ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন

বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে বড় বাধা দুর্নীতি। দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রচলিত আইন কাঠামোই যথেষ্ট। কিন্তু অনেক সময় আইনের রাজনৈতিক প্রয়োগ ও অপব্যবহারের কারণে লক্ষ্য অর্জন হয় না। উদ্যোগ সত্ত্বেও দেশে দুর্নীতি, ঘুষ ও অর্থ পাচার পুরোপুরি রোধ করা যাচ্ছে না। এমন একটি পরিস্থিতিতে সম্প্রতি সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাবে বলে আশা করা যায়। মাঠ প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনতে বর্তমান সরকারের নেয়া পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি প্রতিরোধ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কোর্স, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, গ্রিভেন্স রিড্রেস সিস্টেম, অডিট কার্যক্রম, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণ দাখিল, আয়কর রিটার্ন দাখিল, বেতন কমিশন গঠন কার্যক্রম প্রভৃতি। প্রশাসনকে গতিশীল ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ২০০৯-১৪ পর্যন্ত চার লাখ ৬০ হাজার ৬৯৮ পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশের সব জেলায় একটি করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক করে (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মোট ৬৪টি এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি) নামে আরও ৪৩টি পদ নতুন করে সৃষ্টি করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুর্নীতিবিরোধী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও সরকারী প্রশাসনে সেবার মান বৃদ্ধি করতে ১৪টি বিষয় বাস্তবায়নে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ সব দফতর, পরিদফতর ও অধিদফতরে বিষয়গুলো বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে বলেছে। বিষয়গুলো কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে তা সরেজমিনে দেখতে দুদকের কমিশনার দেশের বিভিন্ন অফিস পরিদর্শন করছেন। এসবই ইতিবাচক ও আন্তরিক উদ্যোগ। দুদক যে ১৪টি বিষয় বাস্তবায়ন করতে বলেছে তার মধ্যে প্রথমেই আছে সাধারণের জন্য হেল্পডেস্ক সার্ভিসের উন্নয়ন। তারপরই আছে জনগণের সঙ্গে ভাল আচরণে উৎকর্ষ সাধন। তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার নাম-পদবি সেল (মোবাইল) ফোন নম্বর দৃশ্যমান স্থানে টাঙ্গিয়ে রাখা। সিটিজেন চার্টারসহ দফতরের তথ্যাবলী নিয়মিত হালনাগাদ করে ওয়েবসাইটসহ ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের দৃশ্যমান স্থানে স্থাপন নিশ্চিতকরণ। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে সাধারণের অধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তথ্যমেলা ও সেবা সপ্তাহের নিয়মিত আয়োজন। ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে অধিকসংখ্যক জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নিয়মিতভাবে গণশুনানির আয়োজনও এর অংশ। প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিচয়পত্র পোশাকের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক। ‘দ্য টাউট এ্যাক্ট ১৮৭৯’ প্রয়োগের মাধ্যমে অফিসকে দালালমুক্ত করা। ‘আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত’ এমন ঘোষণা অফিস প্রধান কর্তৃক স্বাক্ষর করে দফতরের সামনে টাঙ্গিয়ে রাখা নিশ্চিত করা। সিটিজেন রিপোর্ট কার্ড প্রবর্তন করে তার ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। সেবার নতুন নতুন ক্ষেত্র উদ্ভাবন করে সেল ফোন ও অনলাইনের মাধ্যমে সেবা সম্প্রসারণ এক মহাউদ্যোগই বটে। এটা ঠিক যে, জনপ্রশাসনে সেবার মান বেড়েছে, কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হচ্ছে। কিন্তু সাইনবোর্ড টাঙ্গানোই শেষ কথা নয়। সামগ্রিক প্রশাসনকে সর্বতোরূপে দুর্নীতিমুক্ত করা, সুনীতি ও আদর্শবাদ পুনরায় প্রোথিত করা সময়সাপেক্ষ বিষয়। জেলা প্রশাসনে নিজ উদ্যোগে ভাল কাজের পুরস্কার ও অসৎ কাজের তিরস্কারের ব্যবস্থা চালুর সবিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তুলতে পাবলিক সার্ভেন্টদের মন-মানসিকতা (মাইন্ড-সেট) পরিবর্তন করার বিকল্প নেই।
×