ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বস্তি আর অস্বস্তির সাতকাহনম॥ উড়াল সড়ক

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

স্বস্তি আর অস্বস্তির সাতকাহনম॥ উড়াল সড়ক

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাজধানীর যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার বা উড়াল সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। বলা হয় উড়াল সড়ক নির্মাণ যানজট নিরসনে আশার আলো। ২০০৫ সাল থেকে নির্মাণযজ্ঞ শুরু হয়, যা এখনও চলছে। এখন পর্যন্ত নয়টি ফ্লাইওভার ও ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে উড়াল সড়ক এলাকায় যানজটের ভোগান্তি কমেছে। স্বস্তি মিলেছে নগরবাসীর। তবে সার্বিকভাবে ঢাকার যানজট নিরসন সম্ভব হয়নি। এমন বাস্তবতায় যানজট নিরসনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়াও একাধিক উড়াল সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া একের পর এক উড়াল সড়ক নির্মাণ করায় সার্বিকভাবে যানজট সমস্যার সমাধান হয়নি। তবে এলাকাভিত্তিক সমস্যার সমাধান হয়েছে; যা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে নগরীরবাসীকে। তবে অতিমাত্রায় গাড়ি রেজিস্ট্রেশন, রাস্তার স্বল্পতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ যানজটের পেছনে রয়েছে নানাবিধ কারণ। দুই কোটির বেশি মানুষের এই মহানগরে যানজট থেকে রেহাই পেতে এমন বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে মেট্রোরেল। এটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ২০১১ সালের এপ্রিলে ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল সেতু বিভাগের অধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়ক প্রকল্পের। এই প্রকল্পের কাওলা থেকে কুড়িল অংশে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। এ যাবৎ প্রকল্পের অগ্রগতি ১০ শতাংশ। প্রকল্পের অধীনে বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালি পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হবে। ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু ॥ রাজধানীতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ২০০৫ সালে প্রথম উড়াল সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল মহাখালী লেভেল ক্রসিংয়ের উপর দিয়ে। এতে ব্যয় হয়েছিল ১১৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ফার্মগেট-বিজয় সরণি থেকে শুরু করে মহাখালী রেলক্রসিং এলাকার যানজট নিরসনে এই ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়। মূলত জাহাঙ্গীর গেট থেকে আমতলী পর্যন্ত যাতায়াতে বেশিরভাগ সময় কোন সমস্যা পোহাতে হয় না। বাড়তি গাড়ির চাপ থাকায় কিছু কিছু সময় ফ্লাইওভারেও যানজট থাকে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। কারণ, মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘিরে যানজটের সমাধান করা হয়নি। একটি লুপ মহাখালী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত নির্মাণ করা হলে এই এলাকার যানজট কমে আসত। উদ্যোগ নেয়া হলে এই নির্মাণ কাজটি এখনও সম্ভব বলে মনে করেন তারা। বিজয় সরণি ওভারপাস ॥ বিজয় সরণি হতে তেজগাঁও শিল্প এলাকা পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণ ও ফ্লাইওভার প্রকল্পের কাজ রাজউক হাতে নেয় ২০০৭ সালের ২৮ আগস্ট। একনেকে অনুমোদনের পর একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। সমাপ্ত হয় ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল। ১১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ফার্মগেট, মীরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানম-িসহ আশপাশের এলাকা থেকে তেজগাঁওমুখী যানবাহনের জন্য এই ওভারপাস নির্মাণ করা হয়। দিন দিন গাড়ি বেশি থাকার কারণে এখন দিন-রাতের বেশিরভাগ সময় ওভারপাসে যানজট লেগেই থাকে। খিলগাঁওয়ে সিগন্যাল যন্ত্রণা ॥ খিলগাঁও এলাকার যানজট নিরসনে খিলগাঁও উড়াল সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মূলত বাসাবো মোড় থেকে খিলগাঁও ও শাজাহানপুর এলাকায় এই উড়াল সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করা যায়। এরমধ্যে একটি ইউলুপও নির্মাণ হয়েছে গত বছর। সরেজমিন দেখা গেছে, এই উড়াল সড়কের ফলে খিলগাঁও এলাকার ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের দুর্ভোগ কমেছে। কমেছে মালিবাগ রেলগেট এলাকার যানজটও। তবে শাজাহানপুর মোড়কে কেন্দ্র করে দীর্ঘ সিগন্যালের যন্ত্রণা দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে। জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু ॥ রাজধানীর মাটিকাটা থেকে জিয়া কলোনি পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু। ২০১৩ সালের ২৭ মার্চ এটি চালু করা হয়েছে। এটি চালু হওয়ায় কালশী সড়ক ধরে এই উড়াল সেতুর ওপর দিয়ে দ্রুত চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে। প্রায় ২০ মিনিটেই যাতায়াত করা যাচ্ছে মিরপুর থেকে বিমানবন্দর। ১৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে সওজ অধিদফতরের অধীনে। এছাড়া বনানী লেভেল ক্রসিংয়ে ওভারপাসসহ পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ৩৬০ কোটি টাকা। এই ওভারপাস নির্মাণের ফলে বনানী থেকে হোটেল র‌্যাডিসন পর্যন্ত যেতে সময় লাগে সর্বোচ্চ দুই মিনিট। আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই সিগন্যালে আটকে থাকতে হতো। যদিও গাড়ি বাড়ায় এখন দীর্ঘ সিগন্যাল থাকে ওভারপাসেও। জিল্লুর রহমান উড়াল সেতুর সঙ্গে সংযোগকারী কালশী নতুন সড়ক দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ। আগে মিরপুরবাসীকে বিমানবন্দর, উত্তরা বা আশপাশের এলাকায় যাতায়াত করতে হতো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে দিয়ে। এতে বাড়তি ১১ কিলোমিটার ঘুরতে হতো। সময় বেশি লাগত, গাড়িভাড়া ও জ্বালানি লাগত বেশি। এখন মিরপুর হয়ে আব্দুল্লাপুর, উত্তরা, বিমানবন্দর সড়কের বিভিন্নস্থানে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে। অর্থাৎ উড়াল সড়কটি সত্যিই মিরপুরসহ গুলশান, আবদুল্লাপুরের মানুষের যাতায়াতে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছে। স্বস্তি এনেছে মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়ক ॥ মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-মহাখালী-কাকরাইল যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন তাদের মধ্যে স্বস্তি এনেছে মগবাজার-মৌচাক উড়াল সড়কটি। প্রায় নয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্য উড়াল সড়কটির কাজ চলতি বছর শেষ হয়েছে। ফলে রাজারবাগ-আবুল হোটেল, সাতরাস্তা-শান্তিনগর-ইস্কাটন-বাংলামোটর-সোনারগাঁও হোটেল, হলিফ্যামিলি হাসপাতালসহ আশপাশে যানজটের মাত্রা কমেছে। তবে উড়াল সড়কের প্রায় ৯ কিলোমিটার অংশে যানজট সহনীয় মাত্রায় এলেও আশপাশের কিছু পয়েন্টে সমস্যা আগের চেয়ে বেড়েছে অনেক বেশি। কুড়িল ফ্লাইওভার ॥ ঢাকার কুড়িল মোড়, বিমানবন্দর সড়ক ও প্রগতি সরণির সংযোগস্থলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নির্মাণ করেছে কুড়িল উড়াল সেতু। ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট চালু হয়েছে এটি। ঢাকার সঙ্গে পূর্বাচল নতুন শহরের সংযোগ স্থাপন, বিমানবন্দর সড়ক ও প্রগতি সরণি সংযোগস্থলে যানজট কমানো, নগরীর উত্তর-পশ্চিম বরাবর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। হানিফ ফ্লাইওভার ॥ যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান অংশে মেয়র হানিফ উড়াল সেতু এলাকার যানজট পরিস্থিতি কিছুটা কমিয়েছে। এটি নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনে। প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। উড়াল সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ কিলোমিটার। উড়াল সড়কটি নির্মাণের ফলে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ-নারায়ণগঞ্জ রুট-ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ আশপাশ এলাকায় যানজট কমেছে। বাংলাদেশ সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত অংশে নির্মাণ করা হবে দ্বিতীয় ঢাকা উড়াল সড়ক। এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। রাজধানীর শান্তিনগর থেকে মাওয়া পর্যন্ত যে নতুন উড়াল সেতু নির্মাণ করা হবে সেটি হবে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট ॥ যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। এই তথ্য বিশ্বব্যাংকের। আর যানজটের কারণে বছরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, অঙ্কের হিসাবে তা ৩০ হাজার কোটি টাকা। গত কয়েক বছরের বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে আর্থিক ক্ষতির এ আনুমানিক পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় আরও বলা হয়, এই শহরে এখন ঘণ্টায় গড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার গতিতে চলছে যানবাহন। এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর হেঁটেই গাড়ির আগে যেতে পারবে মানুষ। তীব্র যানজটের সময় গাড়ির আগে হেঁটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নগরবাসীর অপরিচিত নয়। যানজটের পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে খারাপ হচ্ছে, তাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও যে বাড়বে, তা বলা বাহুল্য। যানবাহনের সংখ্যা যদি একই হারে বাড়তে থাকে এবং তা নিরসনের কোন উদ্যোগ না নেয়া হয়, তাহলে ২০২৫ সালে এই শহরে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়ে কম। মানুষের হাঁটার গড় গতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার বলে মনে করা হয়। ২০৩৫ সাল নাগাদ ঢাকার উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে চলতি বছরের জুলাইয়ে রাজধানীর একটি হোটেলে দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক। সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্য থেকে এই চিত্র উঠে এসেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ১০-১২ বছর আগে ঢাকার কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সে পরিকল্পনা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। সেটি গত বছর সংশোধন করা হয়েছে। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির শহরে যদি সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা ধীর গতিতে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে সমস্যা তীব্রতর হবে, এটাই স্বাভাবিক। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রাজধানীতে যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি (প্রাইভেটকার)। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চলতি বছরের মে পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে বাস ও মিনিবাসের চেয়ে সাতগুণ বেশি ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হক বলেন, দীর্ঘদিন বলার পরও গণপরিবহন ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করায় এখন পুরো ঢাকা স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকার পরিকল্পনা করছে, কিন্তু কাজ সেভাবে হচ্ছে না; এটি দুঃখজনক। তিনি বলেন, ঢাকা ও দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে গণপরিবহনভিত্তিক দ্রুতগতির পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এত আয়োজনেও সঙ্কট তিমিরেই ॥ ঢাকার যানজটের অন্যতম কারণ সড়কের ওপর দিয়ে পথচারী পারাপার। এটি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় বিভিন্ন সময় নির্মিত হয়েছে ৬৬টি ফুট ওভারব্রিজ, যার বেশিরভাগই অব্যবহৃত। নগরীতে নির্মিত তিনটি আন্ডারপাসের মধ্যে দুটিই কোন কাজে আসছে না। নগরীর যাত্রীর চাপ কমাতে বেশ ঘটা করে চালু হয়েছিল ডেমু ট্রেন সার্ভিস। নানা কারণে সেটাও এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই অবস্থা ওয়াটার বাস সেবারও। রাজধানীর যানজট কমানোর সবচেয়ে বড় উদ্যোগ ফ্লাইওভার। নয় ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। সমাধান মিলছে না তাতেও। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে ফ্লাইওভারের দু’দিকেই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট হচ্ছে ফ্লাইওভারের ওপরও। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর যানজট নিরসনের বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবসম্মত নয়, প্রকল্পসর্বস্ব। এ কারণেই যানজট নিরসনে গৃহীত এসব উদ্যোগ থেকে সফলতা আসছে না। যানজট নিরসনে ফ্লাইওভারে কোন সমাধান দেখছেন না পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামসুল হক। তিনি বলেন, আমরা একের পর এক ফ্লাইওভার বানিয়ে চলেছি এবং এগুলো করছি নিজেদের পছন্দমতো প্রকল্প নিয়ে। আমাদের ফ্লাইওভারগুলোর একটিও গণপরিবহন উপযোগী নয়। ঢাকার যানবাহনের গড় গতি ২৫ থেকে ৬ দশমিক ৪ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। এ থেকেই বোঝা যায়, আমরা আসলে উল্টো পথে হাঁটছি। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ক্ষোভ ॥ যানজট কমাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মাণের বিষয়টি উঠে এসেছে। গত অক্টোবরে সংসদ ভবনে কমিটির ১৮তম বৈঠকে রাজধানীর যানজট নিরসনে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী তোলার কারণে নানা রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বৈঠকে শহরের চারপাশে আউটার রিং রোড নির্মাণসহ রিং রোডের পাশে নতুন কয়েকটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়ও উঠে আসে। বৈঠকে বলা হয়, রাজধানীর যানজট সমস্যা হঠাৎ তৈরি হয়নি। অতি দ্রুত হারে বেড়েছে রাজধানীর মানুষ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে যানবাহন। কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি সড়কের পরিধি। বর্তমানে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, নগর পরিকল্পনায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া হয়েছিল কিনা, কিংবা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষ আন্তরিক ছিল কিনা। গণপরিবহনে বর্তমানে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজমান, তার অবসান না হলে বক্তিগত গাড়ির সংখ্যা আরও বাড়বে। এ অরাজক পরিস্থিতি চলতে থাকলে এক সময় এ শহরের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।
×