ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু কয়েকদিন দেরি হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু কয়েকদিন দেরি হতে পারে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নেপিডোয় দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক হবে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব না হলে কয়েকদিন দেরি হতে পারে। এছাড়া যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দীনকে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। আগামীদিনে সরকার যে কোন ধরনের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এক অনানুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গত এক বছরের কূটনৈতিক তৎপরতা তুলে ধরেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরানোর কার্যক্রম ২৩ জানুয়ারির মধ্যে হওয়ার কথা ছিল, সেটি দেরি হতে পারে। তবে দেরি হলেও এক সপ্তাহ হতে পারে এর বেশি কোনভাবেই কাম্য নয়। আসছে নতুন বছরে এই বছরের মতোই মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন ও রাশিয়ার ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, এসব দেশকে প্রত্যাশা অনুযায়ী পাইনি। তবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে একক প্রচেষ্টায় চুক্তি করেছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বোঝা যায়, আমরা অন্য কারো মুখাপেক্ষি নই। তারপরও গুরুত্বপূর্ণ যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো মিয়ানমারে গণতন্ত্র নিয়ে সোচ্চার ছিল, তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতেও কথা বলেছে। তাদের ভূমিকাই এখানে বড়। রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি এবং স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গা পাঠানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাদের নিরাপদ পরিবেশে ফেরত পাঠানোর জন্যই চুক্তি করেছি। এই নিয়ে কোন প্রশ্ন করার অবকাশ নেই। আমরা বলতে চাই, রোহিঙ্গারা ফিরে যাবেন। কয়েকদিন দেরি হলেও এর অর্থ এই নয়, যে তারা আর যেতে পারবে না। তবে এখনও যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন, তারা খাদ্য ও চিকিৎসার জন্যই আসছেন বলেও মত দেন তিনি। রোহিঙ্গা নিবন্ধন নিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। বুধবার পর্যন্ত নয় লাখ ২৩ হাজারের বেশি নিবন্ধন হয়ে গেছে। সবাইকে পাঠানো যাবে কিনা সেটা পরে ভাবা যাবে। কিন্তু আগে কাজ শুরু করতে হবে। এছাড়া ১৯ হাজার এতিম রোহিঙ্গা শিশুর বিষয়েও ভাবা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী মঈনুদ্দীনকে ফেরানোর তৎপরতা অব্যাহত ॥ যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দীন লন্ডনে আরাম আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন। তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের তৎপরতা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধী মঈনুদ্দীনকে গ্রেফতারে লক্ষ্যে ইন্টারপোল রেড এ্যালার্ট জারি করেছে। তবে আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, তিনি লন্ডনে খোলামেলা পরিবেশে জীবন যাপন করছেন। সেখানে তিনি প্রকাশ্য শপিংও করছেন। তবে এসব যুদ্ধাপরাধীদের ফিরিয়ে আনা খুব সহজ কাজ নয়। কেননা যুদ্ধাপরাধীরা যেসব দেশে অবস্থান করছেন, সেসব দেশের রাষ্ট্রীয় পলিসির কারণেই তাদের এখানে ফিরিয়ে আনা একটি শক্ত কাজ। তারপরেও আমরা ফিরিয়ে আনার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। এক প্রশ্নের উত্তরে শাহরিয়ার আলম বলেন, গত এক বছরের কূটনৈতিক তৎপরতা এক কথায় মূল্যায়ন করা কঠিন। তবে ২০১৭ সাল ছিল কূটনৈতিক সফলতার একটি মাইলফলক। কালচারাল ডিপ্লোমেসিতেও আমরা সফল হয়েছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা আগামী একশ’ বছরের জন্য একটি ডেল্টা প্ল্যান (বদ্বীপ পরিকল্পনা) করতে সক্ষম হয়েছি। নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন ফোরামে আমরা আমাদের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী অবস্থান তুলে ধরেছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম কোন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চলতি বছরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। এটা ছিল আমাদের বড় একটি সাফল্য। এছাড়া জেরুজালেম নীতির প্রশ্নে আমরা বিভিন্ন ফোরামে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামীদিনে যে কোন ধরনের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিস্তা চুক্তি না হলেও দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছর ভারত সফর করেছেন। দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বেড়েছে। ট্রেন সার্ভিস বেড়েছে। ভারত থেকে বিদ্যুত এনেছি। আগামীতে আরও বিদ্যুত আসবে। এছাড়া উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বেড়েছে বলেও তিনি জানান।
×