ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের অনুষ্ঠানটি যেন বন্ধ না হয়

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের  অনুষ্ঠানটি যেন বন্ধ না হয়

দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘সেক্টরস কমান্ডার ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১’ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান জাতীয় সংগঠন হিসেবে দেশব্যাপী কর্মতৎপরতা অব্যাহত রেখে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা ও চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের আস্ফালনের প্রতিবাদে ২০০৬ সালে এই সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধের সমর কর্মকা-ের শীর্ষ অধিনায়কদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পরিচালিত এই সংগঠনটি দেশের মুক্তিযোদ্ধা ও নতুন প্রজন্মের কাছে একটি সর্বজনবিদিত নাম। বছরব্যাপী এই সংগঠনটি নানাবিধ কর্মসূচী পালন করে থাকে, যার সবই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং বাঙালীর অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্তা বিকাশের লক্ষ্যে। চলতি বছর থেকে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম স্কুলÑকলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকথা শোন’ শিরনামে একটি দেশব্যাপী কর্মসূচী চালু করেছে, যেখানে নতুন প্রজন্মের সামনে একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধরা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। বলাই বাহুল্য, এই কর্মসূচী মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার ইতিহাস সংরক্ষণ ও জাতীয় বীরদের প্রতি নতুন প্রজন্মের চেতনাকে শাণিত করবে। বলা যেতে পারে সেক্টরস কমান্ডার ফোরামকে অন্য সব সংগঠনের চাইতে আলাদা করে রেখেছে দুটি বড় অনুষ্ঠান, যা কেবল দেশে নয় দেশের বাইরেও সংগঠনটির পরিচিতিকে সুদৃঢ় করেছে এবং সকলের মনোযোগ আকৃষ্ট করেছে। এর একটি ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘শিখা চিরন্তন’ বেদি সংলগ্ন ‘স্বাধীনতা চত্বর’-এ বিজয় দিবসের মহাআয়োজন, যার প্রধানতম আকর্ষণ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের নাট্যরূপ, স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পীদের সঙ্গীত পরিবেশনা এবং নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের দুঃখবেদনা ও বীরত্বগাথার সাংস্কৃতিক রূপায়ণ। অন্যটি ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানীদের গণহত্যার স্মরণ ও একই সঙ্গে স্বাধীনতার ঊষালগ্ন উদযাপন। এই দুটি অনুষ্ঠানেই সেক্টরস কমান্ডারের নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ নতুন প্রজন্মের হাতে আমাদের জাতীয় পতাকা হস্তান্তর করেন, যার সুপ্রভাব সুদূরপ্রসারী। সেক্টরস কমান্ডার ফোরাম একাত্তরকে স্মরণ করার জন্য একটি নতুন সংযোজন এবারের কর্মসূচীতে করেছে। মার্কিন কবি এ্যালেন গিসবার্গের সেই বিখ্যাত কবিতা ‘September on Jessore Road’-এর নাট্যরূপ। স্থানীয় পথশিশু-কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে এটি নির্মাণ করেছেন নরসিংদী জেলা প্রশাসন। কবিতাটির গানের রূপ হলো : শত শত চোখ আকাশটা দেখে শত শত শত মানুষের দল, যশোর রোডের দু’ধারে বসত বাঁশের ছাউনি কাদামাটি জল। ................ শত শত মুখ হায় একাত্তর যশোর রোডে যে কত কথা বলে, এত মরা মুখ আধমরা পায়ে পূর্ব বাংলা কলকাতা চলে এত মরা মুখ আধমরা পায়ে পূর্ব বাংলা কলকাতা চলে। শিল্পী মৌসুমী ভৌমিকের সুমধুর কণ্ঠের করুণ সুরের সঙ্গে যখন ঘরহীন ঠিকানাহীন শিশু-কিশোররা অভিনয় করে দেখাচ্ছিল তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিজয় চত্বরের হাজারও দর্শক-শ্রোতার চোখ ছিল অশ্রুসজল। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য। অনুরোধ করব সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিজয় দিবসের এই অনুষ্ঠানটি যাতে বন্ধ না হয়। মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বর শেষ হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ স্বাধীনতার সঙ্গে আরেকটি বছর যেমন যোগ হলো তেমনি বাংলাদেশের বয়স থেকে একটি বছর কমে গেল। রোহিঙ্গা ইস্যু একদিকে যেমন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তেমনি একে কেন্দ্র করে সমগ্র বিশ্ব যেভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়েছে তেমনটি আর ’৭৫ পরবর্তী গত ৪২ বছরে দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আইএস বা আল কায়েদা বা বোকো হারাম দৃশ্যত স্তিমিত মনে হলেও একে যেমন হাল্কাভাবে নেয়া ঠিক হবে না তেমনি মুসলিম ব্রাদার হুডের তৎপরতা ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পরা কোনভাবেই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি চায় না বলেই হঠাৎ করে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বব্যাপী নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করল। এমনি প্রেক্ষাপটে আর এক বছর পর জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী অন্য স্বাধীনতার পক্ষের দলের জন্য আগামী নির্বাচনের পথ অতিক্রম ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪-এর মতো কতখানি সহজ হবে তা এ মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ-আন্তর্জাতিক রাজনীতির যে চালচিত্র আমাদের সামনে রয়েছে তাতে করে শতকরা এক শ’ ভাগ আত্মতুষ্টি যেমন নিশ্চিত করা যাবে না তেমনি শতকরা এক শ’ ভাগ নেতিবাচকও বলা যাবে না। কারণ স্বাধীনতার পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আর পাকিস্তানপন্থীদের পক্ষে বেগম খালেদা জিয়া। এই দুই নেত্রীর মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব। একজন শেখ হাসিনা চিন্তায় চেতনায় মেধায় সততায় নেতৃত্বে বিশ্বসেরা এবং মানবিকতায় একবারেই আলাদা। আরেকজন বেগম খালেদা জিয়ার পুঁজি কেবল বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিগুলোর সমর্থন। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে শেখ হাসিনা ৭৮% আর খালেদা জিয়া ১৮%। তারপরও কলামিস্ট স্বদেশ রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলব কনস্টিটুয়েন্সি ওয়াইজ সাংগঠনিক অবস্থা কোন পক্ষের জন্যই সুখকর নয়। একটু পার্থক্য আছে- আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কারও অস্তিত্ব গ্রাম-গঞ্জে খুব একটা নেই। আওয়ামী লীগেরও যেটুকু অস্তিত্ব আছে তাও কোন নেতা বা এমপি-মন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট। অথচ প্রয়োজন জনগণের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়া এবং সেটিরই অভাব বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। একটি অংশ আছে যাদের প্রেম-ভালবাসা ‘আমি লীগের’ প্রতি, ‘আওয়ামী লীগের’ নয়। কারণ ‘আমি’ সিঙ্গুলার নাউন, আর ‘আওয়ামী’ প্লুরাল নাউন, অর্থাৎ অন্যকে ভাগ দিতে হয়। পক্ষান্তরে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা আওয়ামী লীগের ধারেকাছেও নেই কিন্তু বিএনপির একটি বাহিনী রয়েছে যারা সন্ত্রাস-সংঘটনে সমান পারদর্শী, নাম জামায়াত-শিবির, রাজাকার, আলবদর। নির্বাচন এলে এরা সম্পূর্ণভাবে পার্টির প্রতি নিজেদের উৎসর্গ করে। এরা জানে আগামী নির্বাচনে তারা দলগতভাবে বা দলীয় পরিচয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। তাই এখন থেকেই বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। তার ওপর এদের আরেকটি সুবিধা হলো প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জামায়াত-শিবিরের অবস্থান এবং নির্বাচনের ময়দানে তারা অল আউট নামে। অথচ এই অপশক্তিকে প্রতিরোধ করে এগিয়ে যাওয়া কোন ব্যাপার নয়। প্রয়োজন সিনসিয়ারিটি এবং ‘আমি’ থেকে ‘আওয়ামী’তে উত্তরণ। খালেদা জিয়ার বিপরীতে শেখ হাসিনাকে সহজেই দাঁড় করানো যায়। ২০০৮ সাল থেকে সেক্টরস কমান্ডারের দুটি অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করে আসছে বাংলাদেশ টেলিভিশন। বিটিভির সহায়তায় প্রায় প্রত্যেকটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল এই অনুষ্ঠান দুটি সম্প্রচার করার ফলে সারাদেশের মানুষ গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে তা দেখার জন্য। কারণ অনুষ্ঠান দুটির উপস্থাপনা ও গুণগতমান কেবল উৎকৃষ্টমানের নয়, একই সঙ্গে হৃদয়গ্রাহী। আমরা অনেকেই প্রতিবার এই অনুষ্ঠান দুটিতে যাই নতুন প্রজন্মের হাতে পতাকা হস্তান্তরে শামিল হতে। এবারের ১৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানে গিয়েও আগের সব প্রস্তুতি লক্ষ্য করেছি। সংগঠনটির দীর্ঘকালীন মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও সাংবাদিক হারুন হাবীবকে বরাবরের মতোই ভীষণ ব্যস্ত দেখেছি। আকস্মিক অসুস্থতার কারণে ফোরামের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল কেএম সফিউল্লাহ বীর উত্তম (অবসরপ্রাপ্ত) এবার আসতে পারেননি। উপস্থিত ছিলেন অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী (অব) এবং অনেক সুপরিচিত মুক্তিযোদ্ধা। কয়েক শ’ তরুণ তরুণী স্বেচ্ছাসেবককে দেখেছি যার যার কাজে ব্যস্ত। চারদিকে লোকে লোকারণ্য। মূলত দুটি কারণে সমাজের সকল স্তরের মুক্তিযোদ্ধাগণ সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের ১৬ ডিসেম্বরের ও ২৫ মার্চ রাতের অনুষ্ঠান দুটিতে যান। এক. সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে এমন সার্থক অনুষ্ঠানে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখতে চায় তারা। দুই. নতুন প্রজন্মের হাতে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তারা বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা হস্তান্তর করতে চান, যা এই দুই অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম। কিন্তু এবারের ১৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বড় ব্যত্যয় দেখতে পেলাম রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভির অনুপস্থিতি। জানা গেল বিটিভি এই অনুষ্ঠানটি এবার সরাসরি সম্প্রচার করবে না। অনুষ্ঠানের মুখ্য আয়োজক সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীবকে প্রশ্ন করায় তিনি জানালেন, বরাবরের মতো এবারেও তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিটিভিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করার জন্য। টেলিফোনেও মহাপরিচালককে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু বিটিভির মহাপরিচালক জানিয়েছেন, বিটিভি এই অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে পারবে না। কারণ হিসেবে বলেছেন, যেহেতু সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি অনুষ্ঠান আছে একই সময়ে এবং যেহেতু তাদের কাছে সম্প্রচারের মাত্র একটি ইউনিট আছে, সেহেতু এই সম্প্রচার সম্ভব হবে না। প্রধানমন্ত্রীর যে কোন অনুষ্ঠান বিটিভিতে সম্প্রচারের জন্য অগ্রাধিকার পাবে তা বলাই বাহুল্য। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠানটি প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে উদ্বোধন করেছেন সেদিন সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে, অর্থাৎ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ঐহিত্যবাহী অনুষ্ঠানটি শেষ হওয়ার আড়াই ঘণ্টাপর। তাহলে প্রশ্ন জাগে কেন এমন একটি অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ থেকে দেশের মানুষকে বঞ্চিত করা হলো? বিটিভি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ সত্ত্বেও বিটিভি কিভাবে সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা থেকে বিরত থাকে তা জানা দরকার। কারণ এই অনুষ্ঠানটি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পরিচালিত এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরীক্ষিত মানুষের একটি প্রধান অনুষ্ঠান, যা ইতোমধ্যেই সর্বজনগ্রাহ্য হয়েছে। অথচ তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ সত্ত্বে¡ও বিটিভি অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করেনি, যা তারা করে আসছে বিগত দশ বছর ধরে! প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে আমরা বিশ্বাস রাখি। কারণ কারও খেয়াল খুশি মতো এমন একটি জাতীয় অনুষ্ঠানকে দেশবাসীর দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা সমীচীন নয়। সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের মতো প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে একটি অনুষ্ঠান করে থাকে এবং তা সকলে যেমন জানে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ও বিলক্ষণ জানে। সরকারের প্রতিষ্ঠান বা মন্ত্রণালয় অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের অনুষ্ঠান করবে, করা উচিতও। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা সংরক্ষণের কাজে কেবলমাত্র সরকার বা মন্ত্রণালয় জড়িত থাকবে তাতে পরিপূর্ণ সুফল আসতে পারে না। সেক্টরস কমান্ডার ফোরাম পরিচালিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সমর কর্মকা-ের অধিনায়কদের হাতে এবং পরীক্ষিত সেইসব বীর মুক্তিযোদ্ধার হাতে, যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ এবং অসাম্প্রদায়িক বাঙালী জাতিসত্তার পরীক্ষিত সৈনিক। এ ব্যাপারে সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী তাঁর বক্তৃতায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা বুঝতে অক্ষম কেন এমন একটি অনুষ্ঠানকে বাধাগ্রস্ত করা হলো! প্রকাশ্যেই তিনি বিটিভির অনুপস্থিতির সমালোচনা করেছেন। ফোরামের কয়েকজন আয়োজকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তাঁরা সকলেই মর্মাহত। কেউ কেউ এও বলেছেন, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এরকম অসহযোগিতা আসতে থাকলে আগামীতে এমন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এই আচরণ? সাধারণভাবে বোঝা দায় যে, কেন এরকম আচরণ করা হলো ? অনেকে এমন প্রশ্নও করেছেন যে, সরকারের কোন কোন মহলের মধ্যে কি এমন কিছু লোক এখনও আছেন যারা প্রতিবছর বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান বাহিনীর পরাজয়ের বা আত্মসমর্পণের দৃশ্যটির মঞ্চায়ন দেখতে চান না? কিংবা এমন লোকও আছেন যারা সেক্টরস কমান্ডার ফোরামের ব্যাপক জনপ্রিয় অনুষ্ঠানটিকে নষ্ট করতে চান? আমরা জানি না এসবের কোন্টা সত্য । তবে এটুকুই শুধু বলা যায়, সরকারের বাইরে থেকে যারা এমন ব্যাপক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান করে থাকেন নিজেদের উদ্যোগে এবং যে অনুষ্ঠান দেশের ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কাছে প্রশংসিত, সেই ধরনের অনুষ্ঠানসূচীকে বাধাগ্রস্ত করা যেন না হয় সেদিকে নীতিনির্ধারকদের খেয়াল রাখা দরকার। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাব যে, তিনি যেন এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন। কারণ এই ধরনের অনুষ্ঠান যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি বড় আন্দোলনের অপমৃত্যু ঘটবে। ঢাকা ॥ ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×