই খুঁটির উপরিভাগের ‘গ্রাউটিং’ কাজও করা হচ্ছে। নতুন হ্যামারটি কাজ শুরু করায় এখন মূল সেতুর কাজে বিশেষ গতি পেয়েছে। এখন তিনটি হ্যামারই পাইল স্থাপন করে চলেছে। তিনি জানান, মাওয়ায় খুঁটি দৃশ্যমান হবে শীঘ্রই । একই সঙ্গে একযোগে পদ্মার খুঁটি উঠতে থাকবে এবং স্প্যান বসতে থাকবে। তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যে বেশ ক’টি স্প্যান দৃশ্যমান হতে চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। হ্যামারের ক্ষমতার ১০ শতাংশ লোড (২৪০ কিলোজুল) প্রয়োগ করে প্রথম হ্যামারিং শুরু করা হয়। পাইল মাটির ভেতরে প্রবেশ শুরু করলে আরও বেশি লোডের প্রয়োজন হয়। তখন ধীরে ধীরে হ্যামারের লোড বাড়িয়ে দিতে থাকেন সংশ্লিষ্টরা। এভাবে হ্যামারের লোড ২০, ৩০ বৃদ্ধি করতে করতে ১০০ শতাংশের কাছাকাছি বাড়িয়ে পাইল ড্রাইভ করা হয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেজর চায়না ব্রিজের হ্যামার বিশেষজ্ঞরা পদ্মার তলদেশে পাইল স্থাপনের প্রক্রিয়া এভাবেই বর্ণনা করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়, স্ট্যাক ইয়ার্ড থেকে পাইল নিয়ে যাওয়ার পর প্রথমেই তার ভেতর ও বাইরের অংশ পরিষ্কার করে তা এক হাজার টন ক্রেনের সাহায্যে ওঠানো হয় গাইডিং ফ্রেমে। এরপর হাইড্রোলিক জ্যাকের সাহায্যে তা ১/৬ অনুপাতে কোণ করে স্ট্যাবল করার পর ক্রেনের সাহায্যে ২৪০০ কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন হাইড্রোলিক হ্যামার পাইলের উপর স্থাপন করা হয়। চায়না মেজর ব্রিজের জার্মানির হ্যামার বিশেষজ্ঞ সংশ্লিষ্টরা জানান, সচল থাকা ২৪০ টন শক্তিসম্পন্ন ২৪০০এস মডেলের মেনক হাইড্রোলিক হ্যামার দিয়ে পাইলিং করা হচ্ছে। এ কাজে প্রতিটি পাইলের ১০৩ মিটার গভীরতার লক্ষ্য নিয়ে মিনিটে ৩৭বার করে মোট ২৭০ বার চাপ দিয়ে একনাগাড়ে হ্যামারিং করা হচ্ছে। কাজগুলো সম্পূর্ণ মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে কম্পিউটার মনিটরে হ্যামরিংয়ের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ সেতুর পাইল স্থাপনের লক্ষ্যে ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের ১৭ নবেম্বর পর্যন্ত জার্মানির তৈরি ৫টি হাইড্রোলিক হ্যামার প্রকল্প এলাকায় আনা হয়েছে। সর্বশেষ প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছেছে ৩৫০০ কিলোজুল ক্ষমতার ৫ম হ্যামারটি।
×