ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

নান্দনিকের ৪০ বছর পূর্তিতে চারদিনের নাট্যোৎসব

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

নান্দনিকের ৪০ বছর পূর্তিতে চারদিনের নাট্যোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে স্বাধীনতা পরবর্তীতে নাট্যচর্চায় এগিয়ে আসে একঝাঁক তরুণ। সেই প্রচেষ্টার সূত্র ধরে ১৯৭৭ সালে গড়ে ওঠে নাট্যদল নান্দনিক নাট্য সম্প্রদায়। সময়ের স্রোতধারায় নাট্যদলটি পদার্পণ করল প্রতিষ্ঠার ৪০ বছরে। আর এই সাফল্যের উদ্্যাপনে মঙ্গলবার থেকে দলটির আয়োজনে শুরু হলো চার দিনের নাট্যোৎসব। নাটকের নান্দনিকতায় উদ্ভাসিত হোক জীবনবোধ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে এ উৎসবের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, অভিনেত্রী ও নির্দেশক লাকী ইনাম, নাট্যকার ও নির্দেশক গোলাম সারোয়ার, নির্দেশক ও সংগঠক দেবপ্রসাদ দেবনাথ এবং নাট্য গবেষক অধ্যাপক আব্দুস সেলিম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নান্দনিক নাট্য সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক আ মা ম হাসানুজ্জামান। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে মঞ্চস্থ হয় নাটগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের ১৬তম প্রযোজনা মহাবিদ্রোহ ও সম্রাট বাহাদুর শাহ। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশবিরোধী ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে আবর্তিত হয়েছে নাটকটির কাহিনী। রাহমান চৌধুরীর রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন গোলাম সারোয়ার ও আ মা ম হাসানুজ্জামান। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন আ মা ম হাসানুজ্জামান, মাহিন রহমান, সাদ্দাম হোসেন সাজু, আহাম্মদ আয়াতুল্লাহ নয়ন, মোঃ উাহাভ, বদরুদ্দোজা, মনজুর এলাহী খান, খালেদ হোসেন, নিলুফার ওয়াহিদ পাপড়ি, মুন্নি, মৌসুমি আক্তার শোভা প্রমুখ। আগামী ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে চলবে এ উৎসব। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অনুষ্ঠিত হবে নাটকের প্রদর্শনী। আজ বুধবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে মঞ্চস্থ হবে নাট্যমঞ্চ সিলেটের নাটক ‘বধ্যভূমিতে শেষদৃশ্য’। গণগ্রন্থাগারে ঐতিহ্য বর্ষশেষ বই উৎসব ॥ বাংলাদেশের অন্যতম সেরা সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্যপূর্ণ করেছে প্রতিষ্ঠার ১৭টি বছর। দীর্ঘ এই পথে ঐতিহ্য প্রকাশ করেছে ১১০০টির বেশি বই। প্রকাশনার ১৭ বছরে ঐতিহ্য শুধু পাঠকদের জন্য সুনির্বাচিত বই-ই প্রকাশ করেনি, বই সহজলভ্য ও বিশেষ মূল্যছাড়ে পাঠকদের হাতে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রতি বছরই আয়োজন করে আসছে বই উৎসব। সেই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার থেকে শাহবাগের সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষে শুরু হলো পাঁচ দিনের বিশেষ মূল্যছাড়ের ‘ঐতিহ্য বর্ষশেষ বই উৎসব ২০১৭’। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান উৎসবটি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলবে। উৎসবে পাঠকরা ঐতিহ্য প্রকাশিত সহস্রাধিক বই থেকে কাব্যগ্রন্থ ৫০% ছাড়ে, উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ ৪৫% ছাড়ে ও রচনাবলি ছাড়া অন্যান্য বই ৪০% ছাড়ে ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে ‘মজুদ থাকা সাপেক্ষে’ কিনতে পারবেন। কাল থেকে উদীচীর জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন ॥ ‘দ্রোহে বিদ্রোহে বিপ্লবে, গড়ি বিশ্ব সপ্তসুরে’ আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত জাতীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনে সারাদেশ থেকে উদীচীর শিল্পী-কর্মীরা নিজ নিজ অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ভা-ার নিয়ে অংশ নেবেন। থাকবে আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী নানা পরিবেশনা। সেখান থেকে নতুন প্রেরণা সঞ্চয় করে নতুন উদ্যোগে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত হবে উদীচী। মঙ্গলবার সকালে তোপখানা রোডের উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য জানানো হয়। জাদুঘরে মসলিনের পুনরুজ্জীবন বিষয়ক সেমিনার ॥ বিশেষ প্রক্রিয়া আবারও মসলিনকে ফিরিয়ে এনেছে দৃক। ফলে মসলিনের পুরনো ঐতিহ্য ফিরে আসার নতুন স্বপ্ন দেখা যাচ্ছে। মসলিনের সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক, সরকারী, বেসরকারী ও উন্নয়ন সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এর পাশাপাশি তাঁতী, চাষী, দক্ষ খাঁটুনির কাজকে গবেষণার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে। এই খাতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে দেশের গৌরবের এই ইতিহাস বাস্তবতার নিরিখে সবাই আবার দেখতে পাবে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন মসলিন নিয়ে কাজ করা গবেষকেরা নীতিনির্ধারক ও নীতিনির্ধারকেরা। ‘মসলিন পুনরুজ্জীবন : সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় জাদুঘর। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহঃ ইফতিখার ও বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সদস্য মিজানুর রহমান। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন লোকশিল্প গবেষক চন্দ্রশেখর সাহা, হস্তশিল্প গবেষক রুবী গজনবী এবং তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. মোঃ ফরিদ উদ্দিন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৃক পিকচার লাইব্রেরি লিমিটেডের (বেঙ্গল মসলিন) নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, অন্যান্য অনেক জায়গায় মসলিন উৎপাদিত হলেও, বাংলার মসলিনের চাহিদা ছিল বিশ্বব্যাপী। মসলিনের সুতা তৈরির জন্য যে তুলা গাছটি সব স্থানে পাওয়া যায় না। সময়ের আবর্তে মসলিন শুধু হারায়নি সঙ্গে এর পেছনের গল্পটাও হারিয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান হলো গত ৮০ বছরেও এখানে ফুটি কার্পাস গাছ পাওয়া যায়নি। তবে শীতলক্ষ্মায় করা দৃকের গবেষণায় এই গাছের সঙ্গে চারশ’ বছরের আগের পাওয়া নমুনা গাছের ডিএনএন পরীক্ষার মিল পাওয়া গিয়েছে। তিনি আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ইতোমধ্যেই মসলিনের কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে গত দুই বছর হলো। তারা বাণিজ্যিকভাবে মসলিনের জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন (জিআই) স্বত্ব পেতে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি উদ্যোগ বা এই খাত পুনরুদ্ধারে বিনিয়োগ না করে তাহলে এই মসলিন বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মুশতাক হাসান মুহ ইফতিখার বলেন, সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে কাজ হলেও, কিন্তু সমন্বয় না থাকলে কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে বাজার দখলের চেষ্টা করতে হবে। জামদানীর মত মসলিনও এদেশের পণ্য। এর দ্রুত পুনরুজ্জীবন করতে যথাম্ভব সহায়তা শিল্প মন্ত্রণালয় প্রদান করবে বলেও তিনি আশ^াস দেন। লুৎফুর রহমান বলেন, মসলিনের গবেষণার কাজটির জন্য দরকার দক্ষ লোক ও সমন্বয়ের। চারশ’ বছরের পুরনো একটি ঐতিহ্য এই মসলিন। সকলে একত্রে কাজ করলে দুই বছরের মধ্যে এই ঐতিহাসিক পণ্য পুনরুজ্জীবীত করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। মিজানুর রহমান বলেন, মসলিন এদেশের গর্বের ইতিহাস যা ইংরেজদের বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে বিলীন হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর নিজের ও এই শিল্প পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে। সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করলে সাফল্য আসবে। এর জন্য সরকারী প্রচেষ্টা আরও অনেক বাড়াতে হবে। তিনি আর্জি রাখেন কারও কাছে যদি সত্যিকার মসলিনের কোন সন্ধান পেলে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। চন্দ্রশেখর সাহা বলেন, মসলিন সুতার কাপড় হলেও অত্যন্ত পাতলা ও সুক্ষè। সুতা তৈরি করা সম্ভব হলে কাপড় তৈরি অসম্ভব নয়। এর জন্য ভাল মানের কারুশিল্পী খুঁজে বের করতে হবে। সেসব অনুসন্ধান করতে হবে। আমাদের পরিতাপের বিষয় হলো দেশের কারুশিল্পীরা কখনোই তাদের দক্ষতা, ভাবনা, অভিজ্ঞতা লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করে যায়নি বা লিপিবদ্ধ করার মনেও করেনি। তবে বিদেশী লেখকদের পর্যবেক্ষণে অনেক লেখা পাওয়া যায়। রুবী গজনবী বলেন, মসলিন শুধু বাংলাদেশেই তৈরি করা সম্ভব। ব্রিটিশ আমলে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মসলিন তৈরির চেষ্টা করেছিল, যা ব্যর্থ হয়। ব্রিটিশরা পুটি কার্পাস গাছেন বীজ পাওয়ার পরও এত দূর আগাতে পারেনি যতটা পেরেছে দৃক। এত বছর পরে যে সম্ভাবনা এসেছে তাতে সরকারের সহযোগিতা দরকার। কারণ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেখানে এটাকে শিল্প করার উদ্যোগ নিয়েছে আজ দুই বছর হলো।
×