ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শুরু হবে এলএনজি আমদানি

উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমে জনপদে আগামী বছর গ্যাস সরবরাহ

প্রকাশিত: ০৪:৫৫, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

উত্তর-দক্ষিণ ও পশ্চিমে জনপদে আগামী বছর গ্যাস সরবরাহ

রশিদ মামুন ॥ আগামী বছর এলএনজি আমদানীর শুরুতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলের সব জায়গাতে গ্যাস সরবরাহ করতে চায় সরকার। দেশের উত্তরাঞ্চলের মধ্যে রাজশাহীতে গ্যাস থাকলেও রংপুরে সঞ্চালন লাইন পৌঁছায়নি। একই অবস্থা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে, এখানে খুলনায় গ্যাস পাইপ লাইন পৌঁছালেও বরিশালে এখন সঞ্চালন লাইন যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন শিল্পায়ন এবং বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাস ব্যবহারের জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগ বলছে, আগামী বছর এপ্রিলে থেকে দেশে এলএনজি অমদানী শুরু হবে। প্রথম ধাপে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আসবে। পরবর্তী বছর এলএনজি আমদানী হবে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। পর্যায়ক্রমে এলএনজি আমদানীর পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে। সরকার মহেশখালি ছাড়াও পায়রা বন্দর এলাকায় পৃথক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সম্প্রতি পায়রা বন্দর এলাকায় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য আগ্রহপত্র চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছে পেট্রোবাংলা। দুই বছরের মধ্যে পায়রাতে স্থায়ী এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় সরকার। জ্বালানি বিভাগ সম্প্রতি এক বৈঠকে এই অঞ্চলের আগামী ১০ বছরের গ্যাসের চাহিদা নিরূপণ করেছে। পায়রা এলাকায় এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে সেই গ্যাস সাধারণত অন্য এলাকায় সরবরাহ করা কঠিন হবে। এতে করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলকে প্রাধান্য দিতে হবে। জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে বলা হয়, খুলনায় এখন প্রতিদিনের চাহিদা ৩৬৪ মিলিয়ন ঘনফুটের স্থলে ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামীতে এই অঞ্চলে যে অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ২০২৫ সালে চাহিদা দাঁড়াবে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুটে আর ২০৩০ এ চাহিদা আরও বেড়ে দাঁড়াবে ৫৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। খুলনায় গ্যাস পাওয়া না গেলেও ভোলাতে গ্যাস রয়েছে। সেখানে নতুন একটি গ্যাসকূপে অনুসন্ধান করছে বাপেক্স। এই ক্ষেত্রটিতে এক টিসিএফ মজুদ পাওয়া গেলে বরিশালে গ্যাস সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সম্প্রতি জানানো হয়েছে। খুলনা এলাকায় এর মধ্যে একটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। যে কেন্দ্রটিতে পেট্রোবাংলা গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েও রাখতে পারেনি। দ্বৈত জ্বালানির বিদ্যুত কেন্দ্রটি এখন ডিজেলে বিদ্যুত উৎপাদন করছে। এর বাইরে আরও একটি ৭৫০ মেগাওয়াটের এলএনজি চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও পায়রাতে দেশের সব থেকে বড় তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের এলএনজি চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে এই এলাকায় এলএনজি আনতে হবে। বিদ্যুত উৎপাদনের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সঙ্গে এ এলাকায় গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা যোগ করলে আরও দ্রুত গ্যাস সরবরাহ সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। এখন দেশের উত্তরাঞ্চলে ৭২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে অথচ এই এলাকায় গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। জ্বালানি বিভাগের ওই বৈঠকে জানানো হয়, পর্যায়ক্রমে এখানের গ্যাসের চাহিদাও বাড়বে। ফলে দুই এলাকায় গ্যাস সরবরাহে আগামী ১০ বছরের যে পরিকল্পনা তাতে বলা হচ্ছে ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহের একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এই টার্মিনালটি দিয়েই গ্যাসের চাহিদা পূরণ করা হবে। জানা গেছে বগুড়া থেকে গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত গ্যাস পাইপ লাইন থাকলেও রংপুরে গ্যাসের পাইপ লাইন সম্প্রসারণ হয়নি। রংপুরে গ্যাস সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতে হলে আরও অন্তত ৮০ কিলোমিটার গ্যাস পাইপলাইন বসাতে হবে। রংপুরে দীর্ঘদিন থেকেই গ্যাসের জন্য সাধারণ মানুষ আন্দোলন করছে। দেশে গ্যাসের স্বল্পতার কারণে সেখানে প্রতিশ্রুতি দিয়েও গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তবে এলএনজি আসলে এসব এলাকার শিল্প গ্যাস পাবে। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, একই সঙ্গে দেশের সকল এলাকায় সুসম উন্নয়নের জন্য দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলে গ্যাসের সরবরাহ করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করার জন্য পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ও খুলনা এবং বরিশালে গ্যাস সরবরাহ করার জন্য সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি নামে পৃথক দুটি কোম্পানি রয়েছে।
×