ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্ধার কাজ চলছে

মহেশখালীতে ২ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত ॥ চার পাইলট অক্ষত

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

মহেশখালীতে ২ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত ॥ চার পাইলট অক্ষত

স্টাফ রিপোর্টার ও চট্টগ্রাম অফিস ॥ কক্সবাজারের মহেশখালীর পুটিবিলায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুটো প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আন্তঃবাহিনী গণসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক (বিমান বাহিনী ডেস্ক) মো. নূর ইসলাম জানান, দুটি (ওয়াইএকে-১৩০) বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। দুটি বিমানে চার জন ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় বিমান দুটি রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। তাই দুর্ঘটনার কারণ জানা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে পাইলটের যোগাযোগ নেই। রাডার বিচ্ছিন্ন। তারা ৬টায় উড্ডয়ন করছে চট্টগ্রাম থেকে। পৌনে ৭টার দিকে আমরা খবর পেয়েছি বিধ্বস্তের। চার পাইলট নিরাপদে আছেন। বিমানটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। সাধারণত প্রশিক্ষণ বিমানে দুই জন পাইলট থাকেন। জানা যায়, ওয়াইএকে-১৩০ মডেলের এই দুটো বিমান একই সময়ে চট্টগ্রাম বিমান বাহিনীর ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর পরই এ দুঘর্টনা ঘটে। এ দুটো বিমানে দুজন করে চারজন বৈমানিক ছিলেন। তারা হলেন- বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন শরীফ, উইং কমান্ডার রাজীব, উইং কমান্ডার আজিম ও স্কয়াড্রন লিডার মনির। তারা বিমান দুটোতে আগুন ধরার সঙ্গে সঙ্গেই প্যারাসুটের মাধ্যমে প্রাণরক্ষা করতে সক্ষম হন। তারা ফরমেশান ফ্লাইং (পাশাপাশি দুটো উড্ডয়ন) করার সময় এ দুর্ঘটনার শিকার হন। পাইলট চারজনই এখন সুস্থ ও নিরাপদে আছেন। জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুটি প্রশিক্ষণ বিমান আকাশে সংঘর্ষের কবলে পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমান দুটি নাইট ফ্লাইংয়ে অংশ নিতে উড্ডয়ন শুরু করেছিল। বুধবার ঠিক সন্ধ্যার পর এ ঘটনা ঘটে দ্বীপ উপজেলা কক্সবাজারের মহেশখালীর পুটিবিলায়। দুই বিমানের দুই পাইলট ও দুই কো-পাইলট অক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর। চার পাইলটের মধ্যে একজন প্যারাসুটের মাধ্যমে অবতরণ করতে দেখেছে এলাকাবাসী। বিধ্বস্ত হওয়ার পর বিমানের ধ্বংসাবশেষে আগুন লেগে যায়। উদ্ধার কাজে নামে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা। রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার তৎপরতা চলছিল। আইএসপিআর সূত্রে জানানো হয়েছে, এ প্রশিক্ষণ বিমান দুটি রাশিয়ার নির্মিত ইয়াক-১৩০ মডেলের। গেল বছর এ ধরনের চারটি বিমান কেনা হয়। এদের মধ্যে এ দুটি বিমান বুধবার নাইট ফ্লাইংকালে বিধ্বস্ত হয়। আইএসপিআর সূত্রে আরও জানানো হয়, সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রামের বিএএফ জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে বিমান দুটি নিয়ে চার পাইলট উড্ডয়ন করেন। উড্ডয়নের কিছু সময় পর দুটি বিমানেরই রাডারের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে দ্রুত খোঁজ নেয়া শুরু হয়। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে খবর মেলে মহেশখালী দ্বীপের ঘোরকঘাটা পৌরসভার পুটিভিলা এলাকায় বিমান দুটি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণের আগে প্রচ- শব্দ হয়। এরপর আগুন লেগে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জনকণ্ঠের কক্সবাজারের স্টাফ রিপোর্টার ও মহেশখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিমান দুটির একটি তিন টুকরো হয়ে পৌরসভা এলাকার আমিরচাঁদপাড়ায় আকাশে বিকট শব্দ হয়ে বিধ্বস্ত হয়। মহেশখালীর লম্বাঘোনায় গিয়ে পড়ে। অপরটি গিয়ে পড়ে পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের পুটিভিলা পাড়ার সিরাজির ঘরের পাশে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিমানের একটি অংশ দাউ দাউ করে জ্বলছিল। এ সময় সন্নিহিত স্থানীয় বাটা মাঝির বসতবাড়িটিও জ্বলে যায়। কক্সবাজার বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মোহন্ত দুর্ঘটনার খবর নিশ্চিত করে বলেছেন, তারা একজন নিহত হয়েছেন বলে শুনেছেন। তবে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। পুলিশ জানায়, দুটি বিমানের সংঘর্ষ হলেও একটি বিমান তিন টুকরো হয়ে মহেশখালীর বিভিন্ন জায়গায় পড়ে। ঘটনার পর পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি মহেশখালী ছাড়াও চকরিয়া থেকেও অতিরিক্ত উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে নেয়া হয়েছে। জানানো হয়, বিমান বিধ্বস্তের খবরে এলাকার লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। কিন্তু আগুনের কারণে কেউ কাছে পৌঁছুতে পারেনি। পরে পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার কর্মীরা উদ্ধার কাজ শুরু করে। বিমান বাহিনীর এ দুটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় সকলের দৃষ্টি ছিল পাইলটদের নিয়ে। প্রাথমিক খবরে তারা ছিল নিখোঁজ। এরপরের খবরে জানা যায় তিনজন অক্ষত, একজন নিঁেখাজ। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত খবর মেলে চার পাইলটই অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছের। আইএসপিআর সূত্রে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানাতে পারেনি। এখানে উল্লেখ্য, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীতে যুদ্ধবিমান হেলিকপ্টার রয়েছে। এরমধ্যে নৌবাহিনীতে রয়েছে একটি হেলিকপ্টার ও একটি যুদ্ধবিমান। আর বিমান বাহিনীতে রয়েছে বেশকিছু যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার। এ দুই সংস্থার অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিদিন নাইট ফ্লাইংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ফ্লাইং চলে কুতুবদিয়া-মহেশখালী হয়ে টেকনাফ এলাকার অদূরে গভীর বঙ্গোপসাগর এলাকায়। প্রতিদিন ন্যূনতম পক্ষে অর্ধশত যুদ্ধ বিমানের ফ্লাইং চলে। বুধবারও অনুরূপ নাইট ফ্লাইং ছিল। চট্টগ্রামের জহুরুল হক ঘাঁটিতে দুটি ইয়াক ১৩০ মডেলের রাশিয়ার নির্মিত যুদ্ধ বিমান নিয়ে চার পাইলট উড্ডয়ন করার পর কী কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে তা নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি হয়েছে। দুর্ঘটনার পর পর রাত গভীর হতে থাকায় বিস্তারিত আরও তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল হক টুটুল জানিয়েছেন, বিমান বাহিনীর দুটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। চার পাইলট উদ্ধার হয়েছে, তারা অক্ষত রয়েছে। তবে বিধ্বস্ত বিমান দুটিতে আগুন ধরে গেছে। মহেশখালী দ্বীপে এ ধরনের ঘটনা প্রথম হওয়ায় এলাকার উৎস্যুক জনতার ভিড় জমে যায় রাতের মধ্যেই। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সম্মিলিত উদ্ধার কাজ চলছিল।
×