ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দপুরে জমির উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাঁটিতে

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

সৈয়দপুরে  জমির উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাঁটিতে

সংবাদদাতা,সৈয়দপুর, নীলফামারী, ২৮ ডিসেম্বর ॥ সৈয়দপুরে নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অবাধে তিন ফসলি জমির টপসয়েল কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইট ভাঁটিতে। এতে জমিগুলোর উর্বরতা হারিয়ে উৎপাদন ব্যাহত হবে। সৈয়দপুর কৃষি অফিস জানায়, এ উপজেলার বোতলাগাড়ী, কামারপুকুর, বাঙ্গালীপুর, কাশিরামবেল পুকুর, খাতামধুপুর মিলে পাঁচ ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলে সাড়ে ৮ হাজার হেক্টরে কৃষকরা চাষাবাদ করে। এ সকল জমিতে ইরি বোরো-আমন, আউশ, আলু, গম, শীত ও গ্রীষ্ম কালীন সবজি বেশি আবাদ হয়। তবে উপজেলার ইউনিয়নের জমিগুলো খুবই উর্বর। প্রতিবছর ঈর্ষান্বিত হারে ধানসহ সকল ফসল ফলে। সৈয়দপুর উপজেলার উদ্ভিদ সংরক্ষণ উপ-সহকারী সুনিল কুমার দাস জানায়, মাটির উপরিভাগের ৮ থেকে ৯ ইঞ্চির মধ্যে থাকে উর্বরা শক্তি। ওই টপসয়েল হারিয়ে গেলে দুই-এক বছরেও সারের মাধ্যমে পূর্বের ন্যায় উর্বরতা পাওয়া যাবে না। এটি কোনভাবে কৃষকরা চালিয়ে নিতে পারছে না। আর এটি প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট কোন শক্তিশালী আইন বা নীতিমালা না থাকায় কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। এতে প্রতিনিয়ত এ উপজেলায় কামারপুকুর, বোতলাগাড়ী, কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নে একের পর এক ইটভাঁটি গড়ে উঠছে। টপ সয়েলের অভাবে কৃষি জমির মারাত্মক ক্ষতির পর পরিবেশ ধ্বংসে বেপরোয়া হয়ে উঠছে ইটভাঁটার মালিকেরা। সরেজমিনে দেখা যায়, এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক ইটভাঁটি রয়েছে। এরমধ্যে বেশির ভাগই রয়েছে কামারপুকুর ইউপিতে। এ এলাকার সকল ভাঁটিতে টপ সয়েল নেয়া হচ্ছে ডাম ট্রাক ও ট্রলি দ্বারা। এক্ষেত্রে মাটি কাটতে তারা ব্যাবহার করছে এস্কেভেটর মেশিন। জানা যায়, অতি মুনাফার লোভে মাটি ব্যবসায়ি দালাল চক্র কৃষকদের অসচেতনতা, আর্থিক সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফুসলিয়ে সামান্য দরে তিন ফসলি জমিগুলোর টপসয়েলসহ প্রায় ৪ হতে ৫ ফুট গভীর করে কিনে নিচ্ছে। সামান্য টাকা পেলেও কৃষকরা বৃহৎ ক্ষতির মুখে পড়ছে। কারণ, ওই জমিগুলোতে আগের মতো আর ফসল ভাল ফলছে না। পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় জলাবদ্ধতায় আবাদ নষ্ট হচ্ছে। মৃত্তিকা গবেষকরা বলছেন, চাষাবাদি জমিতে দীর্ঘদিন ধরে ফসলের অবশিষ্ট অংশ পচে এবং সার প্রয়োগের কারণে জমির উপরিভাগের মূল উর্বরা শক্তি বাড়ে। তবে ওপরের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার কারণে জমিতে বিদ্যমান উর্বরা শক্তি হারিয়ে যাচ্ছে। এ শক্তি পেতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। টপসয়েলের নিচের অংশে চাষাবাদ করলে প্রচুর পরিমাণে সার প্রয়োগ করেও প্রায় ৫-৬ বছর সময় লাগে। শুধু তাই নয়, উপজেলার পল্লীতে ইটভাঁটির ধোয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। কারণ অনেক ভাঁটিতে সরকার নির্ধারিত উচ্চতার চিমনী নেই। আবার অনুন্নত কয়লার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশে দূষণ ঘটছে। যার প্রভাব পড়ছে ফসলের ওপর। ২০১৫ সালে কামারপুকুর এলাকাবাসী জমির ইরি-বোরোর নষ্ট ক্ষেত বাচাতে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিচার চেয়েছিল। বিচার হলেও ইটভাঁটি কমেনি। ঈশ্বরদীতে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ স্টাফ রিপোর্টার ঈশ্বরদী থেকে জানান, ঈশ্বরদীর বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাঙের ছাতার মতো ইটভাঁটি তৈরি হয়েছে। এ ভাঁটিগুলোর বেশীরভাগই তৈরি করা হয়েছে আখ, ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল, লিচু ও ফলবাগান এলাকার জমিতে। ইট তৈরি করতে গিয়ে ভূমির যথেচ্ছা ব্যবহার করা হচ্ছে। ইট বহনে নষ্ট হচ্ছে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক ও রাস্তা। একদিকে ফসলহানি হচ্ছে, অন্যদিকে মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে ভারসাম্যহীন হচ্ছে পরিবেশ। ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকার প্রায় চল্লিশটি ভাঁটির বেশীর ভাগ ভাঁটিতেই কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ২০১৩ সালের নীতিমালা অনুসরণের কোন বালাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রত্যেকটি ভাঁটিই সরকার অনুমোদিত সাইজের পরিবর্তে ছোট করে ইট তৈরি ও বিক্রি করে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। সব ভাঁটিতেই সরকার অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে লাখ লাখ বেশী ইট তৈরি করে বহাল তবিয়তে বিক্রি করে রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। সূত্রমতে, ঈশ্বরদীর সাহাপুর, লক্ষ্মীকুন্ডা, মুলাডুলি ও সাঁড়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় চল্লিশটি ইট ভাঁটি তৈরি হয়েছে। এসব ভাঁটির বেশীরভাগই ২/৩ ফসলি জমিতে। ভাঁটির নির্গত ধোঁয়া এবং ইট বহনকারী গাড়ির ধোঁয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ধুলির কারণে। বসবাস করা দুষ্কর হয়ে উঠেছে এবং তারা নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না। কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বেশীরভাগ ভাঁটিতে। এতে বনাঞ্চল ধ্বংস হতে বসেছে। কাঠের ধোঁয়ার কারণে ফলনশীল বিভিন্ন গাছ ও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। শ্বাসকষ্ট ও এ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
×