বছর খানেক আগেও মধ্যপ্রাচ্যের চিহ্নিত দু’একজন ছাড়া বেশিরভাগ নেতারই একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিল ওয়াশিংটন। কিন্তু এখন আর যেন সেই দিন নাই, বিশেষ করে ২০১৭ সালের শেষের দিকে সিরিয়ার যুদ্ধে পুতিনের জয়ের ঘোষণা যেন ছিল মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভরকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার হুঙ্কার। বিশ্ব পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র তার সহযোগী সৌদি আরব, তুরস্ক ও ইসরাইলের ঘোর শত্রু সিরিয়ার বাশার আল আসাদকে উৎখাতের চ্যালেঞ্জে শেষ হাসি হাসলেন পুতিন। সিরিয়া যুদ্ধের শেষ কয়েক মাসে পুতিন যেভাবে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে লক্ষ্যের দিকে এগুচ্ছিলেন, ঠিক তখন পাল্লা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের ক্রেমলিন সফরও যেন বাড়ছিল। ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর দেড় হাজার লোক ও সোনার সিঁড়ি নিয়ে ক্রেমলিন সফরে যান সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ। সৌদি আরবের কোন বাদশাহর এখন পর্যন্ত এটিই ছিল প্রথম রাশিয়া সফর। সে সময় ক্রেমলিনের এক উপদেষ্টা জানান, বাদশাহ সালমানের ওই সফর ছিল মূলত সিরিয়া যুদ্ধে সৌদি জোটের এক ধরনের পরাজয় স্বীকার করে নেয়া। ক্রেমলিন সফরে বিশুদ্ধবাদী ওয়াহাবি বিশ্বাসের অনুসারী বাদশাহ রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ক্রয়ের প্রাথমিক চুক্তি করেন। পুতিনের কাছে বাদশাহ ইরানের বিষয়ে নালিশ জানালেও কোন ফল পাননি। উল্টো সিরিয়ার পুনর্গঠনে অনেকটা যেন ক্ষতিপূরণ দেয়ার মতই পুতিনের কাছে খত দিয়ে আসেন। যে পুনর্গঠনের মূল কাজটা করবে রাশিয়া, আর পুঁজি দেবে সৌদি আরব এবং ক্ষমতায় থাকছেন আসাদই। সবশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় আরব বিশ্বসহ গোটা বিশ্বে ক্রোধ ছড়িয়ে পড়েছে, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে। এহেন পরিস্থিতিতে জেরুজালেম নিয়ে মার্কিন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করতে না পারায় বেকায়দায় পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ওয়াশিংটন ঘেঁষা দেশগুলো। এক্ষেত্রে না চাইতেই ইরান, তুরস্ক বলয়কে যেন তুরুপের তাস তুলে দিয়েছে ওয়াশিংটন। মধ্যপ্রাচ্যে এ বলয়কে আরও ভাল অবস্থানে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন ট্রা¤প। যার সুফল সবশেষে যাবে পুতিনের ঘরেই। ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ অধিগ্রহণ ও পূর্ব ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে মাঝে রাশিয়া আন্তর্জাতিকভাবে যেভাবে কোণঠাসা ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে সে দুরবস্থা কাটিয়ে উঠে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় যে অনেক সুবিধাজনক ও শক্তিশালী অবস্থানে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। -বিবিসি ব্লুমবার্গ