ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৬ নারী ধর্ষণ

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আরিফের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা আরিফের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ২৭ ডিসেম্বর ॥ ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদার ৬ নারীকে ধর্ষণের অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগে ছড়িয়ে দেয়ার দায়ে ভুক্তভোগী নারীর দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর বুধবার সকালে তাকে শরীয়তপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। আরিফ হাওলাদার আদালতে বিচারকের নিকট ভিডিও ছড়ানোর কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ খবর নিশ্চিত করেছেন। ভেদরগঞ্জ থানা ও কোর্ট সূত্র জানায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদার একই এলাকায় গোপন ক্যামেরায় ৬ নারীর অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে। ওই ভিডিও সে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগী নারীদের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে। এরপর আরিফ হাওলাদার ভুক্তভোগী ওই নারীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। এই কুকর্ম করেই সে ক্ষ্যান্ত হয়নি। আরিফ হোসেন গত ১৫ অক্টোবর ৬ নারীর সঙ্গে তার অশ্লীল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এ খবর এলাকায় জানাজানি হলে ক্ষতিগস্ত নারীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এদের মধ্যে কেউ কেউ স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছে। আবার কেউবা লোকলজ্জার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়ে নিজেকে লুকিয়ে রেখে বসবাস করছেন। একপর্যায়ে ওই ক্ষতিগ্রস্ত ছয় নারীর আপত্তিকর অশ্লীল ভিডিও’র সঙ্গে নারায়ণপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজাহিদ মাঝি ও সাধারণ সম্পাদক আবুল মাদবরের ছবিও মোবাইলের মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়ানো হয়েছিল। নারায়ণপুর ইউনিয়নের ইকরকান্দি গ্রামের আমিনুল হক মাদবরের ছেলে রাজিব মাদবরের ফেসবুক থেকে এ সকল ভিডিও ও ছবি পোস্ট করে ছড়িয়ে দেয়। যদিও রাজিব মাদবর বর্তমানে মালয়েশিয়া প্রবাসী। ১০ নবেম্বর সন্ধ্যায় সাইফুল ইসলাম নামের এক যুবকের আইডি থেকে প্রথমে ৬ নারীর সঙ্গে আরিফের আপত্তিকর ছবি ছড়ানো হয়। এরপর ওই দিন রাত ৮ট ৪০ মিনিটে ও রাত ৮টা ৪২ মিনিটে রাজিব মাদবরের আইডি থেকে পর পর ২টি ভিডিও আপলোড করা হয়। এ সকল অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মহসিন মাদবর ও যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুজ্জামান যৌথ স্বাক্ষরে এক বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত নারায়ণপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদারকে গত ১১ নবেম্বর দলীয় সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে। এরপর নারায়ণপুর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত নারী আঃ বারেক রাঢ়ির স্ত্রী সুফিয়া ওরফে আছিয়া খাতুন বাদী হয়ে ১১ নবেম্বর সন্ধ্যায় আরিফ হাওলাদারের বিরুদ্ধে ভেদরগঞ্জ থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। মামলা দায়ের করার দেড় মাস পরে অবশেষে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভেদরগঞ্জ থানার পুলিশ অভিযুক্ত আরিফ হোসেন হাওলাদারকে গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের সাইক্কা ব্রিজের নিকট জয়ন্তিকা নদী থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রেফতার করেছে। বুধবার সকালে গ্রেফতারকৃত আরিফ হোসেন হাওলাদারকে শরীয়তপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে। আটককৃত আরিফ আদালতের বিচারক অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুজাহিদুল ইসলামের নিকট সামাজিক যোগাযোগের কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারামতে জবানবন্দী দেয়। আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। তাকে গ্রেফতার করায় এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে।
×