ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এতিমের টাকা আত্মসাত মামলায় ‘রাজনৈতিক গন্ধ’ পেয়েছেন মাহবুব

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

এতিমের টাকা আত্মসাত মামলায় ‘রাজনৈতিক গন্ধ’ পেয়েছেন মাহবুব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি রাজনৈতিক কালিমালিপ্ত বলে দাবি করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার আরেক আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় ‘ভুয়া তথ্য-প্রমাণ’ দাখিল করেছে। বকশীবাজারে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে বৃহস্পতিবার এ মামলায় ষষ্ঠ দিনের মতো যুক্তিতর্ক শুনানি চলে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে। দুপুরের পর এ জে মোহাম্মদ আলীর যুক্তি উপস্থাপনের সময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হলে এক পর্যায়ে শুনানি মুলতবি করে ৩ ও ৪ জানুয়ারি পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন এ আদালতের বিচারক মোঃ আখতারুজ্জামান। এ মামলায় খালেদার পক্ষে আইনজীবী আবদুর রেজাক খান মোট চারদিন যুক্তি উপস্থাপনের পর বুধবার খন্দকার মাহবুব তার যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছিলেন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত হওয়ার পর খন্দকার মাহবুব তার বাকি বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালে এ মামলা করে দুদক। খন্দকার মাহবুব বলেন, ওই টাকা পাঠিয়েছিলেন কুয়েতের আমির। তিনি বলেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান (বিএনপির সাবেক মহাসচিব) সেই টাকা এনেছিলেন। ওই টাকা জিয়া মেমোরিয়াল ট্রাস্টে গিয়েছিল। অথচ তখন কোন মামলা হলো না? খন্দকার মাহবুব বলেন, এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন হলো? এটা তো হয় না। এ মামলায় ‘রাজনৈতিক গন্ধ’ আছে এবং মামলাটি ‘রাজনৈতিক কালিমালিপ্ত’ বলে মন্তব্য করেন খালেদার এই আইনজীবী। তিনি দাবি করেন, সাক্ষ্য-প্রমাণে এ মামলায় কোন অর্থ আত্মসাতের বিষয় প্রমাণিত হয়নি। খন্দকার মাহবুবের বক্তব্য শেষে ১৫ মিনিটের বিরতি দেয়া হয়। পরে পৌনে একটার দিকে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন এ জে মোহাম্মদ আলী। তিনি দাবি করেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় ‘ভুয়া তথ্য-প্রমাণ’ দাখিল করেছে। দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কোনটা ফলস? আপনি তো জেরাই করেননি। আপনি জাননে না বলে এভাবে বলছেন।’ কাজল কথা বলায় খালেদার আইনজীবীরা এ সময় হৈ চৈ শুরু করে দেন। এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এটা আমাদের কথা বলার সময়। আপনি কথা বলতে পারেন না। পরে তার আবেদনে বিচারক দুদকের আইনজীবীকে বলেন, আপনি বসুন, পরে আপনার কথা শুনব। এরপর আরও কিছু সময় শুনানি চলার পর আবারও বাদানুবাদ শুরু হলে বিচারক ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে দেন। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন আর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশীদ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। খালেদা জিয়া, সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ এ মামলায় জামিনে আছেন। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান নয় বছর ধরে দেশের বাইরে, তার বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এছাড়া কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। মামলার বিচার শুরুর প্রথম থেকেই বার বার শুনানিতে অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া। অনুপস্থিতির কারণে একাধিকবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে আদালত। নানা অজুহাতে অসংখ্যবার উচ্চ আদালতেও গিয়েছেন। তার এসব কর্মকান্ডকে বিচার বিলম্বিত করার অপচেষ্টা বলেই মনে করেন অনেকে।
×