ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রুমেল খান

ফুটবলে মেয়েদের সাফল্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

ফুটবলে মেয়েদের সাফল্য

‘শোনো নারী/তুমি চাইলেই পারো সব/চোখ বুজে কেন?/কেন রবে মুখ চেপে আঁচলে/তোমরাই তো জলতরঙ্গে সুর-তাল-লয় এনেছো’ ... যেখানে পুরুষরা ব্যর্থ, সেখানে নারীরা সফল। ফুটবলের কথা বলছি। চর্মগোলকের এই খেলাটিতে সাম্প্রতিক সময়ে যেখানে বার বার মুখ থুবড়ে পড়ছে, আসছে না কোন সাফল্য, সেখানে নারী ফুটবলের অভাবনীয় সাফল্য সত্যিই তাক লাগিয়ে দেয়ার মতো। আজকের লেখাটির মূল চরিত্র সদ্যসমাপ্ত সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত শিরোপা জেতা বাংলাদেশ অ-১৫ জাতীয় মহিলা ফুটবলাররা। বাংলাদেশের পুরুষ ও মহিলা ফুটবলের সময়সীমার ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সেই ইংরেজ আমল, পাকিস্তান আমল বর্তমানে বাংলাদেশ আমল ... চর্চার দিক দিয়ে এগিয়ে আছে পুরুষ ফুটবলই। সে তুলনায় মহিলা ফুটবলের চর্চার ইতিহাস এক যুগের সামান্য বেশি। অথচ মহিলা ফুটবলের উন্নতির ধাপই সবচেয়ে উঁচুতে। মাত্র কয়েক বছর আগেও এদেশের মহিলা ফুটবল নিয়ে হাসাহাসি হতো বিস্তর। অথচ আজ তাদের নিয়ে সুনীল স্বপ্ন দেখে এদেশের ফুটবলমোদিরা। বাংলাদেশ মহিলা ফুটবলের সূচনালগ্ন ২০০২ সালে। এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা হয় জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক-ডিফেন্ডার, বর্তমানে বিজেএমসি এবং জাতীয় হ্যান্ডবল দলের তারকা খেলোয়াড় ডালিয়া আক্তারের সঙ্গে। বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলারের শুরু এবং অনেক ঘাত-প্রতিঘাত-ঘটনার সাক্ষী ডালিয়া বলেন, ‘ভারতের পশ্চিমবঙ্গ মহিলা ফুটবল দল বাংলাদেশ সফরে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে আসে বিরাট বড় দল (৪০ ফুটবলার) সম্ভবত ২০০১-০২ সালে। বাংলাদেশের হয়ে সেই ম্যাচটি খেলেছিলাম। আমাদের দলে খেলোয়াড় সঙ্কট ছিল। তাই ওদের তিন ফুটবলার আমাদের হয়ে খেলেছিল! মিরপুর আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে আমরা হেরেছিলাম ০-১ গোলে। সেটাই ছিল বাংলাদেশ দলের যেকোন পর্যায়ের প্রথম কোন ম্যাচ।’ স্মৃতি হাতড়ে ডালিয়া আরও জানান, ‘বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশ দল প্রথম ম্যাচ খেলে ২০০৫ সালে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। তবে বাবা মারা যাওয়ায় ওই সফরে আমি যেতে পারিনি। এছাড়া দেশে বাংলাদেশের প্রথম অফিসিয়াল লোকাল ম্যাচটিতেও আমি খেলি, ঢাকা একাদশের হয়ে। সেটা কমলাপুর স্টেডিয়ামে, ২০০৪ সালে। মৌলবাদীর হুমকির কারণে চারদিকে কড়া পুলিশ প্রহরার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে প্রতিপক্ষ আনসারকে হারাই ১-০ গোলে। ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে ইন্দো-বাংলা গেমসে বাংলাদেশ দল তাদের প্রথম অফিসিয়াল ম্যাচ খেলে। ওই ম্যাচে আমরা গোলশূন্য ড্র করি।’ মৌলবাদীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যাত্রা শুরু হয়েছিল মহিলা ফুটবলের। আগে সাতক্ষীরা, যশোর, রাঙামাটি ছাড়া আর কোন জেলা থেকে মেয়েরা খেলতে আসত না। আর এখন কমপক্ষে ৩০ জেলা থেকে মেয়েরা আসে খেলতে। এ থেকেই বোঝা যায় দেশে মহিলা ফুটবলের বিস্তার ঘটছে বেশ ভালভাবেই। সমৃদ্ধ হচ্ছে পাইপলাইন। আগে আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রতিপক্ষ দলগুলোর কাছে বাংলাদেশ হারত ৬-৭ গোলে। এদেশের মহিলা ফুটবল ছিল আঁতুরঘরে। ফুটবলারদের খেলা দেখে সবাই হাসাহাসি করত। আর এখন? মুগ্ধ হয়ে দেখে, তালি বাজায় এবং তাদের সমর্থনে গলা ফাটায়! এটাই সত্য, এটাই বাস্তবতা। খেলোয়াড়রা বেসিক ফুটবল শিখেই আসে খেলতে। মহিলা ফুটবল উন্নতির সোপান বেয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে তরতর করে। এবং সেটা খুব দ্রুতই। আর এটাই বিস্ময়কর ব্যাপার। এই ২৪ ডিসেম্বর নিজেদের মাটিতে বিজয়ের মাসে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে অদম্য মেয়েরা। সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। ফাইনালে ১-০ গোলে হারায় ভারতকে। খেলা শেষে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনকে দেখা গেল মেয়েদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন। সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটুকেও দেখলাম একই কাজে ব্যস্ত। লিটুর কথা মনে পড়ে গেল। ফাইনালের আগেরদিন এই প্রতিবেদকে ডেকে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ‘দেখবেন। কাল ফাইনালে বাংলাদেশ জিতবে ৫-০ গোলে।’ লিটুর কথা ফলেনি। তবে তাতে কিছু আসে যায় না। লাল-সবুজরা চ্যাম্পিয়ন তো হয়েছে। এটাই হচ্ছে বড় ব্যাপার। অবশ্য তহুরার একক প্রচেষ্টার মিস এবং প্রথম মিনিটেই আনুচিংয়ের ‘বৈধ’ গোলটি ভুটানী রেফারি অন্যায়ভাবে বাতিল করে না দিলে বাংলাদেশ জিততে পারত কমপক্ষে ৩-০ গোলে। ফাইনাল শেষে মঞ্চ থেকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের জন্য প্রায় পাঁচ লাখ টাকা অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পায় বাংলাদেশের আঁখি খাতুন। ৪ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পায় রানার্সআপ ভারত দলের প্রিয়াঙ্কা দেবী নাওরেম। চ্যাম্পিয়ন ট্রফির পাশাপাশি ফেয়ার প্লে ট্রফিরও পুরস্কার পায় বাংলাদেশ। গত রবিবার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালটি উপভোগ করে ১২ হাজার দর্শক। অথচ টুর্নামেন্টের শুরুতে তাদের কোন আগ্রই ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশের একের পর এক জয়ে প্রতিম্যাচেই বাড়তে থাকে দর্শকসংখ্যা ৮০০, ২০০০, ৭০০০, ১২০০০ ...! দেখা গেছে প্রচুর নারী দর্শকও। ছোটনের শিষ্যাদের খেলায় এতটাই মুগ্ধ হয়েছে দর্শক, ফাইনাল খেলা শেষ হওয়ার পরও গ্যালারি ছাড়েনি তারা। এমনকি বাংলাদেশ দল যখন বাসে করে স্টেডিয়াম ত্যাগ করছিল, তখনও বাসের চারপাশে দাঁড়িয়ে থেকে মেয়েদের উদ্দেশ্যে জয়ধ্বনি দিয়েছে তারা। এমনটাই তো কাম্য ছিল। ফাইনালে ভারতকে হারানোর নায়িকা শামসুন্নাহার। তার গোলেই জেতে বাংলাদেশ। ফাইনাল শেষে তার অনুভূতি, ‘কোচ ছোটন স্যার বলেছিল, দেখাইয়া দাও! লেফট ব্যাক থেকে ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলাটা ছিল চ্যালেঞ্জের। এ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে (অ-১৪, ১৫ ও ১৬) খেলে সাতটা গোল করেছি। তবে আজকের ফাইনালের গোলটাই হচ্ছে সেরা। কারণ আমার গোলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ।’ টুর্নামেন্টে ৭ ম্যাচে মোট গোল হয় ২৮। এই আসরে ফাইনালের আগে লীগ ম্যাচে নেপালকে ৬-০, ভুটানকে ৩-০ এবং ভারতকে ৩-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি একমাত্র দল হিসেবে কোন গোলও হজম করেনি তারা। পক্ষান্তরে ভারত লীগ ম্যাচে ভুটানকে ৩-০ এবং নেপালকে ১০-০ গোলে হারায়। ০-৩ গোলে হারে বাংলাদেশের কাছে। এই আসরে বাংলাদেশের মতো তারাও সবচেয়ে বেশি গোল (১৩টি) করে। বাংলাদেশ দলের প্লাস পয়েন্ট ছিল এই আসরে তাদের একাধিক ম্যাচ উইনার। দলের ১৩ গোলের মালকিন ছিল ছয় ফুটবলার। গোল তহুরা ও আনুচিং ৩টি করে, শামসুন্নাহার, মনিকা ও আঁখি ২টি করে, সাজেদা ১টি করে। টুর্নামেন্টে হ্যাটট্রিক হয় দুটি। ১টি ভারতের প্রিয়াঙ্কা দেবী নাওরেম, অপরটি বাংলাদেশের তহুরা খাতুনের। টুর্নামেন্ট শুরুর সময় অংশ নেয়া সফরকারী তিনটি দলেরই কোচ জানিয়েছিলেন এই আসরে বাংলাদেশই ফেবারিট। তবে টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার পর ভারত দলের কোচ মায়মল রকি এই অবস্থান থেকে সরে আসেন। ঘোষণা দেন, ‘বাংলাদেশ ভাল দল, কোন সন্দেহ নেই। তাই বলে তারাই একমাত্র ফেবারিট নয়। আমরা শিরোপাজয়ের অন্যতম দাবিদার।’ তবে ফাইনালে উঠতে না পারা ভুটান (কোচ সুং জি লি) এবং নেপালের কোচ (গঙ্গা গুরং) ঢাকা ছাড়ার আগে তাদের আগের কথারই পুনরাবৃত্তি করে যান, ‘ফাইনালে বাংলাদেশই ফেবারিট। কারণ তারা শারীরিকভাবে এবং কৌশলগত দিক দিয়ে ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে।’ ফাইনালের আগে লীগ-ম্যাচে প্রবল প্রতিপক্ষ ভারতকে হারানোর পর বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মারিয়া মান্দাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তোমরা কেমন সেলিব্রেশন করলে? জবাবে মারিয়া বলেছিল, ‘সেলিব্রেশন করব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর।’ এ থেকেই বোঝা গিয়েছিল শিরোপা জিততে কতটা সিরিয়াস ছিল মারিয়ারা। প্রথম ম্যাচে নেপালকে এবং তৃতীয় ম্যাচে ভারতকে হারানোর পর ম্যাচসেরার পুরস্কার পায় মনিকা চাকমা। অসাধারণ এক প্লে মেকার। বাংলাদেশ দলের আশা-ভরসার অন্যতম প্রতীক এই এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। বল নিয়ে দ্রুতগতিতে চমৎকার ড্রিবলিং করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে। খেলতে পারে দুই পায়েই। শূটিং, পাসিং, হেডিং, বল কেড়ে নেয়া ... সবক্ষেত্রেই কোচের ফুল মার্কস পাবে খাগড়াছড়ির সুমন্তপাড়ার মেয়ে মনিকা। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়টিও বাংলাদেশের। নামটি তার আঁখি খাতুন। এই আসরে ভুটানকে ৩-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। ম্যাচের প্রথম দুটি গোলই আঁখির। অথচ তার পজিশন ডিফেন্ডার। গড়নে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতায় আঁখি পায় বাড়তি সুবিধা। লম্বা ফ্রি-কিকেও পারদর্শী। বাংলাদেশ দলের রক্ষণভাগের এক অতন্দ্রপ্রহরী। এ আসরে বাংলাদেশ একটি গোলও হজম করেনি। এর জন্য যাদের ‘দায়ী’ করা যায়, তাদের একজন বড্ড লাজুক এক কিশোরী। অথচ ডিফেন্ডার হিসেবে যখন মাঠে ফুটবল খেলতে নামে, তখন তাকে আগের স্বভাবের সঙ্গে মোটেও মেলানো যায় না। প্রতিপক্ষ দলের ফরোয়ার্ডদের রুখে দেয় নিপুণভাবে। চাপেও ঠান্ডা থাকে বরফের মতো ঠান্ডা। নিজ দায়িত্ব পালনে তার জুড়ি নেই। আত্মবিশ্বাসই তার মূল অস্ত্র। কখনই ঘাবড়ায় না সে। নামটি তার আনাই মগিনি। খাগড়াছড়ির সাতভাইয়া পাড়ায় আনাইয়ের জন্ম। তাদের বাড়ির উঠানে লাগানো আছে এক জোড়া নারিকেল গাছ। সেই নারিকেল গাছ দুটোও আনাইদের মতো জমজ। জমজ মানে, আনাইয়ের বোন আনুচিং মগিনিও যে খেলে একই দলে। ময়মনসিংহের কলসুন্দর গ্রামের সাধারণ কৃষক ফিরোজ আলী। সরল প্রকৃতির এবং রক্ষণশীল। তার ধারণা মেয়েদের ফুটবল খেলা হচ্ছে ইসলামের দৃষ্টিতে গোনাহ্র কাজ। তাই তিনি মেয়ে তহুরা খাতুনকে ফুটবল খেলতে মানা করে দেন। পরে তহুরার স্কুল শিক্ষকরা তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজি করান। সেই তহুরা অতি অল্প সময়ে অনেক সুনাম অর্জন করে ফেলল জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে। তার এই কৃতিত্বের জন্য বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী ওই গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেন। লিকলিকে ও ছোটখাটো গড়নের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তহুরা আজ শুধু ময়মনসিংহই নয়, সারা বাংলাদেশের গর্ব। সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম খেলায় ৬-০ গোলে কচুকাটা করে নেপালকে। ম্যাচে চোখ ধাঁধানো হ্যাটট্রিক করে তহুরা। এছাড়া একটি গোলের যোগানও দেয়। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে দুটি হ্যাটট্রিকের মালকিন হলো তহুরা। প্রথমটি করেছিল তাজিকিস্তানের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে ৯-১ গোলে জিতেছিল বাংলাদেশ। তহুরা করেছিল হ্যাটট্রিক। আসরটি ছিল এএফসি অ-১৪ আঞ্চলিক (সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল)। আর আন্তর্জাতিক ফুটবলে এ নিয়ে তহুরার গোল দাঁড়াল ১৬-তে। নিজের এলাকায় তহুরাকে সবাই ‘মেসি’ বলে ডাকে। এ প্রসঙ্গে তহুরার ভাষ্য, ‘এলাকার মুরুব্বিরা দেখলেই মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেন। বলেন, মেসির মতো যেন সব ম্যাচেই গোল করি।’ বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের ইতিহাসে বিপ্লব ঘটিয়ে যিনি প্রায় কিংবদন্তির পর্যায়ে চলে গেছেন, তিনি গোলাম রব্বানী ছোটন। এ পর্যন্ত যত সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল, তার সবই এসেছে ছোটনের হাত ধরে। এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়ন (আঞ্চলিক) আসরে দু’বার (২০১৫ ও ২০১৬), এএফসি অনুর্ধ-১৬ আসরের (২০১৬) আঞ্চলিক বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন একবার এবং সর্বশেষ সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১৭) একবার শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল কোচ ছোটনের অধীনে। এছাড়া তার অধীনে সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে একবার রৌপ্যপদক অর্জন (২০১৬), দু’বার সেমিফাইনালিস্ট (২০১০ ও ২০১৪); এসএ গেমস ফুটবলে দু’বার তাম্রপদক (২০১০ ও ২০১৬) অর্জন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। তবে এখানেই থেমে যেতে চান না ছোটন। নতুন বছরে ছয় শিরোপা হাতছানি দিচ্ছে তাকে। এগুলো হচ্ছে : তিন সাফ টুর্নামেন্ট (অ-১৫, ১৮ এবং সিনিয়র সাফ), একটি ফুটসাল টুর্নামেন্ট (থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য) এবং এএফসি অ-১৬ ও ১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্ব আসর। এ প্রসঙ্গে ছোটন জনকণ্ঠকে জানান, ‘মেয়েদের ফুটবলে স্পন্সর, বাফুফে ও মিডিয়ার অবদান থাকলে এবং নিরবিচ্ছিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু থাকলে অবশ্যই মেয়েরা এই আসরগুলোতে চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।’ মেয়েদের পরের লক্ষ্য আগামী চার বছরের মধ্যে ফিফা অ-২০ মহিলা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা। ইতোমধ্যেই তারা ফিফা অ-১৬ মহিলা বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলেছে। অংশ নিয়েছে এশিয়ার সেরা আট দল নিয়ে এএফসি অ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্বে। প্রতিবছর তারা ১০-১৫ আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলবে। এই লক্ষ্যে খুব শীঘ্রই ক্যাম্প শুরু হবে ৫০ ফুটবলার (জুনিয়র-সিনিয়র মিলিয়ে) নিয়ে। এছাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া মহিলা ক্লাব ফুটবল লীগ আগামী বছর থেকেই আবারও চালু করার ঘোষণা দিয়েছে বাফুফে। এতে করে মারিয়ারা বিভিন্ন ক্লাবে খেলে বেশি অর্থ উর্পাজন করে নিজেদের পরিবারকে সাহায্য করতে পারবে। একদা দেশীয় ফুটবলের যে উজ্জ্বল অতীত ঐতিহ্য ছিল, তা ছেলেরা ফিরিয়ে আনতে না পারলেও মেয়েরা পারছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি শ্লাঘার বিষয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি, দলের অধিকাংশ মেয়ে উঠে এসেছে অবহেলিত গ্রামগঞ্জ ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। তাদের পরিবারগুলো একেবারেই হতদরিদ্র। বলতে গেলে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় এমন অবস্থা। সেখানে বিদ্যালয়সংলগ্ন পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই, প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও প্রশিক্ষণের প্রকট অভাব সর্বোপরি নিত্যসঙ্গী দারিদ্র্যের কশাঘাত। অনেক অঞ্চলে এখন পর্যন্ত বিদ্যুতও পর্যন্ত পৌঁছেনি। সে অবস্থায় অদম্য ও অপরাজেয় নারী ফুটবলারদের এমন কৃতিত্ব খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই। এই দলটিকে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন করানোর ব্যবস্থা করা হলে দেশে ও বিদেশের মাটিতে এরাই একদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিজয় গৌরব ও সুনাম ছিনিয়ে আনতে সমর্থ হবে। সোনার মেয়েদের কীর্তিগাথায় মোড়ানো এ রকম আরও স্বর্ণালি সাফল্য নিশ্চয়ই অবলোকন করা যাবে।
×