ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সারোয়ার জাহান সাগর

মাদক যোগাতে ছিনতাই!

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

মাদক যোগাতে ছিনতাই!

রাজধানীতে বেপরোয়া ছিনতাইকারী ও গাড়িচোর চক্র। প্রতিদিনই নগরীর কোন না কোন এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে নিরীহ মানুষ আহত হচ্ছেন, খোয়াচ্ছেন সর্বস্ব। ভোর ও গভীর রাতে পাড়া-মহল্লায় ওত পেতে থাকে ছিনতাইকারীরা। দিনের বেলায় নির্ধারিত স্পটে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। গত তিন মাসে রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় কমপক্ষে দেড় শতাধিক ছিনতাই এবং ২৩টি গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ে ছিনতাইকারীদের হাতে আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ১৩৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। চলতি মাসের ৫ তারিখ সন্ধ্যায় মতিঝিল থানা এলাকার নটরডেম কলেজের সামনের রাস্তায় রিক্সা আরোহী মমতাজ বেগমের নগদ ৪ হাজার টাকা, দুইটি মোবাইল ফোন সেট এবং একটি গলার স্বর্ণের চেন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে তিনজন ছিনতাইকারী। মমতাজ বেগম শাপলা চত্বর থেকে রিক্সাযোগে শহীদবাগে তার বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় নটরডেম কলেজের সামনে রিক্সার গতি রোধ করে অস্ত্রের মুখে মমতাজ বেগমকে ছিনতাইকারীরা জিম্মি করে সব কিছু ছিনিয়ে নেয়। গত ৬ জুন রাত ৮টার দিকে মতিঝিলের দিলকুশা এলাকায় মোটরসাইকেলে দুইজন ছিনতাইকারী এসে পথচারী আমিনুলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুইটি মোবাইল ফোন এবং তার হাতব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। আমিনুলের ব্যাগে ১৫ হাজার টাকা ছিল, টাকা ছিনিয়ে নেয়ার সময় বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে ছিনতাইকারীরা ফাঁকা গুলি করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ও আমিনুল জানান। এর আগে ওইদিন ভোর সাড়ে ৪টায় আরামবাগ এলাকায় চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ির কাছ থেকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন সেট এবং হাত ঘড়ি ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। ছিনতাইয়ের শিকার রমজান আলী জানিয়েছেন, তিনি এস আলম পরিবহনে চট্টগ্রাম থেকে এসে আরামবাগ নামেন ভোরে। পরে সিএনজিযোগে শাজাহানপুর যাওয়ার পথে তিনি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। তার আত্মীয় আজাদ হোসেন জানান, আরামবাগ থেকে সিএনজি নিয়ে শাজাহানপুর যাওয়ার পথে ৫ মিনিট পরেই চালক হঠাৎ সিএনজি থামিয়ে দিলে তিনি ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে আহত করে রাস্তায় ফেলে যায়। পরবর্তীতে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যায়। গত ৫ জুন সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে মতিঝিল এলাকায় বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের সামনে থেকে একটি প্রাইভেটকার নিয়ে যায় গাড়ি চোরেরা। গাড়িচালক আবুল হোসেন জানান, তিনি প্রাইভেটকারটি তালাবদ্ধ করে ওই স্থানে রেখে প্রস্রাব করতে যান। ৭-৮ মিনিট পরে ফিরে এসে দেখেন তার গাড়ি নেই। পরে এ ব্যাপারে ওইদিন রাত ১২টায় থানায় মামলা করেন। এর আগে দুপুর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত একাধিকবার থানায় গিয়েও তিনি মামলা রেকর্ড করাতে পারেননি। পরে একজন সাংবাদিক থানায় ওসিকে ফোন করার পর রাত ১২টায় মামলা রেকর্ড করা হয়। আবুল হোসেন আরও জানান, ওইদিন রাত ২টায় মুগদা থানা পুলিশ মুগদা থানা এলাকা থেকে তার গাড়িটিসহ আরও একটি গাড়ি উদ্ধার করেন। তবে গাড়ির তিনটি চাকা চোরেরা খুলে নিয়ে গেছে। ছিনতাইয়ের শিকার অধিকাংশরা বলছেন, নানা কারণে তারা থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে যান না। যারা থানায় যান তাদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ অনেক সময় দেখা যায় মামলা নিচ্ছে না, সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ছাড়া পুলিশও মামলা নিতে পারে না। আমি মনে করি ছিনতাইয়ের পেছনে একটাই কারণ মাদক। মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে তরুণ সমাজ এসবে লিপ্ত হচ্ছে। মাদক যদি সমাজ থেকে পুরোপুরি নির্মূল করা যায় তাহলে ছিনতাই অনেকাংশে কমবে বলে মনে হয়। গণবিশ্ববিদ্যালয়, সাভার থেকে
×