ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আদালতে বেগম জিয়ার আইনজীবী

আমরা যাই বলি না কেন, প্রমাণে যাই থাকুকএটা উদ্দেশ্যপূর্ণ মামলা

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

আমরা যাই বলি না কেন, প্রমাণে যাই থাকুকএটা উদ্দেশ্যপূর্ণ মামলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পক্ষে চতুর্থ দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছেন তার আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান। যুক্তি উপস্থাপনে আদালতে তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপার্সনের জীবনে এটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছেন। তাই এ মামলা থেকে তার খালাস চাই।’ ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মোঃ আখতারুজ্জামান বকশীবাজারের কারা অধিদফতরের মাঠে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে বসে গত ২০ ডিসেম্বর যুক্তিতর্কের শুনানি শুরুর পর পাঁচ কার্যদিবসের চারদিনই খালেদার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন এই আইনজীবী। বুধবার যুক্তিতর্ক শুনানির পঞ্চম দিনে দুপুর পেরিয়ে আইনজীবী রেজ্জাক খান তার যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। পরে বিএনপি নেত্রীর পক্ষে নতুন করে যুক্তি তুলে ধরা শুরু করেন তার আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। বুধবার যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক বৃহস্পতিবারও খালেদা জিয়ার যুক্তি উপস্থাপনের সময় রেখেছেন। এর আগে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন রেজ্জাক খান। মাঝে ১৫ মিনিটের বিরতি দিয়ে দুপুর পৌনে দুইটা পর্যন্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তিনি। খালেদা জিয়ার পক্ষে তার যুক্তিতর্ক শেষ বলে আদালতকে জানিয়ে মামলা থেকে বিএনপি নেত্রীকে খালাস দেয়ার দাবি জানান রেজ্জাক খান। চার দিন নিজের যুক্তি তুলে ধরে শেষে এসে তিনি আদালতকে বলেন, ‘এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমাণ করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাকে খালাস দেয়ার দাবি জানাই।’ এদিকে বিএনপি নেত্রীর পক্ষে তার আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রথম বারের মতো যুক্তিতর্ক শুরু করলেও দিনের শুনানি শেষ হওয়ার আগে মাত্র ১৫ মিনিট সময় পান তিনি। বিচারক বৃহস্পতিবারও তার যুক্তি উপস্থাপনের সময় রেখেছেন। ১৫ মিনিটের বক্তব্যে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আমরা যাই বলি না কেন, এই মামলার সাক্ষী প্রমাণে যাই থাকুক না কেন, বলতে হবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা এবং এই মামলার উদ্দেশ্য হল যেকোনভাবেই বলতে হবে- এটাই চোর, আমাদেরকে চোর বলতে হবে।’ আদালতের দিনের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা যায় কোন বিষয়েই খালেদা জিয়ার বিপক্ষে বলা হয়নি। তিনি যে জড়িত ছিলেন না, সেটাই বরং প্রমাণিত হয়। তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ওই লেনদেনের সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কোন সম্পর্ক নেই। এটা প্রাইভেট ট্রাস্ট। রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য, বেগম জিয়ার চরিত্র হননের জন্য এবং তাকে জনগণের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য দূরভিসন্ধিমূলকভাবে এই মামলা দায়ের করা হয়।’ এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে আসা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে মোট সাত দিন বক্তব্য দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। গত ৫ ডিসেম্বর তার বক্তব্য শেষ হলে বিচারক যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ঠিক করেন। যুক্তিতর্ক শুনানির শুরুর দিন ২০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। পরের কার্যদিবস থেকে আসামিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরা শুরু হয়। মামলার প্রধান আসামি খালেদার পক্ষে আইনজীবী রেজ্জাক খান ও খন্দকার মাহবুব হোসেন ছাড়াও তার আরও দুই আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের যুক্তি উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। পঞ্চম দিনে মামলার প্রধান আসামির এক আইনজীবীর যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর দুদকের আইনজীবী কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা বলছে খালেদা জিয়া কোন অন্যায় করেনি। আমরা বলছি প্রধানমন্ত্রীর যে দায়িত্ব, সাংবিধানিকভাবে অর্থ-সম্পদ সব কিছুর ব্যাপারে দায়-দায়িত্ব তার। অর্থ যেটা এসেছিল- তা দুইভাগে ভাগ করে এক ভাগ তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানকে, আরেকভাগ তারেক রহমানকে দিয়েছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, তারা বলছে (খালেদা জিয়ার পক্ষ) মোস্তাফিজুর রহমান বা তার সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে কেন মামলা হয়নি। এসবের জবাব আমরা দেব। মোস্তাফিজুরর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করা না করা প্রসিকিউশনের ব্যাপার। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। খালেদা জিয়া, সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ এ মামলায় জামিনে আছেন। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান গত নয় বছর ধরে দেশের বাইরে, তার বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এছাড়া কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। মামলার বিচার শুরুর প্রথম থেকেই বার বার শুনানিতে অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া। অনুপস্থিতির কারণে একাধিকবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছেন আদালত। নানা অজুহাতে অসংখ্যবার উচ্চ আদালতেও গিয়েছেন। তার এসব কর্মকান্ড-কে বিচার বিলম্বিত করার অপচেষ্টা বলেই মনে করেন অনেকে।
×