ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন

যেভাবে চাপা পড়ল বেনজির ভুট্টো হত্যকান্ড-!

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

যেভাবে চাপা পড়ল বেনজির ভুট্টো হত্যকান্ড-!

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর কিশোর আত্মঘাতী বোমারু বিলালের (১৫) হামলায় নিহত হন। রাওয়ালপিন্ডিতে এক নির্বাচনী জনসভা শেষ করে বেনজির ভুট্টো যখন তার গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সে সময় বিলাল তাকে গুলি করে ও পরে আত্মঘাতী হামলা চালায়। পাকিস্তানী তালেবান সে হামলার নির্দেশ দিয়েছিল। খবর বিবিসির। বেনজির ভুট্টোর বাবা জুলফিকার আলী ভুট্টো ছিলেন পাকিস্তানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তিনিও অকালে রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হক তাকে ফাঁসি দেন। জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ভুট্টো ১৯৯০’র দশকে দুইবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে সেনাবাহিনী তাকে স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। বেনজির ভুট্টোকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাকে যখন হত্যা করা হয় তখন তিনি তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হবার দৌড়ে নেমেছিলেন। বেনজির ভুট্টোর সে হত্যাকান্ড- তার সমর্থকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নেমে আসে। বেনজির ভুট্টোর হত্যাকা-ের সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জেনারেল পারভেজ মোশারফ। হত্যাকা-ের দশ বছর পর মোশারফ জানান, সে ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রের কোন অংশ জড়িত থাকতে পারে। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের সে বিপথগামী অংশটির সঙ্গে তালেবানের যোগাযোগ থাকতে পারে। যদিও পাকিস্তানের সাবেক একজন প্রেসিডেন্টের মুখ থেকে এ ধরনের কথা বেশ অবাক করার মতো। মোশারফকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, এ সম্পর্কে তার কাছে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। আমার ধারণা বিষয়টিতে আমার মূল্যায়ন সঠিক। একজন নারী, পশ্চিমের প্রতি যার ঝোঁক আছে, তাকে রাষ্ট্রের সে অংশটি সন্দেহের চোখে দেখে। অভিযুক্তদের ফোনালাপ ও ঘটনার আগে তাদের অবস্থান যাচাই করে দেখা যায়, হত্যাকা-ের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত আদালতে এসব কিছু প্রমাণিত হয়নি। বিচারক বলছেন, যে প্রক্রিয়ায় তথ্য-প্রমাণ জোগাড় ও উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে অভিযুক্তদের খালাস দিতে তিনি বাধ্য হচ্ছেন। অভিযুক্তরা এখনও কারাগারে কেননা আপীলের নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। বেনজির ভুট্টো হত্যাকান্ডে এখন পর্যন্ত যে দু’জন ব্যক্তির সাজা হয়েছে তারা হচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা। দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাদের সাজা দিয়েছে আদালত। পাকিস্তানে অনেকে মনে করেন, তাদের প্রতি সুবিচার করা হয়নি। পুলিশ তাদের প্রতি নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছে। এ ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়, পাকিস্তানে রাষ্ট্রের ভেতরে আরেকটি রাষ্ট্র বিদ্যমান। সাবেক ও বর্তমান সামরিক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। যেটি বাইরে থেকে দৃশ্যমান নয়।
×