ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে ‘ওয়ানস্টপ’ সার্ভিস চালু

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে ‘ওয়ানস্টপ’ সার্ভিস চালু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যে কোন বাজারই ওঠানামা করে। শ্রমের বাজারও তাই। এরপরও ওঠানামর এই বাজারে এ বছরই সবচেয়ে রেকর্ডসংখ্যক কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। এ বছর ১০ লাখ কর্মী বিদেশে কাজ পেয়েছেন। আগামীদিনে আরও বেশি কর্মী পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছে। নতুন কিছু বাজার উন্মুক্ত হয়েছে। আশা করছি ২০১৮ সালে বাজারগুলোতে পুরোদমে কর্মী নিয়োগ হবে। দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ার বাজারটি বন্ধ থাকার পর গত মার্চ থেকে এই বাজারে কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। প্রথমে দেশটি ১০ টি এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ শুরু করে। বর্তমানে এই দশটি এজেন্সির মাধ্যম হয়ে আরও প্রায় দুই এজেন্সি জনশক্তি রফতানিকারক কর্মী পাঠাতে পারবেন। অবশ্য আমি ৭ শ’ এজেন্সির নাম দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের মনোনিত এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করছেন। যেভাবেই হোক দেশ থেকে বৈধভাবে দেশটিতে কর্মী নিয়োগ হচ্ছে, এটা বড় কথা। বৃহস্পতিবার নিউ ইস্কাটনে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) বায়রা ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার (বিওএসএসসি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি এ কথা বলেন। বায়রার সভাপতি বেনজির আহমেদের (সাবেক এমপি) সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজা, বায়রার মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন, নূর আলী প্রমুখ। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে ‘ওয়ানস্টপ’ সার্ভিসটি চালু করা হয়েছে। অনলাইনে কর্মী নিয়োগে সব ধরনের কাজ এখান থেকেই করা সম্ভব হবে এখন থেকে। কেউ যাতে প্রতারণার শিকার না হন তার জন্য এ ব্যবস্থা চালু করেছে বায়রা। প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা চালু করা হবে। এই ব্যবস্থায় কর্মীরা বায়রা কার্যালয়ে এসে তাদের নাম নিবন্ধন, মেডিক্যাল, ব্যাংকে টাকা জমা দেয়াসহ সব কাজই এখান থেকেই শেষ করতে পারবেন। বিওএসএসসি উদ্বোধন করার পর মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, বিশ্ব এগিয়ে গেছে। একই সঙ্গে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। আজকে যে ব্যবস্থায় কর্মী নিয়োগ হচ্ছে এটা আধুনিক একটি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কর্মীরা বিদেশ গেলে প্রতারণার শিকার থেকে মুক্ত থাকবেন। তবে এর পরও আপনাদের বলছি, গরিব মানুষ যাতে কষ্টের শিকার না হন। কোন অভিযোগ যেন না ওঠে। অভিযোগ উঠলে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবেই। আবার তিনি মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে বলেন, আমার ওখানে কেউ যদি কোন অন্যায় করে তাহলেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, বাংলাদেশের জন্য অভিবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দেশের মানুষই দেশের সম্পদ। তারা বিশ্বের ১৬৫ দেশে শ্রম-ঘাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশে পাঠাচ্ছেন। তাদের টাকায় দেশের অর্থনীতি প্রতিনিয়ত সুসংহত হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হবার পর এদেশের নাগরিকদের অভিবাসনের সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় আমরা অভিবাসন খাতকে দেশের অন্যতম প্রধান খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এ বছর জানুয়ারি থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১০ লাখের বেশি কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। এযাবতকালের মধ্যে এবারই প্রথম সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী চাকরি নিয়ে বিদেশ গেলেন। ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৬৫ দেশে আমরা কর্মী প্রেরণ করছি। এর মধ্যে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে সর্বাধিক পরিমাণ কর্মী প্রেরণ করেছি। এসব দেশ থেকেই সর্বাধিক পরিমাণ রেমিটেন্স পেয়ে আসছি। নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশে নারীকর্মী প্রেরণ করা হচ্ছে। সৌদি আরবেই সর্বাধিক পরিমাণ নারীকর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। বর্তমানে গৃহকর্মী পেশায় সবচেয়ে বেশি নারীকর্মী চাকরি নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন। তবে গৃহকর্মী ও গার্মেন্টস কর্মীর বাইরেও সেলসম্যান, কেয়ার গিভার, বেবি সিটারসহ অন্যান্য পেশাতেও নারীকর্মী আগ্রহ নিয়েই কাজ করছেন। মন্ত্রণালয় ও এর দফতর-সংস্থা অভিবাসন ব্যবস্থাপনার মান উন্নয়ন, দক্ষ কর্মী তৈরি, যৌক্তিক অভিবাসন ব্যয় এবং অভিবাসী কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিশ্ব শ্রমবাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বহুবিধ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতকে সরকার ‘থ্রাস্ট সেক্টর’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ খাতের গুরুত্ব অপরিসীম বিবেচনায় সরকার বিদ্যমান শ্রমবাজারকে ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন কর্মী প্রেরণ করেছি। বিদেশে কর্মসংস্থানের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বিদ্যমান শ্রমবাজার ধরে রাখাসহ আমরা নতুন নতুন সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার অনুসন্ধান করছি। নতুন শ্রমবাজারের সন্ধানে ৫২টি দেশের শ্রমবাজার নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম সমাপ্তির পথে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী বিদেশগামী বাংলাদেশী কর্মীকে শতভাগ বীমার আওতায় আনা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
×