ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৫ শতাংশ বাজেট কমেছে জাতিসংঘের

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

৫ শতাংশ বাজেট কমেছে জাতিসংঘের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিরাট অঙ্কের বাজেট কমাচ্ছে জাতিসংঘ। আর এর পরিমাণ ২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এই বাজেট হ্রাসে সমঝোতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘ আগামী ২০১৮ ও ২০১৯ সালের জন্য দুই বছর মেয়াদী বাজেট কমিয়েছে। সংস্থাটি ২০১৬ ও ২০১৭ সালের বাজেটের তুলনায় আগামী বাজেটের আকার কমিয়েছে ২৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ৫ শতাংশ। ২০১৮ ও ২০১৯ সালের জন্য ৫৪০ কোটি ডলারের বাজেটের অনুমোদন দিয়েছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে এই বাজেটের আকার ছিল ৫৬৯ কোটি ডলার। আগামী বাজেট যে কেবল চলতি বাজেটের তুলনায় কম হয়েছে তাই না, জাতিসংঘ মহাসচিবের দপ্তর যে বাজেটের প্রস্তাব দিয়েছিল তার চাইতেও ১৯ কোটি ডলার কম। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে মহাসচিবের দপ্তর ওই বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছিল। জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোর চাঁদার অর্থে প্রতি দুই বছরের এই বাজেট করে থাকে। এর আওতায় থাকে সাধারণত- নির্দিষ্ট এলাকার রাজনৈতিক কর্মকা-ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা, আন্তর্জাতিক আইন ও বিচার প্রাপ্তি, আঞ্চলিক সহায়তা উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার মতো কাজে ব্যয় করে থাকে। সাধারণত জাতিসংঘের বাজেটের সবচেয়ে বড় অংশ আসে য্ক্তুরাষ্ট্র থেকে। যুক্তরাষ্ট্র একাই জাতিসংঘের মোট বাজেটের প্রায় ২২ শতাংশ প্রদান করে থাকে। তবে এবার তারা প্রায় সাড়ে ২৮ কোটি ডলার চাঁদা দেবে না। তার প্রভাবই পড়েছে জাতিসংঘের বাজেটে। তবে ডিসেম্বরের শুরুতেই জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুটেরেস পূর্বের বাজেটের চেয়ে ১৯ কোটি ডলার সংকোচনের কথা বলেছিলেন। সে সময়ই যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল আরও ২৫ কোটি ডলার কমাতে। শেষ পর্যন্ত দর কষাকষির মাধ্যমে সাড়ে ২৮ কোটি ডলার কমিয়ে ২০১৮ ও ২০১৯ সালের জন্য নতুন বাজেট অনুমোদনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলেছে, তারা জাতিসংঘের বাজেট উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কর্তনে সমঝোতা চালিয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের মিশন গত রবিবার জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতিসংঘের বাজেট কমানো হচ্ছে কমপক্ষে ২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। জাতিসংঘের কর্মী ব্যবস্থাপনা এবং সহায়তা কার্যক্রমেও বাজেট হ্রাস করার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে কাটছাটের পর জাতিসংঘের বাজেট কত হবে বা জাতিসংঘের বাজেটে যুক্তরাষ্ট্রের যে অবদান তার কত ঠিক কত শতাংশ কমানো হবে সে ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। বাজেট কমানোর কারণ হিসেবে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেন, সংস্থাটির অদক্ষতা ও অতিরিক্ত ব্যয়ের কথা সবাই জানেন। আমি যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের দাক্ষিণ্যের সুযোগ নিতে দিব না। তিনি আরও বলেন, বাজেট নিয়ে আলোচনার ফলাফল নিয়ে তারা খুশি। সেইসাথে তারা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংরক্ষণ করে জাতিসংঘের দক্ষতা বাড়ানোর উপায় খোঁজা জারি রাখবেন। গত সপ্তাহে নিরাপত্তা পরিষদে ব্যর্থ হওয়ার পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের জেরুজালেম নীতির বিরুদ্ধে ভোট হয়। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে প্রস্তাব পাস হয়। হুমকি উপেক্ষা করে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস হয়। ক্ষুদ্র কয়েকটি দ্বীপ রাষ্ট্র ইসরাইল বাদে সেদিন কাউকেই পাশে পায়নি তারা। এই ভোটকে কেন্দ্র করে নিকি হ্যালি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়ে থাকে। আরও বলা হয়, যারা ট্রাম্পের ঘোষণার বিরুদ্ধে ভোট দেবে তাদের সহায়তা কর্তন করবে প্রশাসন। এজন্য জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি সদস্য দেশগুলোকে চিঠি পর্যন্ত দেন। ট্রাম্প তার টুইটারে প্রকাশ্যে হুমকি দেন বলে মিডিয়ার খবরে প্রকাশিত হয়। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী, সংস্থাটি পরিচালনার জন্য বার্ষিক যে বাজেট হয় তার ২২ শতাংশ বহন করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তারা এ বাবদ ১.২ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। এছাড়াও একই বছরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ৬.৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় বহন করেছে যুক্তরাষ্ট্র যা প্রায় ২৮.৫ শতাংশের সমান।
×