ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানে কী হচ্ছে?

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

পাকিস্তানে কী হচ্ছে?

জঙ্গীদের সংগঠনকে রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিচ্ছে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র পাকিস্তান। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের উৎসস্থলে তাকালে যে দেশটির নাম সামনে আসে, তা হচ্ছে পাকিস্তান। জঙ্গী প্রশিক্ষণ ও মদদদান শুধু নয়, বিদেশেও রফতানি করে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলো জঙ্গী ও সন্ত্রাসী লালন পালনের অভিযোগের তীর বহু আগেই পাকিস্তানকে লক্ষ্য করে ছুড়েছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের আদর্শে বিকশিত পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি নিত্য নতুন কৌশল ও পন্থা অবলম্বন করছে। নিজ দেশও জঙ্গী হামলা মুক্ত নয়। তথাপি জঙ্গীদের বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার ঘাটতি হচ্ছে না। আল কায়েদা, হরকত-উল জিহাদ; তারিক-ই নাফজ; শরীয়তই মহাম্মদ, তালেবানসহ আরও অনেক জঙ্গী সংগঠন পাকিস্তানে সক্রিয় হলেও এরা ভারত, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানে প্রশিক্ষিত জঙ্গী চালান দিয়ে আসছে। এই জঙ্গীরা এসব দেশে নাশকতামূলক ও আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে আসছে। এমনকি স্থানীয়ভাবে জঙ্গী তৈরি করে, তাদেরও ব্যবহার করছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যত জঙ্গী হামলা হয়েছে সেসব হামলাকারীদের একটা বড় অংশই পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত। নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশে বোমা হামলা চালানো হচ্ছে এসব প্রশিক্ষিত জঙ্গীর মাধ্যমে। পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইএর মাধ্যমে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটানোসহ নাশকতামূলক তৎপরতা চালিয়ে এসেছিল। এই জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো এ দেশে মূলত জামায়াতের সদস্যদের নেতৃত্ব ও পরিচালনায় নাশকতা অব্যাহত রেখেছে। পাকিস্তানী জঙ্গীরা ২০০৮ সালে সবচেয়ে বড় নাশকতামূলক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল মুম্বাইতে। এরপরও হামলা হয়েছে দেশটিতে। এই হামলাকারীরা পাকিস্তানী নাগরিক। কাশ্মীরে যে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী ঘটনা ঘটছে তার মূলে লস্কর-ই তৈয়বা নামক সংগঠন জড়িত। ১৯৯০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত অন্যতম বৃহত্তম সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি গড়ে ওঠে। লাহোরের মুরিদবে নামক স্থানে এর সদর দফতর। বড় সশস্ত্র জঙ্গীগোষ্ঠী জামায়াত উদ-দাওয়ার আমির হাফিজ মোহাম্মদ সাঈদ আফগানিস্তানে প্রতিষ্ঠা করেন লস্কর-ই তৈয়বা। যার অর্থ ন্যায়নিষ্ঠার সেবা। বর্তমানে সাঈদ সংগঠন প্রধান। মুম্বাইয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মূল পরিকল্পনাকারী এই সাঈদই ছিল বলে ভারত বহুদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। এই হামলায় ১৬০ জনের বেশি নিহত হয়েছিল। সাঈদকে ধরতে যুক্তরাষ্ট্র এক কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে বহির্বিশ্বের চাপে পাকিস্তানে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকারের আবেদনে আদালত তাকে গৃহবন্দী করে রাখার রায় দেয় গত জানুয়ারি মাসে। আবার আদালতের আদেশই গত ২৩ নবেম্বর মুক্তি পায় বন্দীদশা থেকে। আদালতে সরকারী কৌশলীরা বলেও ছিল, মুক্ত হাফিজ জনগণের জন্য হুমকি হতে পারে। আদালতে অবশ্য সরকার এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ দেয়ার আদেশ দিলেও সরকার তা উপস্থাপন করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সাঈদের জামাত উদ-দাওয়া (যেইউডি) জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই তৈয়বার ‘ওপেনফ্রন্ট’। ২০০১ সালে ভারতের পার্লামেন্টে এক হামলার জন্য লস্কর-ই তৈয়বাকে দায়ী করার পর সাঈদকে তিন মাসের জন্য আটক করা হয়েছিল। তার কর্মকা- অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক এ কারণ দেখিয়ে ২০০৬ সালের আগস্টে পাকিস্তান সরকার সাঈদকে ফের আটক করে। এবারও কয়েক মাস পর ছাড়া পান তিনি। ভারতে হামলার পরিকল্পনার একাংশ পাকিস্তানে করা হয় এবং লস্কর-ই তৈয়বা জড়িত বলে স্বীকার করে নিলেও ছয় মাস পর পাকিস্তান তাকে মুক্তি দেয়। জম্মু ও কাশ্মীরে যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলছে, তার নেপথ্যেও এই জঙ্গীগোষ্ঠী। ভারতের সুপারিশে জাতিসংঘ সাঈদকে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা দিতে চাইলেও চীনের আপত্তি তোলে। ভারতও চাইছে তাকে তাদের কাছে তুলে দিতে, কিন্তু পাকিস্তান রাজি নয়। এই সাঈদ এখন লাহোরে নিজ গোষ্ঠীর রাজনৈতিক শাখার দফতর খুলেছেন। মিল্লি মুসলিম লীগ নামে এই নয়া রাজনৈতিক দলের তিনিই প্রধান। আগামী সংসদ নির্বাচনে এই দলটি অংশ নিতে যাচ্ছে। শুধু ভারত নয়, আফগানিস্তানও সে দেশে জঙ্গী হামলার জন্য সাঈদকে দায়ী করছে। সন্ত্রাসী ও ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানে জঙ্গীরাই অলিখিতভাবে শাসন চালাচ্ছে। এবার তারা প্রকাশ্যে আসছে। এই তৎপরতা সার্ক দেশসমূহের জন্যও উদ্বেগের কারণ বৈকি। এই জঙ্গীগোষ্ঠী প্রতিবেশী দেশগুলোতে জঙ্গী রফতানি ও হামলা চালিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। এই অঞ্চলের জনগণ জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী। তাই এদের অপতৎপরতা রুখে দেবে। তবে পাকিস্তান নিজে জঙ্গীবাদের শিকার হলেও জঙ্গীদের সহায়তা পায় রাজনৈতিক দল ও ক্ষমতাসীন সরকার। এদের পৃষ্ঠপোষক আইএসআই। বাংলাদেশ এ সবের অবসান চায়।
×