ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

থার্টিফার্স্ট নাইটে নাশকতার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

থার্টিফার্স্ট নাইটে নাশকতার আশঙ্কা

শংকর কুমার দে ॥ থার্টিফার্স্ট নাইটে সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে মাঠে নামছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে র‌্যাব, গোয়েন্দা, সিআইডি, এসবি, এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থা। দেশব্যাপী জঙ্গী সংগঠনগুলোর যে কোন ধরনের নাশকতা ঘটাতে পারে এই ধরনের আশঙ্কা এড়াতে তৎপর রয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। যদিও নাশকতার আশঙ্কা নেই- সাফ জানিয়ে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, থার্টি ফার্স্ট নাইট অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে হৈ-হুল্লোরের ভিড়ে জঙ্গীরা নাশকতামূলক তৎপরতা চালাতে পারে। এ রকম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সারাদেশে উম্মুক্ত স্থানে সব ধরনের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জঙ্গী সংগঠন হিসেবে জেএমবির নতুন করে মাথাচাড়া দেয়া এবং সম্প্রতি তাদের কয়েকটি আস্তানা খুঁজে পাওয়া নিয়ে পুলিশের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দেয়। জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারে যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত-শিবির গোষ্ঠী। থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে উৎফুল্ল আনন্দিত মানুষ জনের আনন্দ বিনোদনের ভিড়ে নাশকতা চালিয়ে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র ও নীল নক্সার ছক কষা হচ্ছে এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। থার্টি ফাস্ট নাইট আসার আগে থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়েছে। অবশ্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দেশব্যাপী কিছু অভিযান সফলভাবে সমাপ্ত হওয়ায় সবার মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। গোয়েন্দা তথ্য মতে, গত বছর থার্টি ফার্স্ট নাইটে রাজধানীর বেশ কয়েকটি জায়গায় নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল জেএমবি। এজন্য তারা মিরপুরের ওই বাসায় বিপুল পরিমাণ বোমা ও প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক মজুদ করেছিল। গোয়েন্দারা সেটা গুড়িয়ে দিতে সক্ষম হলেও যেসব জায়গায় নাশকতা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সেসব জায়গায় সতর্ক রয়েছে। রাজধানীতে সম্ভাব্য নাশকতার জায়গার মধ্যে রয়েছে কামরাঙ্গিরচর, খিলগাঁও, পল্টন, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, বাড্ডা এবং ফার্মগেট। এসব এলাকায় গত কয়েকদিন আগেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এই ধরনের তথ্য থাকার কথা জানা গেছে। থার্টি ফাস্ট নাইটে রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা ছিল জেএমবির। এজন্য তারা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল। মিরপুরের বাসায় অপারেশনের আগের রাতে একজন জঙ্গী গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ায় বোমা তৈরির ওই আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে দেশের আরও কোথায় কোথায় এ রকম আস্তানা রয়েছে সেসবও জানা যায়। তাদের তথ্যমতে চট্টগ্রামে বোমা তৈরির আস্তানা বের করা হয়। গাজীপুরেও বের করা হয়। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীর যেসব জায়গায় সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা ছিল সেসব জায়গায় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সাদা পোশাকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনসহ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। জেএমবির জঙ্গীরা ধরা পড়লেও ওই সব জায়গায় ধরা না পড়ায় জঙ্গীরা নাশকতামূলক কাজ করতে পারে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। রাজধানী ঢাকার বাইরে রাজশাহী, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেটসহ বিভিন্নস্থানে বিশেষ করে যেসব স্থানে জঙ্গী গোষ্ঠী, জামায়াত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর প্রাধান্য আছে সেসব জেলা ও থানা এলাকায় বিশেষ নজরদারি ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের কাছে স্বনামে-বেনামে ইতোমধ্যেই অনেক এলাকা থেকে নাশকতার আশঙ্কা ব্যক্ত করে উড়ো চিঠিও দেয়া হয়েছে। এসব চিঠির সত্যতা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের উড়ো চিঠির মধ্যে সাতক্ষীরা শহরে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে কয়েকটি হোটেল, সরকারী প্রতিষ্ঠান উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরার জঙ্গী গোষ্ঠীর সঙ্গে জামায়াত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধীর কিছু সশস্র ব্যক্তি হামলা ও নাশকতা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন ইউনিটে অভিযোগ জানানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, গত বছর রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্যসহ জেএমবির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মোঃ রিয়াজ ওরফে রাকিব, মোঃ আবুবিন সাঈম ওরফে বাপ্পি ওরফে অপু, কাজী আব্দুলাহ আল ওসমান ওরফে আহসান, মোঃ সোহাগ, মোঃ মামুন ওরফে হিমেল। থার্টি ফার্স্ট নাইটে রাজধানীতে তাদের হামলার পরিকল্পনা ছিল বলে তখন জানিয়েছিলেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গ্রেফতারকৃতরা পুরাতন জেএমবি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। তারা রাজধানীতে থার্টি ফার্স্ট নাইটে নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে বিস্ফোরক সংগ্রহ করেছিল। গত বছরের মতো এ বছর যাতে জঙ্গী সংগঠনগুলো, জামায়াত-শিবির, উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী, যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সহযোগীরা যাতে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পরে সেজন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ইংরেজি নববর্ষ উদ্যাপনের নামে থার্টি ফার্স্ট নাইটে যাতে কোন অরাজক পরিস্থিতি ও নাশকতার সৃষ্টি না হয় সেজন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নগরীতে সন্ধ্যার পর বারগুলোতেও কোন মাদক বেচাকেনা করা যাবে না এবং অবৈধ মাদক বেচাকেনার বিরুদ্ধেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও গুলশান এলাকায় অনুষ্ঠান করার নামে কেউ যাতে কোন অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পোশাকে ও সাদা পোশাকে সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে। রাজধানীর রমনার ইস্কাটন গার্ডেন রোডে পুলিশ কনভেনশন হলে ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন শূটিং ক্লাব’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন তিনি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও দেশের শান্তি শৃঙ্খলার কথা চিন্তা করেই উন্মুক্ত স্থান বা বাইরে কোন অনুষ্ঠান করতে দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে এর আগে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনুষ্ঠিত সভায় আমরা কিছু বিধি নিষেধ জারি করেছি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
×