ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শোভাময় চর

প্রকাশিত: ০৩:২০, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

শোভাময় চর

সপ্তাহান্তে জনকণ্ঠের শেষ পাতায় একটি বিশেষ সুসংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ‘সাগরে পাখির কলতান/আছড়ে পড়ছে/বিশাল ঢেউ’ শীর্ষক ফিচারটি পাঠ করলে ভ্রমণপিপাসু মন সেখানে ছুটে যেতে চাইবে। আমাদের প্রতিনিধির বর্ণনায় তার আকর্ষণ যেন অনেকটাই বেড়েছে। বিবরণে বলা হয়েছে : ‘চারদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু সাগরের অথৈ জলরাশি। তারই মাঝখানে নয়নাভিরাম বিশাল চর। চারদিকে সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে অনবরত। চরটি চন্দ্রাকৃতির। পশ্চিম দিকটা হাজারো পাখির কলতানে মুখরিত। আর গোটা চরটিতে লাল কাঁকড়ার দৌড়াদৌড়ির এক স্মৃতিময় মনকাড়া সুন্দরের দৃশ্য।’ চরটি আনুমানিক দেড় কিলোমিটার প্রস্থ এবং তিন কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রায় ছয় বর্গকিলোমিটার আয়তন। রয়েছে সংযুক্ত ডুবোচর। পর্যটকের পদচারণাও শুরু হয়েছে। কুয়াকাটা থেকে ১৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে এ চরটি বিজয়ের মাসে নজরে আসে কুয়াকাটার একদল প্রকৃতিপ্রেমিকের। তাই তারা নামকরণ করেছেন চর বিজয়। অবশ্য পায়রার চর নামেও পরিচিতি রয়েছে চরটির। কারণ পায়রা সমুদ্র বন্দরে সাগর থেকে প্রবেশদ্বারের দক্ষিণ দিকটায় এই চরের অবস্থান। গত সপ্তাহে চরটির নিয়ন্ত্রণ নেয় পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জেলা প্রশাসক একটি গোল গাছের চারা রোপণের মধ্য দিয়ে ওই চরে বনায়নের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ইতোমধ্যে পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে এই চরটি। প্রকৃতির দান এ চরটিতে বনায়ন করার জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে পরিবেশ প্রতিবেশসহ সকল বৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রেখে চরটির উন্নয়ন সাধনই প্রত্যাশিত। এখনই পাখিদের আগমন ঘটছে চরটিতে। বনায়ন সম্পন্ন হলে প্রাকৃতিক নিয়মে পাখিরাও বাস করবে এই চরে। কারণ, বৃক্ষ ও পাখি অবিচ্ছেদ্য এবং পরিপূরক। জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রাখা এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা পরিবর্তিত জলবায়ু সঙ্কটের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই দুটি দিকে নজর রাখা হলে কুয়াকাটা থেকে এই চরটি পর্যন্ত গোটা এলাকাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠতে পারে। জেলেদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মূলত এটি সাগরের পানি প্রবাহের প্রবল তধারার কাছে অবস্থিত। এ স্রোতধারার মুখেই জেলেরা ইলিশ ধরার জন্য জাল পেতে থাকেন। পরিবেশবাদীদের অভিমত, এ চরে নানা ধরনের পাখি, লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ রয়েছে। বলাবাহুল্য, এসব যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। এমনিতেই কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত হলো সারা পৃথিবীর একমাত্র বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বেলাভূমি। এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকনের বিরল সুযোগ বিদ্যমান। সাধারণত আর সমস্ত সমুদ্র সৈকতে হয় সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায়। সেদিক দিয়ে কুয়াকাটার আলাদা আকর্ষণ রয়েছে যা এখনও বিশ্বের পর্যটকদের সামনে যথাযথভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। এখন নতুন চর জেগে ওঠায় কুয়াকাটার আর্কষণ ও মূল্য অনেকখানি বেড়ে যাবে। চন্দ্রাকৃতি চরটিকে শোভাময় করে গড়ে তোলার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা করা হলে এই একচিলতে ভূখন্ড-ই হতে পারে হীরের খনি; হতে পারে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের কেন্দ্র। পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ কাজে লাগানোয় তাই আর দেরি নয়। এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোয়ও চটজলদি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবা দরকার।
×