ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিফাত কান্তি সেন

ছিনতাইয়ের শেষ কোথায়?

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

ছিনতাইয়ের শেষ কোথায়?

জান এবং মাল দুটোই যেন এখন হুমকির মুখে। ঘর থেকে বেরিয়ে আবার ঘরে ঠিকমতো পৌঁছানোটা যেন রীতিমতো ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল। রাস্তায় বেরুলে ভয়ানক এক আতঙ্কের নাম ‘ছিনতাই’। এক সময় ছবি-নাটকে ছিনতাইয়ের দৃশ্যগুলো দেখে থাকলেও হর-হামেশা এখন আমাদের চোখের সামনে দেখতে হচ্ছে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। অনেকে আবার নীরব দর্শকের ভূমিকায় তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু ছিনতাইয়ের সে দৃশ্য অবলোকন করেন। শুধু কী ‘ছিনতাই’? রীতিমতো ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়তে হয়। যেমনটা সম্প্রতি ঢাকাবাসী টের পেয়েছে। ছিনতাই করার জন্য ছিনতাইকারী ব্যাগ টান দিলে মহিলার কোলে থাকা শিশুসন্তান মাটিতে পড়ে নিহত হয়েছে। এটা যেন নতুন একটি লোমহর্ষক ঘটনার জন্ম দিয়েছে। কেউ যখন বলে ছিনতাই বেড়ে গেছে ঠিক সে সময় আমার মনে প্রশ্ন জাগে আদৌ কী ছিনতাই কমেছিল? ‘না’, ছিনতাই আগে যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে; শুধু পাল্টেছে ছিনতাইয়ের ধরন। আগে ছিনতাইয়ের ধরন ছিল কী আছে জলদি বের কর; এখন তা পাল্টে হয়েছে মাল দে সঙ্গে জানও দে। ঢাকায় তো এখন প্রকাশ্যে গুলি করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ক’দিন আগে পত্রিকার পাতায় পড়লাম, এক ব্যক্তিকে গুলি করে তার নিকট থেকে ১২ লাখ টাকা নিয়ে উধাও ছিনতাইকারী। আবার ২০১৭-এর ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তরায় চলন্ত গাড়ি থামিয়ে মা ও মেয়েকে গুলি করে ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারীরা। একসময় যখন ঢাকা যাওয়ার কথা বাড়িতে বলতাম তখন সবাই বলত সাবধানে থাকিস, পকেট সাবধান, মোবাইল, মানিব্যাগ সাবধানে রাখিস। এর একটা কারণ হচ্ছে আজ থেকে প্রায় ১৪-১৫ বছর আগে আমার বিদেশ ফেরত খালাতো ভাইকে ছিনতাইকারীরা ধরে টাকা, পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার এমনকি পরনের শার্ট-প্যান্ট খুলে নিয়ে শুধু হাফ প্যান্ট পরিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল। সে থেকে সবাই ছিনতাইকারীদের ব্যাপারে খুবই সচেতন। তাই আমাকে উপদেশ দেয়ার ব্যাপারেও কমতি নেই। কিন্তু কে শুনে কার কথা? আমি পাত্তাই দিতাম না। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটু ভীতু আমি। ছিনতাই শুধু মালামাল নয়, ছিনতাই হয় জীবনও। দেশে অনেক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে প্রতিনিয়ত। যেমন কয়েকদিন আগে চাঁদপুর কালীবাড়ি মোড় সংলগ্ন একটি বেসরকারী ব্যাংকের নিচ থেকে অভিনব কায়দায় ছিনতাইকারীর নিকট কয়েক হাজার টাকা গচ্ছা যায় একজন স্কুল শিক্ষিকার। ছিনতাইয়ের ঘটনাটি এমন ছিল যে, একজন অপরিচিত মহিলা এসে তাকে ধাক্কা দেয়। অতঃপর ওই স্কুল শিক্ষিকা তর্কে জড়িয়ে পড়েন। তর্কের এক ফাঁকে আরেকজন এসে তার ভ্যানেটিব্যাগ থেকে টাকা রাখার ব্যাগটি সরিয়ে নেয়। বাজার করতে গিয়ে তিনি দোকানিকে টাকা দিতে গেলে দেখেন তার টাকার ব্যাগটি নেই! বিষয়টি জানাজানি হলে আমি ওনাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্বরণাপন্ন হতে বলি। কিন্তু তিনি তাতে রাজি হননি। হয়ত আইনের মারপ্যাঁচে জড়াতে চান না বলে। এমন অজ¯্র ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে আমাদের প্রিয় দেশটিতে। সব ছিনতাইয়ের ঘটনা পত্রিকার পাতায় উঠে আসে না। যা আসে তা নিয়েও বড় জোর কয়েকদিন আমাদের সচেতন মহলের তৎপরতা, অতপর ভুলে যাই আমরা সে লোমহর্ষক ছিনতাইয়ের ঘটনা। ছিনতাই বন্ধের উপায় আছে। প্রথমেই ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে। ছিনতাইকারীকে ধরে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার আশপাশে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বসাতে হবে। সর্বক্ষণ কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক দ্বারা পরিচালিত করতে হবে ক্যামেরাগুলো। অযথা কেউ সেধে সেধে লাগতে আসলেও তার সঙ্গে কথা না বলে এড়িয়ে যেতে হবে। অনেকে কিন্তু আপনার আবেগকে কাজে লাগিয়ে ছিনতাই করার পরিকল্পনাটি সফল করে নিতে চাইবে। সে সময় আপনার উচিত হবে সাহায্য প্রার্থীকে বলা, ন্যাশনাল হেল্প ডেস্ক ৯৯৯ তে ফোন করে সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে বলা। ছিনতাইকারীদের ধরার ব্যাপারে পুলিশের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা। পুলিশের উচিত হবে এসব কেস আসলে গড়িমসি না করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। টহল পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো। যেসব স্পটে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে সেসব স্থানকে চিহ্নিত করে পুলিশের বিশেষ টিম দ্বারা ছিনতাইকারীদের ধরে আইনের কাঠগড়ায় সোপর্দ করা। ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর থেকে
×