ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রিফাত কান্তি সেন

বেড়িয়ে আসুন পর্বতশৃঙ্গের স্বর্গরাজ্য বান্দরবান

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

বেড়িয়ে আসুন পর্বতশৃঙ্গের স্বর্গরাজ্য বান্দরবান

চলছে ডিসেম্বর মাস। একদিকে বিজয়ের মাস অন্যদিকে ছুটির মাস। একটু একটু করে শীত ও নামতে শুরু করেছে। সাধারণত এ সময়টাতে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকে। সবচেয়ে বেশি অলস সময় কাটাতে হয় শিক্ষার্থীদের। পড়ালেখার চাপ নেই যেমন; তেমনি অলস সময় ও ঘরে কাটতে চায় না। ঠিক এ সময় বেরিয়ে আসতে পারেন পর্বতশৃঙ্গ ঘেরা জেলা বান্দরবান। প্রিয় পাঠক আমরা আজ আপনাদের শুনাব বান্দরবান জেলার গল্প। বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার একটি বান্দরবান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব এক লীলাভূমি বান্দরবান। বাংলাদেশের সবচেয়ে কম জনবসতি সম্পন্ন স্থান এটি। বান্দরবান জেলার নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা মতভেদ। এখানকার বাসিন্দাদের প্রচলিত রূপ কথায় আছে, ওই এলাকায় এক সময় অসংখ্য বানর বাস করত। অনেকে ধারণা করেন এর থেকেই হয়ত নামকরণ করা হয় বান্দরবান। এখানে রয়েছে দেশের বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ ‘কেওক্রাডং’। রয়েছে দেশের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ ‘তাজিংডং’। প্রিয় পাঠক অপরূপ সৌন্দর্যের এই বাংলাদেশে বান্দরবান জেলা একটি পর্যটন কেন্দ্রিক জেলা। পর্যটনখাতে এ জেলার অবদান সত্যি প্রশংসার দাবিদার। এ জেলায় দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে, বগা লেক, বুদ্ধ ধাতু জাদি, চিম্বুক পাহাড় রেঞ্জ, জাদিপাই ঝর্ণা, নীলাচল, নীলগিরি, থানচি, সাংগু নদী, শৈল প্রপাত, রিজুক ঝর্ণাসহ আরও বেশ ক’টি পর্যটনকেন্দ্র। এক কথায় ভ্রমণের জন্য জেলাটি উপযোগী। প্রিয় পাঠক আজ আমরা বান্দরবান জেলার কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব। নীলগিরি : বান্দরবান জেলা থেকে প্রায় ৫২ কিমি. দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বান্দরবান- থানচি সড়কে পাহাড়ের চূড়ায় নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্র অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দু’হাজার দু’শ ফুট উচ্চতায় এই পর্যটন কেন্দ্রটি অবস্থিত। এ স্থানটি থেকে সহজেই মেঘকে ছোঁয়া যায়। আপনি স্থানটিকে বলতে পারেন অনেকটা ভারতের ভূস্বর্গ দার্জিলিংয়ের মতো। নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকালে দেখবেন শুধু সবুজের সমারহ। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। নির্জন প্রকৃতি আর সবুজের সমারহ দর্শনার্থীদের মনকে ভরিয়ে তোলে। শুধু কি তাই, দিনের বেলায় এ স্থান থেকে বঙ্গোপসাগরের জাহাজ চলাচল খালি চোখে দেখা যায়। এতে করে পর্যটকরা স্থানটিতে আসতে খুবই আকৃষ্ট হন। দুর্গম পাহাড়ে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে গড়ে তোলা হয়েছে আকাশনীলা, মেঘদূত, নীলাতানা নামে তিনটি কটেজ। এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা। রয়েছে অত্যাধুনিক একটি রেস্টুরেন্ট। তাই চলুন এ শীতে ঘুরে আসি। নীলাচল : নীলাচল বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি প্রসিদ্ধ স্থান। এটি বান্দরবন শহর থেকে প্রায় ছয় কিমি. দূরে অবস্থিত। দৃষ্টিনন্দন এ পর্যটন কেন্দ্রটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন। ২০০৬ সালে পহেলা জানুয়ারি এ প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় রয়েছে শুভ্রনীলা, নীহারিকা, ঝুলন্ত নীলা, ভ্যালেন্টাইন পয়েন্ট নামে আকর্ষণীয় বিশ্রামাগার। এটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬শ’ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। বর্ষা, শরত, হেমন্ত তিন ঋতুতে এখান থেকে মেঘকে ছোঁয়া যায়। নীলাচল থেকে সমগ্র বান্দরবান জেলাকে এক নজরে দেখা যায়। এখানকার আদিবাসীরা খুবই ন¤্র, ভদ্র ও অতিথিপরায়ন। তাই সুযোগ বুঝে ঘুরে আসুন ওই স্থানটিতে। বগালেক : স্থানীয়ভাবে এ লেকটিকে বগালেক বললেও আসলে এ স্থানটির নাম ‘বগাকাইন হ্রদ’ বা ‘বগা হ্রদ’। দেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার স্বাদু পানির হ্রদ এটি। বান্দরবান থেকে প্রায় ৭০ কিমি. দূরে বগালেকের অবস্থান। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২৪০০শ’ ফুট। এখানে বসবাস করে বম, মুরং, তঞ্চংগ্যা এবং ত্রিপুরাসহ অন্যান্য আদিবাসীদের বাস। খুবই শান্তিপ্রিয় এসব আদিবাসিরা। তাই দেড়ি না করে ঘুরে আসুন বগালেকে। বগালেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করে আসুুন। সাঙ্গু নদী : নদীর সঙ্গে যুগ জনম ধরেই আমাদের রয়েছে মিতালী। আর সে নদী যদি হয় পাহাড়ী অঞ্চলের কোন নদী তাহলে তো আর কথাই নেই। প্রিয় পাঠক নদী মাতৃক দেশ আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। এদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য নদ-নদী। সাঙ্গু নদী আমাদের দেশে একটি পাহাড়ী অঞ্চলের নদী। চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার একটি নদী ‘সাঙ্গু নদী’। কর্ণফুলী নদীর পর এটি চট্টগ্রাম বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। বান্দরবান জেলার মদক এলাকার পাহাড়ে এ নদীর জন্ম। নদীটি বান্দরবান জেলা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। নদীর অপার সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয় ভ্রমণপ্রিয়সী পর্যটকদের। তিন্দু : অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। প্রকৃতির অপার লীলায় সজ্জিত জেলা বান্দরবান। বান্দরবান জেলার একটি উপজেলা থানচি। থানচিতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হলো তিন্দু। স্থানীয়রা মনে করেন, তিন্দু বাংলাদেশের অন্যতম একটি ভূ-স্বর্গ। আকাশ, কুয়াশা, মেঘ, পাহাড়, ঝর্ণা যদি দেখতে চান তবে অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন তিন্দুতে। রহস্য, রোমাঞ্চ, ভয় সবই উপভোগ করেতে পারেন ওই স্থানটি ঘুরে এলে। বান্দরবানের থানচি থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যেতে পারেন ওই স্থানটিতে। তিন্দুর দুইপাশ দিয়ে চলে গেছে দুটো ঝিরি পথ, সারাদিন সেখান থেকে কলকল করে ছুটে আসছে স্বচ্ছ পানি। তিন্দুতে না গেলে বুঝবেনই না বাংলাদেশটা কত সুন্দর এবং এর চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কতশত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংবলিত জায়গা। তিন্দুতে গেলে আপনি ভাববেন এর মতো ঘুম ঘুম জায়গা পৃথিবীতে আর একটাও নেই। তাই যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অবলোকন করতে চান তবে অচিরেই ঘুরে আসুন তিন্দু। যেভাবে যাবেন বান্দরবান : ঢাকা থেকে প্রতিদিনই বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে বিভিন্ন কোম্পনির যানবাহন। বিশেষ করে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এস-আলমের যে কোন একটি বাসে করে বান্দরবান পৌঁছাতে পারেন। ভাড়া নন এসি ৫৫০ টাকা। এছাড়া আপনি চট্টগ্রামে এসে সেখান থেকেও বাসে চড়ে যেতে পারেন বান্দরবান। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও যেতে পারেন। বান্দরবান পৌঁছে আপনি আপনার ইচ্ছামতো পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে আসতে পারেন।
×