ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে ডিজিটাল কায়দায় মাদক বিক্রি

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

কেরানীগঞ্জে ডিজিটাল কায়দায় মাদক বিক্রি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ২৯ ডিসেম্বর ॥ মাদক বিক্রেতারা বেপরোয়া হয়ে গেছে। তারা ডিজিটাল কায়দায় মাদক বিক্রি শুরু করেছে। অভিজাত এলাকায় ই-মেইলের মাধ্যমে মাদক সংগ্রহ করার প্রবণতা বেড়েছে। মাদক বিক্রেতারা মোবাইল ফোনে বিশেষ কল সাইন ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের মাদকের অর্ডার দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মাদক সেবনকারী মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ দিয়ে নিজের অবস্থান বা আনুষঙ্গিক সবকিছু জানিয়ে দিচ্ছে। মাদক বিক্রেতারাও গ্রাহককে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে বলে। যাবার পর বিশেষ ব্যক্তি গ্রাহকের হাতে টাকা দিয়ে মাদক কিনে নেয়। এছাড়া অনেকে মোবাইল ফোনে আগাম ফ্লেক্সি লোডের মাধ্যমে মাদকের নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করছে। মাদক সেবনকারীদের মধ্যে যারা ইয়াবা, হেরোইন, আফিম, চরস, ফেনসিডিল বা গাঁজায় আসক্ত তাদের অনেকেই সাধারণত ভাল পরিবারের সন্তান। এদের অনেকেরই কম্পিউটার আছে। এরা রীতিমতো মেইল পাঠিয়ে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে থাকে। গোয়েন্দা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে তথ্য আছে, সম্প্রতি উপজেলায় ইয়াবা, হুয়িস্কি বিয়ারের একাধিক চালান ধরা পড়েছে। র্যা ব-১০ ইতোমধ্যে বড় ধরনের কয়েকটি মাদক চালান জব্দ করেছে। উপজেলার অনেক মাদকসেবী ও বিক্রেতা রয়েছে। কিন্তু এসব বিক্রেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই আধুনিক হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক সময়ই তা নাগালে পায় না। বাসায় বসে মেইল করে দিলেই বাসায় মাদক পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। অফিসে বসে মেইলের মাধ্যমে, মোবাইলের মাধ্যমে মাদক সংগ্রহের প্রবণতা বেড়েছে উপজেলায় অধিকাংশ অভিজাত আবাসিক এলাকায়। এজন্য অনেক সময় মাদক বিক্রেতাকে আইনের আওতায় আনা কঠিন হয়ে পড়েছে। আধুনিককালে এটি মাদক সংগ্রহের ডিজিটাল পদ্ধতি হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। এভাবেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে ধূলো দিয়ে উপজেলায় মাদকের বিক্রি বাড়ছে। ইদানীং মাদক ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই থেকে যাচ্ছে গ্রেফতারের বাইরে। মাদকদ্রব্য অপরাধ বাড়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু বাড়তি রোজগার কমে যাওয়ার ভয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাদক বিক্রিকে আমলে নেয় না। যার ফলে প্রতিদিন কেরানীগঞ্জে ছোট খাট অপরাধ ঘটে চলেছে। মাদক দ্রব্য উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। নামকাওয়াস্তে যা-ও উদ্ধার হচ্ছে তা আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অসাধু কর্তাব্যক্তিদের হাত ঘুরে পুনরায় মাদক বিক্রেতাদের হাতে চলে যাচ্ছে। উদ্ধারকৃত মাদক দ্রব্য আবার মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ছোটখাট অপরাধ। দ্বিগুণ চাহিদা মেটাতে মাদকসেবীরাও এখন ব্যবসায় নামছে। অন্তত সহস্রাধিক মাদকসেবী মাদক বিক্রিতে জড়িয়ে পড়েছে। কেরানীগঞ্জে ৩৪৪টি গ্রাম থেকে উন্নীত হয়ে ৪৪৪ গ্রামে পরিণত হয়েছে। এমন কোন গ্রাম নাই যে গ্রামে মাদক লেনদেন ও মাদক সেবন হচ্ছে না। উপজেলায় গত ২ সপ্তাহ আগে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়েছে থানা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চুরি-ডাকাতি সামান্য কমলেও মাদক বিক্রি কমেনি। উপজেলায় দুইটি থানা এলাকায় শতাধিক মাদক স্পট রয়েছে। এসব মাদক স্পট থেকে নিয়মিত বখরা পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
×