ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভাঙ্গুড়ায় শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষক ও নাগরিক ঐক্য গঠিত

প্রকাশিত: ০০:৪৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

ভাঙ্গুড়ায় শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষক ও নাগরিক ঐক্য গঠিত

সংবাদদাতা, ভাঙ্গুড়া, পাবনা ॥ ভাঙ্গুড়ায় সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নামে-বেনামে অনুমোদহীনভাবে মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছে প্রায় এক ডজন প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদের উপজেলার বিভিন্ন এমপিও ভুক্ত বিদ্যালয়ে কাগজ-কলমে ভর্তি দেখিয়ে বই সংগ্রহ সহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন। লোভনীয় অফার এবং চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভর্তি করছেন এসব প্রতিষ্ঠানে। এতে অভিভাবকদের শ্রেণি ভেদে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে মাসিক ৭০০ থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত। কোন প্রকার সরকারি বিধি নিষেধ না মেনে প্রতি বছরই বাড়ানো হয় শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন। বিপুল অংকের আয়কৃত অর্থ অবশ্য প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও এমপিও ভুক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে ভাগাভাগি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান দুর্বল হওয়ার কারণেই অভিভাবকরা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মুখ সরিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অবশ্য অভিভাবকদের এ অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের জিম্মি করে তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে বাধ্য করছেন। অধিকাংশ পরিচালকই এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইংরেজী ও গণিতের শিক্ষক হওয়ায় তাদের চাপে শিক্ষার্থীরা ঐসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয় বলে জানান প্রধান শিক্ষকরা। . তবে এবছর অভিভাবকদের চাপের মুখে প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধে উপজেলার এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত সমিতি নানামূখি উদ্যোগ নিয়েছেন। আর এ উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন এলাকার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। এরই লক্ষ্যে বুধবার সকাল ১১ টায় ভাঙ্গুড়া মডেল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয়ে নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার ২১ এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা বলেন- শিক্ষাকে পুঁজি করে কোনভাবে যেন কতিপয় অসাধু শিক্ষিত ব্যক্তিরা অবৈধ পন্থায় অর্থ আদায়ের হাতিয়ার বানাতে না পারে সে দিকে সুশীল সমাজকে নজর রাখতে হবে। বর্তমান সরকার শিক্ষাকে মানুষের দোর গোড়ায় যেখানে পৌছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্ঠা করছে সেখানে কতিপয় শিক্ষকরা এই মহান পেশাকে কুলষিত করার ষড়যন্ত্র করছে। প্রশাসন কোচিং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন অভিযান পরিচালনা না করায় ক্রমেই তাদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। এতে এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছরই শিক্ষার্থী উপস্থিতির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এসময় অবৈধ কোচিং সেন্টারসহ সকল অনুমোদনহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই সরবরাহ সহ সকল সুবিধা বন্ধ করতে বিবি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সকলের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত রেজুলেশন করা হয়। সভায় অবৈধ প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য আগামী সপ্তাহে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্মারক লিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলার পৌর সদরে সরকারি অনুমোদনহীন প্রায় এক ডজন প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারা কাগজপত্র জালীয়াতি করে ঊওওঘ নম্বর দেখিয়ে অভিভাবকদের প্রতারিত করছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা সুলতানা বলেন, ‘আমরা সব সময় শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি এত কমে গেছে জানতাম না। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
×