ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আন্দোলনে নামছে শ্রমিক সংগঠনগুলো

বুয়েটের সুপারিশ ছাড়াই অটোরিক্সার মেয়াদ ছয় মাস বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বুয়েটের সুপারিশ ছাড়াই অটোরিক্সার মেয়াদ ছয় মাস বাড়ছে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ বিভিন্ন মহলের আপত্তির মুখে ১৫ বছরের পুরনো সিএনজিচালিত অটোরিক্সার মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। যদিও মেয়াদোত্তীর্ণ অটোরিক্সাগুলো রাজধানীতে চলাচলের উপযোগী কিনা এ সংক্রান্ত রিপোর্ট এখনও দাখিল করেনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। বুয়েটের পক্ষ থেকে রিপোর্ট দিতে আরও দুই মাস সময় লাগার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। এদিকে পুরনো অটোরিক্সার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে অটোরিক্সার মালিক ও চালকরা পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। ফের মেয়াদ বাড়ানোর কারণে বিআরটিএর সর্বশেষ সিদ্ধান্তও মালিকদের পক্ষে গেল বলে মনে করছেন শ্রমিকরা। এ নিয়েও আন্দোলনে নেমেছে অটোরিক্সা চালকসহ শ্রমিক সংগঠনগুলো। জানতে চাইলে পরিবহন নেতা হানিফ খোকন বলেন, বারবার মেয়াদ বাড়ানোর কারণে অটোরিক্সাগুলো এখন যাত্রী ও চালকদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে। এতে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু মালিকরা তাদের স্বার্থের বিষয়টি আগে বিবেচনা করছে। তারা অটোরিক্সা প্রতিস্থাপনে সম্মত হচ্ছেন না। তাছাড়া ফের ছয় মাস মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি চালকরা ভাল দৃষ্টিতে দেখছে না। বিআরটিএ ১১ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২০০২ মডেলের প্রায় ৮ হাজার ৪২১টি (ঢাকায় ৫ হাজার ৫৬১টি) অটোরিক্সার আয়ুষ্কাল, ফিটনেস ও রুট পারমিট ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। ফলে এই অটোরিক্সাগুলো রাস্তায় চলতে পারবে না। এই জটিলতা নিরসনে অটোরিক্সাগুলো আগামী ছয় মাসের জন্য চলতে দেয়া আবশ্যক। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সবিনয় অনুরোধ জানানো হলো। নানা মহলের আপত্তির মুখে ফের মেয়াদ বাড়ানো প্রসঙ্গে বিআরটিএ সচিব শওকত আলী বলেন, নগরীতে পরিবহন সঙ্কট এমনিতেই চরমে উঠেছে। এই মুহূর্তে অটোরিক্সা বন্ধ করে দিতে গণপরিবহন সঙ্কট আরও বাড়বে। তাই অল্প সময়ের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হলো। বুয়েটের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করার কথাও জানান তিনি। এদিকে অটোরিক্সার মেয়াদ বাড়াতে কয়েক দফা ধর্মঘটের হুমকি দেয় মালিকদের সংগঠন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ মেয়াদ না বাড়াতে আন্দোলনে নামে। সর্বশেষ হুমকির প্রেক্ষিতে গত রবিবার বিআরটিএ এলেনবাড়ি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা। তারা মালিক পক্ষের বিভিন্ন দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন। এর প্রেক্ষিতে ৪৮ ঘণ্টার অটোরিক্সা ধর্মঘট স্থগিত করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, মেয়াদ বাড়ানোর আগে দেখতে হবে, যে জনসেবার উদ্দেশ্যে অটোরিক্সা নামানো হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য হাসিল হয়েছে কি না। প্রয়োজনে যাত্রীদের মধ্যে সমীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি জনসাধারণ সেবা না পায়, তবে সরকারের সুযোগ রয়েছে নিবন্ধন বাতিল করে অটোরিক্সা খাতকে কোম্পানির আওতায় আনা। আপনি সেবা পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, আমি সেবা পাইনি, এদের দৌরাত্ম্যের কাছে মানুষ জিম্মি। নৌ-সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অটোরিক্সা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা সম্ভব হয়নি। তারা ইচ্ছামতো চলে। সরকারের নিয়ম-নীতি কোন কিছুই মানে না। গণপরিবহনের স্বল্পতার কারণে এই পরিস্থিতি হয়েছে। বিআরটিএর সুপারিশ সম্পর্কে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিআরটিএ একটি বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। যার কাজ সড়কে শৃঙ্খলা ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই বিআরটিএ আইনগতভাবেই লক্কড়ঝক্কড় অটোরিক্সার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সময় দেয়ার সুপারিশ করতে পারে না। এই সুপারিশ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা। মানুষ এই সুপারিশ কখনই আশা করেনি। গত বছর নবেম্বরে ইঞ্জিন ও গ্যাস সিলিন্ডার পরিবর্তন করে অটোরিক্সার মেয়াদ ১৫ থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করার দাবি জানায় মালিক সমিতি।
×