ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঠাকুরগাঁওয়ে গৃহবধুর মৃত্যু নিয়ে ‘নাটক’

প্রকাশিত: ০০:১৯, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

ঠাকুরগাঁওয়ে গৃহবধুর মৃত্যু নিয়ে ‘নাটক’

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ জেলার সীমান্তবর্তী হরিপুর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের খোলড়া গ্রামে সপ্তাহখানেক আগে মৌসুমী আক্তার (১৯) নামে এক গৃহবধুর গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যূর ঘটনা নিয়ে এলাকায় নানান ধরনের নাটক শুরু হয়েছে। হরিপুর থানার ওসি রুহুল কুদ্দুস বলেন, গৃহবধু মৌসুমী আক্তার (১৯) এর মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর চাচা আব্দুল হাই গত বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে বাদী হয়ে ‘আত্মহত্যা প্ররোচনা’ অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। সে মামলায় কাজী আবুল কালাম আজাদ, মৌসুমীর স্বামী জাহাঙ্গীর আলম সহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৩ জনকে আসামী করা হয়। ইতোমধ্যে পুলিশ অভিযুক্ত কাজী আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তার করে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছেন। ওই মৃত্যূ নিয়ে এরআগে গত বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) গৃহবধু মৌসুমী আক্তারের মা দুখী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। মামলার বিবরণে জানা যায়, বছর খানের আগে হরিপুর উপজেলার আমগাঁও ইউনিয়নের প্রয়াত হবিবর রহমানের মেয়ে মৌসুমী আক্তারের সাথে খোলড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের বিয়ে হয়। ট্রাকের হেলপারের কাজ করায় জাহাঙ্গীর আলম প্রায় সময় ঠাকুরগাঁওয়ের বাহিরে থাকতেন। এ সুযোগে জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই হাসিবুল ইসলামের সঙ্গে গৃহবধু মৌসুমী আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৪ ডিসেম্বর রাতে হাসিবুল ইসলাম ও গৃহবধু মৌসুমী আক্তারকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম। এরপর ওই রাতেই স্থানীয় মাতব্বরদের নিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতেই শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় কাজী আবুল কাজাল আজাদ ছাড়াও গ্রাম্য মাতব্বর আব্দুল কাদের, সাবেক ইউপি সদস্য জামালসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে গ্রামের মাতব্বরগন গৃহবধু মৌসুমিকে অশ্লীল ভাষায় নানা ধরনের কটুক্তি করেন। এসময় গৃহবধু মৌসুমী তাঁর স্বামী জাহাঙ্গীর আলমের কাছে ক্ষমা চায় এবং পুনরায় উভয়ে সংসার জীবনে ফিরে যাবেন বলে সম্মতি দেয়। পরদিন শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) গৃহবধু মৌসুমী তাঁর মায়ের কাছে চলে যায়। এরপর রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) স্ত্রীকে ফেরৎ আনতে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম শ্বশুর বাড়িতে যায়। সেখানে তিনদিন থাকার পর বুধবার (২০ ডিসেম্বর) জাহাঙ্গীর আলম তাঁর স্ত্রী মৌসুমীকে নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসে। পরদিন বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে গৃহবধু তাঁর স্বামীর বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দা মরিয়ম বেগম জানান, হাসিবুল ইসলাম ও মৌসুমী আক্তারকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করা হয়েছিল। রাতে উভয়কে নিয়ে শালিস বৈঠক হয়। বৈঠকে ‘ইসলামী শরিয়ামতে’ দোররা মারার বিষয়ে কথা হলে গৃহবধু মৌসুমী তাঁর স্বামী জাহাঙ্গীর আলম সহ সকলের কাছে ক্ষমা চায়। এরপর সবাই মিলে মৌসুমীকে মাপ করে দেয়। এখানে মৌসুমীকে দোররা বা মারপিটের ঘটনা ঘটেনি। মামলার বাদী আব্দুল হাই জানান, যারা শালিস বৈঠক করেছিলেন তারা আমার ভাতিজী মৌসুমী আক্তারকে নানা ধরনের অশ্লীল কথা বলে কটুক্তি করেছিলেন। পুনরায় স্বামীর বাড়িতে ফেরৎ আসার পর উক্ত বৈঠককারীরা আবারো অশ্লীল কথাবার্তা বললে আমার ভাতিজী মৌসুমী আক্তার মনের দু:খ্যে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। স্বামী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার স্ত্রী ও ছোট ভাইকে আপত্তিকর অবস্থায় আমি নিজেই আটক করেছি; এরপর আমি নিজে ওই দুইজনকে দুই-চারটা চরথাপ্পর দিয়েছিলাম। শালিসে আমার স্ত্রীকে কোন দোররা মারা হয়নি। কিছু ব্যক্তি মিথ্যা দোররা মারার বিষয়টি এলাকায় ছড়াচ্ছে। হরিপুর থানার ওসি রুহুল কুদ্দস বলেন, স্থানীয় কিছু ব্যক্তি আত্মহত্যার বিষয়টিকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এলাকায় বিভিন্ন ধরনের কথা ছাড়াচ্ছে। গৃহবধু আত্মহত্যা করেছে; তাকে হত্যা করা হয়নি। সুরতহাল রিপোর্ট করার সময়ও গৃহবধুর শরীরে কোন ধরনের আঘাতের চি‎হ্ন পাওয়া যায়নি। তারপরও আমরা গৃহবধু মৌসুমী আক্তারের ময়নাতদন্ত করেছি। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে অনেক বিষয় পরিস্কার হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত ওই ঘটনায় আমরা একজন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছি, খুব শীঘ্রই অন্য আসামীদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
×