ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চন্দ্রাকৃতির চর বিজয়

সাগরে পাখির কলতান আছড়ে পড়ছে বিশাল ঢেউ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

সাগরে পাখির কলতান আছড়ে পড়ছে বিশাল ঢেউ

মেজবাহউদ্দিন মাননু চারদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু সাগরের অথৈ জলরাশি। তারই মাঝখানে নয়নাভিরাম বিশাল চর। চারদিকে সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে অনবরত। চরটি চন্দ্রাকৃতির। পশ্চিম দিকটা হাজারো পাখির কলতানে মুখরিত। আর গোটা চরটিতে লাল কাঁকড়ার দৌড়াদৌড়ির এক স্মৃতিময় মনকাড়া সুন্দরের দৃশ্য। আবার মানুষের পদচারণায় মুহূর্তেই কাঁকড়াদের গর্তে লুকানো। যেন না দেখলে বোঝানো যায় না। আনুমানিক দেড় কিলোমিটার প্রস্থ এবং তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এ চরটি। প্রায় ছয় বর্গকিলোমিটার আয়তন। রয়েছে সংযুক্ত ডুবোচর। পর্যটকের পদচারণাও শুরু হয়েছে। কুয়াকাটা থেকে ১৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে এ চরটি বিজয়ের মাসে নজড়ে আসে কুয়াকাটার একদল প্রকৃতিপ্রেমিকের। তাই তারা নামকরণ করেছেন চর বিজয়। কেউ বলছেন পায়রার চর। কারণ পায়রা সমুদ্র বন্দরে সাগর থেকে প্রবেশদ্বারের দক্ষিণ দিকটায় এই চরের অবস্থান। মঙ্গলবার এ চরটির নিয়ন্ত্রণ নেয় পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসন। সরকারের পক্ষে চরের মালিকানার সাইনবোর্ড লটকানো হয়। এ সময় ওখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলা প্রশাসক ড. মোঃ মাছুমুর রহমান। এ সময় পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র, উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব তালুকদার, কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তানভীর রহমান, কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা, পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী শামসুর রহমান, কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মেজবাহউদ্দিন মাননুসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় একটি ম্যানগ্রোভ জাতীয় গোল গাছের চারা রোপণের মধ্য দিয়ে ওই চরে বনায়নের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ইতোমধ্যে পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে গেছে এই চরটি। যেন এক নতুন দিগন্ত সূচিত হলো। চরটির আনুষ্ঠানিক কোন নামকরণ করা হয়নি বলে জেলা প্রশাসক জানান। তিনি বলেন, প্রকৃতির দান এ চরটিতে বিপুল র্ টনসহ বনায়ন করার জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে পরিবেশ প্রতিবেশসহ সকল বৈচিত্র্য অক্ষুণœ রেখে চরটির উন্নয়ন সাধিত হবে। পাখির অভয়ারণ্য রক্ষায় সচেষ্ট থাকতে হবে। তবে সবার আগে বনায়নের কাজ করার কথা জানালেন তিনি। ইতোমধ্যে চরটিতে কুয়াকাটা থেকে পর্যটকরা যাচ্ছেন। দেখছেন সাগরের মাঝখানে জেগে ওঠা এই চরটির সৌন্দর্য। কয়েকজন জেলে ওখানে মাছ ধরতে গিয়ে শুকনো মৌসুমে অবস্থান করছেন। জেলেদের কাছ থেকে জানা গেছে, মূলত এটি সাগরের পানি প্রবাহের প্রবল স্রোতধারার কাছে অবস্থিত। এ স্রোতধারার মুখেই জেলেরা ইলিশ ধরার জন্য জাল পেতে থাকেন। স্থানীয় জেলেরা পানির প্রবল এ স্রোতধারার কারণে এটাকে ‘হাইরের চর’ বলে থাকেন। হাইর হলো জেলেদের মাছ ধরার জন্য নির্ধারিত সীমানা। প্রকৃতিপ্রেমিক ও ভ্রমণপিয়াসী আরিফুর রহমানসহ অতিসম্প্রতি একদল পর্যটক বিজয়ের এই মাসে চরটিতে দর্শনে গিয়ে চরবিজয় নামকরণ করেন। পরিবেশবাদীদের অভিমত, এ চরে নানা ধরনের পাখি, লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ রয়েছে। এসব যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, এ চরটিতে পর্যটকদের অতি সাবধানে বিচরণ করতে হবে। কারণ পরিবেশ-প্রতিবেশ অতিথি পাখির অভয়ারণ্য, লাল কাঁকড়ার বিচরণ কোন কিছুর ক্ষতি করা যাবে না। তবে জেলেদের শঙ্কা ওই চরটি দিনের বেলা ছাড়া ভ্রমণ করা ঠিক না। কারণ নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে। চরটির আশপাশে জলদস্যুরা রাতে কিংবা যে কোন সময় বহুবার জেলে ট্রলারে হামলা চালিয়ে লুটপাট চালিয়েছে। এ কারণে নিরাপত্তার বিষয়টি আগে নিশ্চিত করে পর্যটকের বিচরণ করার অনুমতি দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এ চরটি ঘিরে কুয়াকাটা-গঙ্গামতির মতো বিরাট এক সম্ভাবনাময় গড়ে উঠছে পর্যটন কেন্দ্রিক। আর বাড়ল সমুদ্রের মধ্যে বাংলাদেশের চর এলাকা।
×