ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার মাসুদ

প্যাট্রিক হোয়াইট, উপন্যাসের পৃথিবী

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

প্যাট্রিক হোয়াইট, উপন্যাসের পৃথিবী

প্যাট্রিক হোয়াইট (Patrick white, ১৯১২-১৯৯০)-কে এক কথায় বলা যায় মানসলোকের অক্লান্ত অভিযাত্রী। তার উপন্যাসগুলোর ভেতর দিকে প্যাট্রিক মানবমনের গভীর অরণ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এই ভ্রমণ উদ্দেশ্যহীন নয়। এই ভ্রমণের ভেতর দিয়ে লেখক আসলে তুলে আনতে চেয়েছেন মানুষের হৃদয়ের আর্তি সেই হৃদয়ের যা চূড়ান্ত রকম, নিঃসঙ্গ এবং যন্ত্রণাকাতর। মানবাস্তিত্বের নতুন মাত্রা আবিষ্কার করেছেন প্যাট্রিক হোয়াইট। এই হিসেবে কথাসাহিত্য একটি নতুন মহাদেশের সন্ধান লাভ করেছে তার উপন্যাসগুলোর মধ্যে। প্যাট্রিকের লেখাজোকার মূলায়ন করতে হলে দুটি জিনিস মনে রাখা খুব প্রয়োজন। এক. অস্ট্রেলীয় সমাজের সাংস্কৃতিক পটভূমি। দুই. লেখকের ইউরোপে (ইংল্যান্ড) দীর্ঘকাল বসবাস এবং বৃহত্তর ইউরোপ ও আমেরিকার নানা জায়গায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। সব মিলে চৌদ্দ বছর বিদেশে কাটিয়েছেন প্যাট্রিক। এই সময়ের মধ্যে কেমব্রিজের কিংস কলেজে আধুনিক ইউরোপীয় ভাষা ও সাহিত্যে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন তিনি। সুতরাং এটা ধরেই নেয়া চলে যে, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ইউরোপে শিল্প সাহিত্য ক্ষেত্রে যেসব নতুন ধ্যান-ধারণার উন্মেষ ও অনুশীলন ঘটে, প্যাট্রিক সেগুলো সম্বন্ধে ওয়াকিফহাল ছিলেন। অতএব চেতনাপ্রবাহ রীতির যে স্পষ্ট প্রভাব তার গল্প উপন্যাসে দেখা যায় সেটা তিনি সচেতনভাবে করেছেন বলেই মনে হয়। হোয়াইটের লেখা মোটামুটি নির্বিঘ্নে- ই পড়া যায়। তবে গল্প অনেক জায়গায় স্বচ্ছন্দ গতিতে এগুতে পারে না ওই Stream of consciousness পদ্ধতি প্রযুক্ত হওয়ার কারণেই। গত শতাব্দীর গোড়ার দু/তিন দশকে অস্ট্রেলিয়ানরা নানা কারণে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রধানত ইউরোপ-আমেরিকার অগ্রসর দেশগুলোতে তারা বসতি গাড়ে। এভাবে তাদের সামনে অভিজ্ঞতার ও উন্নত ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। প্রবাসী অস্ট্রেলিয়ানরা স্বদেশকে নতুন আলোয় দেখতে শেখে। নয়া দৃষ্টিভঙ্গি এবং আধুনিকতার যে ধরনটি আমরা প্যাট্রিকের লেখায় প্রত্যক্ষ করি তার সঙ্গে ভাববিশ্বের ওই নতুন দিগন্তের বিস্তৃতির সুস্পষ্ট সংযোগ আছে। নেভিল শুটের মতো জনপ্রিয় দু’/একজন কথাশিল্পী একাধিক আধুনিক চিন্তা-ধারার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন ইতোপূর্বে। নেভিল (অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী; পরে সেখানেই স্থায়ী নিবাস গাড়েন) তার ঞযব নৎবধশরহম ধিাব উপন্যাসে অস্ট্রেলীয় পটভূমি ব্যবহার করেন বটে, কিন্তু তার উপন্যাস প্রধানত ইংরেজ ও মার্কিন পাঠকদের কথা ভেবেই লিখিত হয়েছে। প্যাট্রিক হোয়াইটই প্রথম অস্ট্রেলিয়া উপন্যাসে প্রকৃত অর্থে আধুনিক মননের চর্চার সূত্রপাত করেন। আর তিনি সেটা করেন প্রধানত অস্ট্রেলিয়ান পাঠকের কথা মাথায় রেখেই। আগেই বলেছি, প্যাট্রিক মনোজগতের এক মহান অভিযাত্রী। সাধারণ মানুষের প্রতি তার দরদ ও সহানুভূতি অপরিসীম। মানুষের অনিরাময়যোগ্য নিঃসঙ্গতা এবং অশেষ মানসযন্ত্রণা পুঁজি করে লেখক অগ্রসর হয়েছেন এক নতুন পৃথিবী নির্মাণে। সেই ‘নতুন পৃথিবীটা কেমন তা এখন আমরা তার ৪-৫টি উপন্যাসের আলোচনার ভেতর দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করব। ঐধঢ়ঢ়ু ঠধষষবু হোয়াইটের প্রথম উপন্যাস। নিউ সাউথ ওয়েলসের বরফাচ্ছাদিত একটি অঞ্চলের পটভূমিতে রচিত এই উপন্যাসের নায়ক একজন চিকিৎসক অলিভার হ্যালিডে। অলিভার বৈচত্র্যসন্ধানী মানুষ। কিন্তু তার নিজের জীবন শাদামাটা, বৈচিত্র্যহীন। ফলে অলিভার একজন অসুখী মানুষ। সে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায় এবং উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টাও করে। এই নিয়ে গড়ে উঠেছে ঐappy Valley -এর গল্প। দাম্পত্য জীবনে হতাশার ফলে অলিভার অ্যালিস ব্রাউন নামের এক সঙ্গীত শিক্ষিকার প্রতি আকৃষ্ট হয়। পরে তাদের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু নানা ব্যক্তিগত কারণে অ্যালিসকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া অলিভারের সম্ভব ছিল না। মানসিক টানাপোড়েনে ছিন্ন-ভিন্ন হওয়ার পর অলিভার অবশেষে, স্ত্রী হিলডাকে নিয়ে চলে যায় উত্তরের এক জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। উদ্দেশ্য, নতুনভাবে সংসারজীবন শুরু করা। মানসিক শান্তির লক্ষ্যে অলিভার ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে বলে মনে হয়। কিন্তু অ্যালিসের সঙ্গে তার উত্তরণআকাক্সক্ষী প্রেম, শেষ পর্যন্ত, জীবনের অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে থেকে যায়। অনিবার্য দুঃখ-বেদনাকে মেনে নিয়েই জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়াই সব অর্থে স্বাস্থ্যকর ও সমীচীন প্যাট্রিক। এই মেসেজটিই দিতে চেয়েছেন ‘হ্যাপি ভ্যালি’ উপন্যাসের মাধ্যমে। ১৯৩০ সালের ব্লুম্্স্বেরির পটভূমিতে রচিত হয়েছে ঞযব খরারহম and the Dead নামের উপন্যাসটি। প্যাট্রিক এখানে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে অন্তর্লোকের অনুভূতি মেলাতে চেষ্টা করেছেন। এ কাজে তিনি অনেকাংশে সফল হয়েছেন বলে মনে হয়। কেন্দ্রীয় চরিত্র এলিয়ট স্টানডিশ। এলিয়টকে আমরা প্রায়শই বিগত জীবনের স্মৃতিচারণ করতে দেখি। এভাবে একদিন সে বুঝতে পারে, তার নিজের কোন আলাদা জীবন ছিল না। সে জীবন আসলে ছিল অন্যদের সফলতর জীবনের কিছুটা সম্প্রসারণ। এলিয়ট কেবল আন্তরিকভাবে সচেষ্ট ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতার জগত গড়ে তুলতে। সেই অভিজ্ঞতা লেখকের ভাষায়, ‘a cocoon of experience away from the noises in the street।’ উপন্যাসের শেষ দিকে এলিয়ট বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে, উদ্দেশ্যহীন। পরে সে লন্ডনগামী একটা বাসে উঠে পড়ে। যেন মৃতের পৃথিবী থেকে সরে এসে জীবিতদের দিকে অগ্রসর হলো সে। স্মর্তব্য, বইটির নাম ‘জীবিত ও মৃত’। প্যাট্রিকের প্রথম উঁচু দরের উপন্যাস হচ্ছে ঞযব ঞৎবব ড়ভ সবহ (১৯৫৫)। স্ট্যান পার্কার এবং তার স্ত্রী এমির পারিবারিক জীবনের গল্প নিয়ে এই উপন্যাস। গল্প আহামরি কিছু নয়। এই দম্পতির সংসার জীবন প্রায় বৈচিত্র্যহীন, নিস্তরঙ্গ দীঘির মতো। যে শাদামাটা, সহজ জীবনযাপন করছে পরিবারটি তার মধ্যে গভীর সারল্য এবং অকৃত্রিমতা আছে। বিশ্বজনীন তার ভাবও এতে লক্ষণীয়। নিস্তরঙ্গ, সাধারণ জীবনেও গোপন কাব্যরসের উচ্ছ্বাস দেখতে পাওয়া অসম্ভব কিছু নয় এই বিষয়বস্তু চিরকালিক। স্ট্যান-এমি দম্পতি তাদের মনোবেদনা প্রকাশ করতে উন্মুখ। কিন্তু তার যোগ্য ভাষা তারা খুঁজে পায় না। এই ‘কথা খুঁজে ফেরা’, যাতনাবিহ্বল চরিত্র দুটি অবশ্য উচ্চতর জীবনোপলব্ধি অর্জনের জন্য ব্যাকুল। কিন্তু সে ধরনের উপলব্ধি তাদের নাগালের বাইরে। ফলে এই বুদ্ধিবৃত্তিক অসমার্থ্য তাদের ভেতরে ভেতরে আরও নিঃসঙ্গ করে তোলে যা থেকে তারা পরিত্রাণ পায় না। এমির প্রাগুক্ত ব্যাকুলতার প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তার স্বভাবের ভেতর। আমরা লক্ষ্য করি, সে সর্বদাই বিরক্ত এবং কতৃত্বপরায়ণ। পক্ষান্তরে, তার স্বামী স্ট্যানকে আমরা কখনও কখনও দেখি বহির্জাগতিক বিস্ময়ের দিকে গভীর মনোযোগ দিতে। স্ট্যান, এভাবে, অসংখ্য সামাজিক মানবিক বন্ধনের মধ্যে থেকেও মুক্তির স্বাদ লাভ করে। এটা উপলব্ধির সেই ধরনের স্তর যেখানে পৌঁছলে একজন মানুষ এ রকম কথা বলতে পারে ‘This table is Love ... if you can get to knwo it ঝড়ের দৃশ্যে স্ট্যান পার্কার কিভাবে ধীরে ধীরে তার আত্মগত অহংবোধ হারিয়ে ফেলছে ঔপন্যাসিক তার হৃদয়স্পশী বর্ণনা দিয়েছেন এভাবেÑ The rain buffeted and ran off the limbs of the man seated on the edge of the veranda. In his nwe humility, weakness and acceptance had become virtues ... . The darkness was full of wonder. Standing there somewhat meekly, the man could have loved something, some one, if he could have Penetrated beyond the wood, beyond the moving darkness. But he could not, and in his confusion he prayed to God, not in specific petition, wordlessly almost, for the sake of compaû, Till he began to knwo every corner of the darkness, as if it were daylight, and he were in love with the heaving world, down to the last blade of wet grass. (পরিচ্ছেদ-১১) প্রতিদিনের আটপৌরে জীবনের কর্মকান্ডে ষোলো আনা লিপ্ততার কথা এই উপন্যাসে গুরুত্বের সঙ্গে বলা হলেও আরেকটি কথা গভীরতর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে বার বার। সেটা হচ্ছে পারিপার্শ্বিকের শৃঙ্খল থেকে মুক্তিতেই মানবজীবনের সার্থকতা বহুলাংশে নিহিত। হোয়াইটের প্রথম দিককার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসসমূহের মধ্যে অন্যতম ঞযব ধঁহঃং ংঃৎড়ু। কেন্দ্রীয় চরিত্র থিওডোরা গুডম্যান কুমারী। অনেকটাই স্বাধীনচেতা সে। কর্তৃত্বপরায়ণ মা সব সময় তার পেছনে লেগে আছে। থিওডোরা বড় হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার একটি ছোট শহরে। কিন্তু পিতার মৃত্যুর পর সিডনি শহরে চলে আসতে হয় তাদের। অবিবেকী মায়ের নিরন্তর প্রভুত্বের কারণে থিওডোরার ব্যক্তিত্ব সেভাবে বিকশিত হতে পারেনি। এ নিয়ে তার মর্মযন্ত্রণা ছিল। মনটা তার সৃজনশীল। তাই আপন ব্যক্তিত্ব খর্ব হলেও থিওডোরা তার অন্তর্জীবনে সেই সব বিরল আনন্দময় মুহূর্তের আস্বাদ লাভ করে। তখন সে এ রকম ভাবতে পারে যে, পৃথিবীটা স্বপ্নময় এবং অনুরাগদীপ্ত। ট্র্যাজেডি এখানেই যে, উপন্যাসের শেষে আমরা দেখতে পাই, থিওডোরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে প্রায় উন্মাদ হয়ে গেছে সে। মানুষের দুঃখ-বেদনাকে উচ্চ মূল্য দিয়েছেন প্যাট্রিক হোয়াইট। তার গল্পের কুশীলবগণ জাঁ পল সাত্রের সৃষ্ট চরিত্রের মতো নিরীশ্বর নন। কিংবা মানবাস্তিত্ব রক্ষা করার ক্ষেত্রে বাস্তবতার অসম্পূর্ণ ভূমিকা সম্বন্ধে তারা উদ্বিগ্নও নন, যেমনটা আমরা দেখেছি আলবার্তো মোরাভিয়ার গল্প-উপন্যাসে। হোয়াইটের কারবার মানুষের অন্তর্লোক নিয়ে। যন্ত্রণা ভোগ করার ভেতর দিয়ে মানুষ যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে তার মূল্য অশেষ। ঐধঢ়ঢ়ু ঠধষষবু উপন্যাসে লেখক যে বক্তব্য পেশ করেছেন তা হচ্ছে, মানুষ কতটা ‘মানুষ’ এবং তার কতটা উন্নতি হয়েছে তা পরিমাপ করতে হবে ব্যক্তির যন্ত্রণাভোগের পরিমাণ দিয়ে। ঞযব ঞৎবব ড়ভ সবহ-এর নায়ক স্ট্যান পার্কার একজন সাধারণ মানুষ। কিন্তু এক পরম উপলব্ধির অন্বেষণে লিপ্ত হওয়ার ফলে সেই মানুষই হয়ে ওঠে অসাধারণ। ঐধঢ়ঢ়ু ঠধষষবু-তে আমরা সাক্ষাত পাই মার্গারেট কুয়োঙয়ের মতো উজ্জ্বল বলিষ্ঠ চরিত্র, সহজাত উপলব্ধি থাকে বিশিষ্টতা দিয়েছে। জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে এই স্বাভাবিক আত্মউপলব্ধির ভূমিকা বিরাট। প্যাট্রিকের গল্প উপন্যাসে ডিএইচ লরেন্স, গ্রাহাম গ্রীন প্রমুখের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ঞযব খরারহম The burnt out ones উপন্যাসের শেষ অংশটি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে লরেন্সের ঝড়হং ধহফ খড়াবৎং উপন্যাসের পরিণতির কথা। এগারোটি ছোট গল্পের সঙ্কলন The burnt out ones-এর নামকরণ গ্রীনের উপন্যাস অ নঁৎহঃ ড়ঁঃ পধংব-এর নামকরণ দ্বারা প্রভাবিত বলেই মনে হয়েছে আমার। প্যাট্রিকের উপন্যাসে সচরাচর আমরা অনেক চরিত্রের ভিড় লক্ষ্য করি। অনেক ঘটনা, পরিবেশের বিশ্বাস্য উজ্জ্বল চিত্র- এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কথাসাহিত্যিকের জীবনধর্মী মননশীলতা। হোয়াইট তার অনেক চরিত্রকেই মরমী ভাবধারার প্রতিনিধি হিসেবে অঙ্কিত করার চেষ্টা করেছেন। নিঃসঙ্গতার ও বিচ্ছিন্নতা বোধের গভীর বিশ্লেষণ আলোকিত করে তুলেছে নানা ধরনের চরিত্রকে যাদের মধ্যে ডাক্তার থেকে আরম্ভ করে আদিবাসী শিল্পী, এমনকি ধোপানীও আছে। Happy Valley-(১৯৩৯) কে আমরা লেখকের পরবর্তী অনেক উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের সফল পূর্বসূরি বলতে পারি। আর The Tree of man হচ্ছে সেই বই যা তাকে এনে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতি। প্যাট্রিকের নোবেল পুরস্কার (১৯৭৩) অর্জনের পেছনেও উপন্যাসটির বড় অবদান ছিল। উত্তরকালে লেখকের খ্যাতিকে টেকসই করতে সাহায্য করেছে যেসব গ্রন্থ সেগুলো হচ্ছে, ঠড়ংং (১৯৫৭), Riders in the Charriot (১৯৬১)- The eye of the storm (১৯৭৩)। ‘দ্য ট্রি অব ম্যান’-এর প্রথম মার্কিন সংস্করণ হয় ১৯৫৫ সালে। প্রথম ব্রিটিশ সংস্করণ বের হয় ১৯৫৬তে। যদিও প্যাট্রিকের প্রধান কাজ মানুষের অন্তর্জগত নিয়ে তথাপি সমাজ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্বন্ধেও তার স্বচ্ছ ধারণা আছে। কথাশিল্পী ও সমালোচক মার্টিন বয়েড অবশ্য এই মর্মে অভিযোগ তুলেছিলেন যে, মানবচরিত্রের মনোলোক অঙ্কনের তুলনায় সমাজ বিষয়ে তার ধারণা অগভীর। কিন্তু একজন লেখকের সাফল্যের দিকটিই আগে বিবেচ্য, ব্যর্থতার দিকটি নয়। পারিবারিক জীবনে দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার মধ্যে যে ত্যাগের মনোভাব এবং নিঃসঙ্গতার ভেতর যে উদ্দীপক শক্তি লুকিয়ে আছে, প্যাট্রিক হোয়াইট সেদিকে আমাদের নজর কেড়েছেন। তার রচনারীতি, যা ক্ষেত্রবিশেষে শৈলীর চাতুর্যকে প্রশ্রয় দিয়েছে কখনও কখনও পাঠ-স্বাচ্ছন্দ্যকে বিঘ্নিত করে। এসব দুর্বলতা সত্ত্বেও লেখকের মহত্ত্ব ম্লান হয়ে যায় না। তিনি নিঃসন্দেহে বিশ শতকের প্রদান কথাকারদের একজন।
×