ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতির অভিযোগে সিনহার বেনজির পদত্যাগ

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল নিয়ে তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল নিয়ে তোলপাড়

আরাফাত মুন্না ॥ বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত বছর ২০১৭। দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ এ বছরেই। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী চলতি বছরেই বাতিল হয়েছে সুপ্রীমকোর্টে। বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় ইতিহাসের প্রথম বেশি সংখ্যক আসামির সাজা হয় ২০১৭ সালেই। এ বছরেই হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হয়েছে বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলা। জনস্বার্থে উচ্চ আদালতের দেয়া মেঘনায় লঞ্চডুবি, দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ নিহত, রাজধানীতে ম্যানহোলে পড়ে নিহত, শরীয়তপুরে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে হাত কেটে ফেলার জন্য ক্ষতিপূরণের নির্দেশ এবং পাইপের ভেতরে পড়ে নিহত শিশু জিহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ ছিল আলোচিত। এছাড়া সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণ, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরি শৃঙ্খলা সংক্রান্ত গেজেট নিয়ে সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বও ছিল আলোচনায়। আইনাঙ্গনের এসব ঘটনা গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে এসেছে বার বার। গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে আদালত থেকে দেয়া বিভিন্ন রায় ও পর্যবেক্ষণ। সব মিলিয়ে উচ্চ আদালতের জন্য বছরটি ছিল কোলাহলপূর্ণ। বছরজুড়ে নানা ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করার পর বছরের শেষ দিকে এসে ১১ দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে এক মাসের বেশি ছুটি নিয়ে চলতি বছর ১৩ অক্টোবর বিদেশে যান বিচারপতি সিনহা। সেই ছুটি শেষে ৯ নবেম্বর তার পদত্যাগপত্র পাওয়ার কথা জানায় বঙ্গভবন। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশের ২১ তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন এস কে সিনহা। বয়স অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ৮১ দিন আগেই তার কার্যকাল শেষ হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২১ জন বিচারক প্রধান বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাই প্রথম পদত্যাগ করলেন। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশে আর কোন প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে প্রকাশ্যে এত আলোচনা-সমালোচনাও হয়নি। বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা সুপ্রীমকোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়। সর্বোচ্চ আদালত জানায়, ওই সব অভিযোগের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা তিনি না দিতে পারায় সহকর্মীরা তার সঙ্গে এজলাসে বসতে নারাজ। গত অক্টোবরে বিচারপতি সিনহা ছুটিতে যাওয়ার পর আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার দেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। এখন পর্যন্ত বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞাই প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ষোড়শ সংশোধনীর রায় ॥ উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়, যা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পরিচিত। সংসদে পাস হওয়া এ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে বেশ কয়েকজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি শেষে সংবিধানে আনীত ষোড়শ সংশোধনী ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে গত বছর রায় দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপীল করলে গত ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপীল বিভাগ তা খারিজ করে দেন। ওই রায়ের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনে সুপ্রীমকোর্ট। সেই সঙ্গে বিচারকদের জন্য একটি আচরণবিধিও ঠিক করে দেয় আদালত। এরপর গত ১ আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। ওই রায়ে তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের পর্যবেক্ষণের অংশে দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন। ওই রায় এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে ‘খাটো করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবি তোলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও আইনজীবীরা। এই মামলায় সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর রিভিউ আবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সাতখুন মামলার রায় ॥ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার রায় ২২ আগস্ট ঘোষণা করা হয়। রায়ে সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন, র‌্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব) আরিফ হোসেনসহ ১৫ জনের মৃত্যুদ-ের রায় বহাল রেখে রায় দেয় হাইকোর্ট। বাকি ১১ জনের মৃত্যুদ- পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে এ মামলায় নিম্ন আদালতের দেয়া ৩৫ আসামির মধ্যে খালাস পায়নি কেউই। বিডিআর বিদ্রোহে পিলখানা হত্যা মামলার রায় ॥ চলতি বছর ইতিহাসে প্রথম বেশিসংখ্যক আসামির সাজা বহাল হয়েছে বিডিআর বিদ্রোহের মামলায়। পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ডিএডি তৌহিদসহ ১৩৯ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত। মেঘনায় লঞ্চডুবির ক্ষতিপূরণ ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ॥ ২০০৩ সালে চাঁদপুরের মেঘনা নদীর মোহনায় এমভি নাসরিন-১ লঞ্চডুবিতে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা দিতে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে এবং আহতদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত ৫ জুন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই রায় দেয়। এছাড়া ২০১৭ সালের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রিট, রুল ও আদেশে বছরজুড়েই মানুষের দৃষ্টি ছিল উচ্চ আদালতের দিকে। ম্যানহোলে পড়ে মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ ৫০ লাখ টাকা ॥ ২২ মে রাজধানীর পল্টনের কালভার্ট রোডে ওয়াসার খোলা ম্যানহোলে পড়ে নিহত শানু মিয়ার পরিবারকে ২৫ লাখ করে মোট ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করেছে ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। (২১ মে) রুল নিষ্পত্তি করেছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এর আগে গত ১৪ মে ডিএসসিসিও লিখিতভাবে জানিয়েছিল, তারা পরিবারটিকে ৭ মে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করেছে। আর ঢাকা ওয়াসা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করেছে ১৭ মে। ক্ষতিপূরণের অর্ধেক করে (২৫ লাখ টাকা) শানু মিয়ার এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে আনুপাতিক হারে আলাদা আলাদা ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেছে সংস্থা দু’টি। বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে জড়িয়ে মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ ৫০ লাখ টাকা ॥ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় ঝড়ে পল্লী বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তার জড়িয়ে দুই হাত হারানো সিয়াম খানকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে হাইকোর্ট। আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে এই টাকা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে ৪ জুলাই হাইকোর্টের এক বেঞ্চ রায় দেয়। গত ৫ এপ্রিল বিকেলে ঝড়ে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের তার ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে যায়। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের কাছে জানালেও মেরামতে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। লাইন মেরামত না করেই পরদিন অর্থাৎ ৬ এপ্রিল দুপুরে বিদ্যুত সরবরাহ চালু করে কর্তৃপক্ষ। ওইদিনই তারে জড়িয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন সিয়াম। এরপর সংক্রমণ দেখা দেয়ায় ১২ এপ্রিল তার বাঁ হাতের কবজির ওপর থেকে কেটে ফেলা হয়। একই কারণে ১৬ এপ্রিল তার ডান হাতেরও কবজির ওপর থেকে কেটে ফেলতে হয়। তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের রায় ॥ বিদায়ী বছরের শেষের দিকে মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। রায়ের কপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে বাসের (চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স) তিন মালিক দেবেন ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮৫ হাজার ৪ শ’ ৫২ টাকা, বাসচালক জমির উদ্দিন দেবেন ৩০ লাখ টাকা এবং রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স কোম্পানি দেবে ৮০ হাজার টাকা। তিন মালিক সমান হারে টাকা দেবেন। এ টাকা ক্যাথরিন মাসুদ, নিহতের ছেলে নিষাদ মাসুদ ও বৃদ্ধা মা নুরুন নাহার পাবেন বলে রায়ে বলা হয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে। শিশু জিহাদের বাবা-মাকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ॥ রাজধানীর শাজাহানপুরে পরিত্যক্ত পাইপে পড়ে যাওয়ার পর উদ্ধার তৎপরতায় অবহেলার কারণে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ সংক্রান্ত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয় চলতি বছরে ৯ অক্টোবর। এর মধ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়েছে। রায়ের কপি সংশ্লিষ্টদের হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে জিহাদের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। এর আগে এ বিষয়ে করা রিটের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি শিশু জিহাদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে একই বেঞ্চ। রুল শুনানির পরে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করে। বছরজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা সুপ্রীমকোর্টের অবস্থান এবং আগামী বছরে প্রত্যাশার বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম বলেন, ‘এই বছরটা আমার জন্য খুবই ঝঞ্জা-বিক্ষুব্ধ গেছে। নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে প্রধান বিচারপতি (এসকে সিনহা) যে ভূমিকায় ছিল তাতে এই বছরটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, এ বছরে যুদ্ধাপরাধীর কোন মামলার বিচার আপীল বিভাগে হয়নি। সার্বিকভাবে বলতে গেলে এ বছরটি ছিল ষোড়শ সংশোধনীর বিচার নিয়ে তোলপাড়। আর প্রধান বিচারপতির কিছু কর্মকান্ড নিয়ে নানা রকম সমালোচনা।’ আগামী বছর বিডিআর বিদ্রোহের মামলা, নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার আপীল নিয়ে কাজের চাপ আরও বাড়বে। তবে আমি যেটা চাই, সেটা হলো যুদ্ধাপরাধীদের মামলা যেগুলো আপীলে বিচারের অপেক্ষায় আছে সেগুলো দ্রুত শেষ করা।
×