ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বছরে প্রত্যাশা পূরণে বদ্ধপরিকর সৌম্য

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

নতুন বছরে প্রত্যাশা পূরণে বদ্ধপরিকর সৌম্য

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকারের কাছ থেকে বিশেষ কিছু চাওয়া থাকে। কিন্তু সেই চাওয়া ইদানীং পূরণ হচ্ছে না। এরপরও কিন্তু ২০১৬ সালে সৌম্য খারাপ করেননি। হয়তো স্কোরগুলো বড় হয়নি। যে স্কোরগুলো চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো। তাই সৌম্য মনে করছেন, নতুন বছরে সবার যে চাওয়া তা পূরণ করার চেষ্টা করবেন। এ বছর সৌম্য টেস্টে ৭টি ম্যাচ খেলেছেন। ৩২.২১ গড়ে ৪৫১ রান করেছেন। রান তোলার দিক থেকে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে চতুর্থ স্থানে আছেন। মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের পরেই আছেন সৌম্য। খুবই ভাল নৈপুণ্য। ১৪ ইনিংস ব্যাট করে চারটি ইনিংসে হাফসেঞ্চুরির বেশি রানও করেছেন। কিন্তু একটি ইনিংসে, এ বছরের শুরুতেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৬ রানের ইনিংস যে খেলেছেন সেটিই সর্বোচ্চ ইনিংস হয়ে আছে। ইনিংসগুলো সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে পারেননি। তাই ইনিংসগুলোর কথা হয়তো কারও মনেও নেই। সৌম্য তাই ব্যর্থ ব্যাটসম্যানের তালিকাতেই পড়ে আছেন। আবার ওয়ানডেতে আসা যাক। ১২ ম্যাচের মধ্যে ১১ ম্যাচে ব্যাট করে ২৪.৩০ গড়ে ২৪৩ রান করেছেন। দুটি ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করেছেন। এর মধ্যে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৮৭ রান করেছেন। এটিই এ বছর ওয়ানডেতে সৌম্যের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। এ বছর বাংলাদেশের ৬ ব্যাটসম্যান ২০০ রানের বেশি করতে পেরেছেন, এর মধ্যে সৌম্য একজন। রানের গড়ে আবার পঞ্চম। এখানেও ভাল নৈপুণ্য। কিন্তু সৌম্যের ধারাবাহিকতা না থাকায় ব্যর্থতাতে সৌম্যের নাম যাচ্ছে। টি২০তে সৌম্য তো এ বছর সবাইকেই পেছনে ফেলেছেন। ৭ ম্যাচ খেলে ৩৩.৫৭ গড়ে ২৩৫ রান করেছেন। যা টি২০তে এ বছর বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। আবার এ বছর বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আন্তর্জাতিক টি২০তে ২০০ রানের বেশি করা একমাত্র ব্যাটসম্যানও সৌম্য। কিন্তু সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ৪৭। এখানেও ইনিংসগুলো বড় করতে পারেননি। ৩০ থেকে ৪০ রানের ঘরেই আটকে থেকেছেন। একটি মাত্র ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগে আউট হয়েছেন। আর একটি ম্যাচে ২৯ রান করেছেন। বাকি কোন ম্যাচেই ৩০ রানের নিচে নেই। এরপরও বিশেষ কিছু না করাতে সৌম্য ব্যর্থ ব্যাটসম্যানের তালিকাতেই আছেন। বছর শেষে হলো বিপিএলের পঞ্চম আসর। এ আসরেও সৌম্যের কাছ থেকে ভাল নৈপুণ্য আশা করা হয়েছিল। কিন্তু চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে খেলে ১১ ম্যাচে ১৫.৩৬ গড়ে ১৬৯ রান করতে পেরেছেন। বিপিএলের ব্যর্থতা যেন সৌম্যের দলে থাকা এবং একাদশে থাকা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সৌম্যও তা আঁচ করতে পারছেন। আর তাই তো মঙ্গলবার সৌম্য এ নিয়ে জানিয়েছেন, ‘একেকজনের চাওয়া একেকরকম হয়। আমার যে চাওয়া ছিল সেটা আমি পূরণ করতে পারিনি। হয়তো বা মানুষের যে চাওয়া ছিল সেটাও সবাই পুরোপুরি পায়নি। নিজের লক্ষ্যটা যদি নিজে পূরণ করতে না পারি তাহলে তো বলা যায় না যে বছরটা ভাল গেছে। চেষ্টা করব আগামীতে নিজের লক্ষ্যটা পূরণ করতে এবং মানুষের যে চাওয়া সেটাও চেষ্টা করব পূরণ করতে।’ ইনিংস বড় হচ্ছে না। সেট হয়েই আউট হচ্ছেন? এ নিয়ে সৌম্যের বক্তব্য, ‘অনেকের শুরু থেকেই সমস্যা হয়। আমি হয়তো বা ৩০ রান করতেছি। তারপর দলের কথা চিন্তা করতে হচ্ছে। ওই সময় যদি আমি স্লো হয়ে যাই টিমের পজিশনও স্লো হয়ে যাবে। আমি কেবল নিজের জন্য খেললে হয়তো এখান থেকে ওভারকাম করা সম্ভব। কিন্তু দলের চিন্তা করে খেললে একটু কঠিন হয়ে যায়। সমস্যাটা হচ্ছে ৩০-৪০ রানে। আমি যদি দিনশেষে ৩০-৪০ গুলো ৫০ করে আউট হতাম তাহলে সবাই বলতো সৌম্য ফর্মে আছে। ৩০/৪০-এ আউট হয়ে যাওয়ায় সবাই বলছে যে সে সেট হয়ে আউট হয়ে যাচ্ছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘বিপিএলটা কিন্তু খারাপ গেছে। আবার বলছেন এই বছর টি২০তে আমার রান বেশি। চিন্তা হচ্ছে নিজেকে নিজে খুশি করা। তারজন্য প্র্যাক্টিসও বেশি করছি। এতদিন তো ব্যাটিং করলাম। ফিটনেসের দিকেও নজর দিচ্ছি, যে ফিটনেসেও কোন ঘাটতি আছে কিনা। নিজের প্ল্যান নিজেই চেঞ্জ করে দেখছি যে কোন দিক থেকে বেরুতে পারি।’ ত্রিদেশীয় সিরিজ দিয়ে নতুন বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করবে বাংলাদেশ। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ও টি২০ সিরিজ রয়েছে। সৌম্য এ সিরিজ নিয়ে ভাবছেন, ‘নতুন বছর। চাইব যে নতুন বছরটা যাতে ভাল শুরু করতে পারি।’ হাতুরাসিংহে এখন শ্রীলঙ্কার কোচ। এ নিয়ে সবার ভেতরই আছে ভাবনা। বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার সিরিজ দিয়েই যে লঙ্কানদের সঙ্গে হাতুরার পথ চলা শুরু হয়ে যাবে। সৌম্য এ নিয়ে ভাবছেন না। বলেছেন, ‘সে (হাতুরাসিংহে) আমাদের সম্পর্কে বেশি জানে। বেশি দিতে চাইবে। বেশি নিতে গেলে হয়তো বা অনেকেই সেটা পূরণ করতে পারবে না। বেশি জানলেও সমস্যা। আর সে তো আর খেলবে না, খেলবে প্লেয়াররা। আমরা ডমিনেট করতে পারলে ফল আমাদের দিকেই আসবে। আমরাও তার সম্পর্কে জানি। সেও জানে। তো সে কি প্ল্যান করতে পারে আমরা জানি।’ গুঞ্জন আছে আপনি হাতুরাসিংহের প্রিয় ছিলেন। তিনি নাই। এখন মূল দলে থাকার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী? সৌম্য জানান, ‘আমি যদি ভাল খেলি আমি দলে থাকব। কে পছন্দ করে না করে এইগুলো তো জানি না। অনেক মানুষেরই কথা থাকতে পারে। কারণ একটা ক্লাসে স্যার সবাইকে পছন্দ করে না। আমি যদি ভাল না খেলতাম আমি টিমেও আসতাম না, আমাকে পছন্দও করতো না। আমি যদি স্কুলেই ভর্তি না হই সে আমাকে কিভাবে পছন্দ করবে। স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য তো আমাকে পরীক্ষা দিতেই হবে। পরীক্ষা তো যখন ভাল করেছিলাম তখন কোচ পছন্দ করেছে।’
×