ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর হাসপাতালে ধসে পড়েছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

যশোর হাসপাতালে ধসে পড়েছে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ বাথরুমের দরজা নেই। অকেজো লকিং সিস্টেমও। নষ্ট রয়েছে ৬টি টিউবওয়েল। প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে গণ শৌচাগার দুটিও বন্ধ আছে কয়েক বছর। এভাবেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে যশোর আড়াই শ’ শয্যা হাসপাতালের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে এমন স্থবিরতা বিরাজ করলেও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শুধু যশোর নয়, চিকিৎসা সেবায় যশোর সদর হাসপাতালের ওপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল আশপাশের জেলার মানুষও। প্রতিদিন এ হাসাতালের বহির্বিভাগে প্রায় ১ হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। হাসপাতালটি ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হলেও এখানকার ওয়ার্ডগুলোতে অন্তত ৪শ’ রোগী ভর্তি থাকেন। ভর্তি থাকা এসব রোগীর সঙ্গে স্বজনও থাকেন সমপরিমাণ কিংবা তার বেশি। কিন্তু সে তুলনায় হাসপাতালের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা একেবারেই অপ্রতুল। হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি নাজমা খাতুন জানান, বেশিরভাগ সময়ই বাথরুম অপরিচ্ছন্ন থাকে। গন্ধে ভেতরে থাকা যায় না। আয়াদের বার বার বলেও কোন কাজ হয় না। তাছাড়া, অনেক সময় বাথরুমে পানি থাকে না। তখন আরও বেশি বিপদে পড়তে হয়। পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে থাকা ইকরামুল কবির জানিয়েছেন, বাথরুমের বেশ কয়েকটি দরজাই ভাঙ্গা। সেখান থেকে ভেতরের-বাইরের সব কিছুই দেখা যায়। অন্যদিকে, দরজাগুলোর লকিং সিস্টেমও নষ্ট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শুধু পুরুষ সার্জারিই নয়, প্রায় সব ওয়ার্ডের বাথরুমের লকিং সিস্টেমই অকেজো। সেখানকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ সকলেরই। পানি নিয়েও অভিযোগ রয়েছে রোগী এবং তাদের স্বজনদের। তারা জানিয়েছেন, পুরো হাসপাতালে মাত্র ১টি টিউবওয়েল চালু রয়েছে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ওই একটিমাত্র টিউবওয়েল থেকে পানযোগ্য পানি সংগ্রহ করতে হয় রোগীদের জন্য। অথচ হাসপাতালে আরও ৬টি টিউবওয়েল রয়েছে। বছরের পর পর ধরে তা নষ্ট থাকলেও সারার কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। খায়রুল আলম নামে রোগীর এক স্বজন জানিয়েছেন, যে একটি মাত্র টিউবওয়েল ভাল আছে সেটিও ওয়ার্ড থেকে অনেক দূরে। এতে রাতে খাওয়ার পানি আনতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। বিশেষ করে রাতে ওয়ার্ডগুলো বন্ধ করে দেয়ার পর অনেকের পানির প্রয়োজন হলেও তা পূরণ করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া, গ্রীষ্ম এবং শীতকালে পানির লেয়ার নিচে নেমে গেলে পানির সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এদিকে রোগীর স্বজনদের জন্য হাসপাতাল চত্বরে প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি গণ শৌচাগার নির্মাণ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে ৩ বছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে। ৯০’র দশকের শেষেরদিকে হাসপাতালের পুরাতন ভবনের সামনে স্থাপন করা হয়েছিল একটি গণ শৌচাগার। কয়েক বছর চালু থাকার পর সংস্কারের অভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। এসময় বহির্বিভাগে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হতে থাকলে আরেকটি গণ শৌচাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে হাসপাতালের তৃতীয় গেট সংলগ্ন আধুনিক ওই শৌচাগারটি নির্মাণ করা হয় ২০১২ সালে। কিছুদিন চালু থাকার পর অজ্ঞাত কারণে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির ভবনে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ড স্থাপন করা হলে, ওই শৌচাগারটির দুটি ইউনিটের একটি খুলে দেয়া হলেও বন্ধ রয়েছে অপরটি। এতে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়ছেন বহির্বিভাগের রোগীরাও। এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক একেএম কামরুল হাসান বেনু জানান, হাসপাতালে মোট ১৫টি ওয়ার্ড আছে। যা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য রাজস্ব খাতে কোন নিয়োগ নেই। তবে উন্নয়ন খাতে ১৯ পরিচ্ছন্ন কর্মী আছে। তারা ৩ শিফটে ডিউটি করে। এত কম লোকবল নিয়ে সবসময় হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব নয়।
×