ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় ভারতের অরবিন্দ অনুশীলন কেন্দ্রের ‘রানী রাসমণি’ মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বগুড়ায় ভারতের অরবিন্দ অনুশীলন কেন্দ্রের ‘রানী রাসমণি’ মঞ্চস্থ

সমুদ্র হক ॥ বাংলার তেজস্বিনী ও ভক্তিমতি আলোকবর্তিকার এক নারী- রানী রাসমণি। যিনি গরিব মানুষের ওপর ইংরেজদের নিষ্ঠুরতা দেখে শুধু প্রতিবাদই করেননি, তা দমিয়ে দিতে বাঘিনীর মত ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ইংরেজ বেনিয়া ম্যাজিস্ট্রেট যখন বলে ‘হয় নীল চাষ ক্যরিবে না হয় ফাঁসিতে ঝুলিবে’ তখন রানী রাসমণির হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে ইংরেজের সিংহাসন। সাধারণের মন জয় করা এমনই এক লোকমাতার ইতিহাস ভিত্তিক নাটক ‘রানী রাসমণি’ বগুড়ার শহীদ টিটু মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়। রবিবার সন্ধ্যায় এই নাটক পরিবেশন করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিউড়ীর শ্রীঅরবিন্দ অনুশীলন কেন্দ্র। শ্রীঅরবিন্দ সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন বগুড়ার ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন ছিল এই নাটক। নাটকটি পরিচালনা করেন শমীক ব্যানার্জী। নাট্যরূপ ও সঙ্গীত রচনায় ডাঃ জগন্ময় বন্দোপাধ্যায়। ভারতের জি বাংলা চ্যানেলে এই সময়ে করুণাময়ী রানী রাসমণি সিরিয়াল প্রচার হচ্ছে। বগুড়ার অনেকে সিরিয়ালটির দর্শকশ্রোতা। তাদের জন্য এই নাটক ছিল বাড়তি আকর্ষণ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বগুড়ার সর্বস্তরের দর্শক। সব মিলিয়ে নাট্যপ্রিয় দর্শকে মিলনায়তন একেবারের পরিপূর্ণ ছিল। তারা ‘রানী রাসমণি’ দেখে মেলাবার চেষ্টা করে, টিভি সিরিয়ালে যেমনটি দেখছে নাটকেও কি তেমনই হবে! নাটক শেষে দর্শক শ্রোতাদের কথা, মঞ্চেও ভাল লাগলো। একবারে সব জানা গেল। রাসমণির চরিত্র ছিল দুই ভাগে। ছেলেবেলা ও বড়বেলা। অভিনয় করেছেন যথাক্রমে সহেলী ও মধুমিতা চট্টরাজ। দুইজনের অভিনয় ছিল প্রাণছোঁয়া। রাসমণির শ্বশুরের ভূমিকায় ডাঃ জগন্ময় বন্দোপাধ্যায় ও রাসমণির স্বামীর ভূমিকায় রাজারাম দাসের অভিনয় মনে রাখার মত। ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকায় স্মৃতিকমল বিশ্বাস চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে কিছুটা অতিরঞ্জন করলেও দর্শক তা মেনে নিয়েছে। পাগলীর ভূমিকায় অন্তরা লোধ অনবদ্য। নাটকের অন্যান্য চরিত্রে হুতুম প্যাঁচার চরিত্রে পার্থ প্রতিম মিত্র ও রামকুমার চরিত্রে চিন্ময় চক্রবর্তী মানানসই। এ ছাড়াও নরেশ গাঙ্গুলী, দুলাল বিশ্বাস, সৌরিন, সমিত ব্যানার্জী, দেবু প্রামানিক, ডাঃ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তানিয়া চট্টরাজ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। নাটকে কালী কির্তনের দলের ব্যতিক্রমী সঙ্গীতালেখ্য বাড়তি বিনোদন দিয়েছে। নাটকটি পরিবেশনায় ছিল মুন্সিয়ানার ছোঁয়া। যেমন রানী রাসমণির মহত্তম কীর্তিকে স্মরণ করে ভারতের দক্ষিণেশ্বরে স্থাপিত হয় কালী মন্দির। ১৮৪৭ সালে কালী মন্দিরের জন্য এক লপ্তে ষাট বিঘা জমি কেনার মধ্য দিয়ে সূচনা যাত্রা হয়। একশ’ বছর পর ১৯৪৭ সালে চূড়ান্ত সার্থকতার পর ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। রানী রাসমণি এই যাত্রা শুরু করে দেন। তিনি অর্থ সংগ্রহে সচেষ্ট ছিলেন। বেশি আকুল ছিলেন দান ধ্যানে। একই সঙ্গে ইংরেজের অত্যাচারে প্রতিবাদী হয়েছেন। ইংরেজ শাসককূল তার ভয়ে ছিল ভীত। তার স্মরণীয় কীর্তির মধ্যে রয়েছে বাবুঘাট ও বাবুঘাট রোড, আহিরীটোলা ঘাট। রাসমণির কালী মন্দির মহাপীঠে এসে যুগাবতার শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস প্রবর্তন করেন তার যুগধর্ম ‘শিব জ্ঞানে জীব সেবা’। যার পদতলে বসে শিক্ষা লাভ করেন তারই উত্তরসূরি স্বামী বিবেকানন্দ। মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের এমন একটি নাটক দর্শক শ্রোতাদের মানবতা ও সাধারণ মানুষের প্রতি মমত্ববোধের ভাবনা জুগিয়েছে। নাটকটি মঞ্চায়নের আগে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সভাপতি ডাঃ বিপুল চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক কাঞ্চন অধিকারী।
×