ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আতঙ্কের নাম ছিনতাই

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

আতঙ্কের নাম ছিনতাই

ছিনতাই একটি ভয়াবহ আতঙ্কের নাম এখন রাতভর মাদক সেবন করে ছিনতাইকারীরা রাজধানীর রাজপথে ছিনতাইয়ে নামে। মালামাল ছিনতাই শুধু নয়, প্রাণবায়ু কেড়ে নিতেও দ্বিধাগ্রস্ত করে না এই দুর্বৃত্তের দল। সাধারণ ‘ক্ল্যাসিক্যাল’ অপরাধ বলা যাবে না ছিনতাইকে। এটা দস্যুবৃত্তির আরেক রূপ। এদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে। মহল্লা, অলিগলি, পাড়া, রাজপথ, পথচারী থেকে শুরু করে যানবাহনেও এদের ঘৃণিত অপতৎপরতা চলছে। এদের রুখবে তেমন সাধ্য বুঝি নেই কারও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এই সব ভয়ঙ্কর মূর্তিমান দানবের দানবিকতাকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে তেমন আগ্রহী বলে দৃশ্যমান হয় না প্রায়শই। কিন্তু সাধারণ জনগণ এমনকি অভিজাত শ্রেণীর মানুষও এদের দস্যুপনার হাত থেকে নিষ্কৃতি পায় না। এরা মাঝে মধ্যে জনগণের হাতে ধরা পড়ে এবং তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু এরা জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় অলৌকিকভাবে নয়, পুরোপুরি লৌকিকভাবে। দুর্বল চার্জশীট, তদন্তে গাফিলতি, মামলায় বিলম্বে অভিযোগকারীর আগ্রহে ভাটা পড়ে অনেক ক্ষেত্রেই। ছিনতাইকারীরা ধরা পড়ে, জেলে যায় আবার ছাড়াও পায় এমন অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। কিন্তু অনন্তকাল ধরে তো আর তা চলতে পারে না। এদের নির্মূল করার উপায় উদ্ভাবনের পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে যামিনে ছাড়া পাওয়া কঠিন হতো। পেশাদার ছিনতাইকারীর সংখ্যা রাজধানীতে কত, তার পরিসংখ্যান কোথাও মেলে না। এই দৃর্বৃত্তায়নে জড়িত হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে যা জানা যায়, তার মধ্যে মাদকাসক্তি অর্থাৎ মাদক ক্রয়ের জন্য অর্থের সংস্থান, বেকারত্ব, আর্থিক অনটন, অপরাধ জগতে যুক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। এই কাজে তেমন বেশি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন না হলেও, এরা বেশ চৌকস হয়। নানা রকম পথ ও পন্থা তারা তৈরি করে নেয়। ছিনতাইকারীরা ইদানীং নতুন নতুন পথ ও পন্থা এবং কৌশল ব্যবহার করছে। ছিনতাইকারীদের সংঘশক্তি বেশ মজবুত। এরা বিভিন্ন ‘গ্রুপে’ বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই কাজ করে। ধারালো ছুরি, রামদা, কিরিচ, এমনকি পিস্তল, রিভলবারও ব্যবহার করে। নির্মম আচরণে এরা রপ্ত বলেই মানবতাবোধ সুপ্ত। তাই সামান্য টাকার জন্য হলেও প্রাণ হরণ করতে দ্বিধা করে না। সাম্প্রতিক মোড়ে মোড়ে প্রকাশ্য ছিনতাই হচ্ছে, প্রতিরোধে কেউ এগিয়ে আসে না। বরং দূর থেকে এমনভাবে দেখে যে, যেন বায়স্কোপের দৃশ্য গিলছে। এই নরাধমদের পাকড়াও করার জন্য মাঝে মধ্যে অনেকে এগিয়ে আসেন। অনেকের প্রাণনাশও হয়েছে ছিনতাইকারীদের হাতে। নিরস্ত্র হতে প্রতিরোধ গড়ার মতো শক্তিমত্তা প্রদর্শন করার মতো মানুষের সংখ্যা সম্ভবত হ্রাস পাচ্ছে। ‘পুলিশের নাকের ডগায় ছিনতাই’ হলেও তারা নির্বিকার থাকে। অনেকে অবশ্য ছিনতাই শেষে ঘটনাস্থলে এগিয়ে আসে। ছিনতাইকারীকে যদি তারা ভয়ই পায় এবং প্রতিরোধ করার মতো সাহসী হতে না পারে, তাহলে ছিনতাই যেভাবে চলছে সেভাবেই চলবে। এই কর্মে দুর্বৃত্তদের সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। ছিনতাই কাজে জড়িতরা ছিনতাইয়ের নতুন নতুন পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করলেও এসবের বিপরীতে নিরাপত্তা দানকারীরা অনেক পেছনে পড়ে আছে বলে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। ছিনতাইয়ে সর্বশেষ আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সিএনজি অটোরিক্সার ছাদ কেটে ছিনতাই। প্রকাশ্যে দুর্বৃত্তরা এই নয়া কৌশলে যাত্রীদের মোবাইল স্বর্ণালঙ্কার ইত্যাদি ছিনিয়ে নিচ্ছে। অবশ্য সিএনজি চালকদের সঙ্গে ছিনতাইকারীদের আঁতাতের অভিযোগও বেশ পুরনো, এদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে এবং গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বাসের জানালা দিয়ে টান মেরে মোবাইল, ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য তো অহরহই ঘটছে। আবার মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার এবং হুন্ডায় চড়ে ছিনতাইকারীরা পথচারীর বা রিক্সা যাত্রীর মালামাল ছিনতাই করে আসছে। মানুষের জীবনে নিরাপত্তা বিঘ্নকারী এই ছিনতাই নামক কুকর্মটির অবসান জরুরী।
×