ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাকায় হাড় কাঁপানো শীতে বাস্তুচ্যুতদের দুঃসহ জীবন

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

রাকায় হাড় কাঁপানো শীতে বাস্তুচ্যুতদের দুঃসহ জীবন

খাদিজা আলৌশ সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত রাকায় বাস্তচ্যুতদের শিবিরে এ হাড়-কাঁপা শীতে তার পাঁচ সন্তানকে নিয়ে বেঁচে আছেন কোনভাবে। কিন্তু তার সাত বছরের ছেলেটি মারা গেছে প্রচ- ঠান্ডায়। এখানে তাপমাত্রা নেমেছে অত্যন্ত নিচে। সিরীয় যুদ্ধে গৃহহারা হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। এ তীব্র শীতে হাল্কা-পাতলা প্লাস্টিক তাঁবুতে বা পরিত্যক্ত অর্ধ সমাপ্ত ভবনগুলোতে আরও একটি শীত কাটাতে হচ্ছে এদের। এখানে উষ্ণতার ব্যবস্থা নেই। নেই কম্বল ও গরম কাপড়-চোপড়। তারা পাচ্ছেনা যথাযথ চিকিৎসা ও ওষুধ। এমনকি সাধারণ শীতও তাদের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনে। ৩৫ বছর বয়স্ক খাদিজা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমার ছেলেটি শীতে মারা গেল। সাত বছরের শিশু আবদেল্লাহ এক সপ্তাহ আগে মারা গেল হঠাৎ করে। এ কথা বলতে গিয়ে খাদিজার চেহারার অনেকখানি টানটান হয় মানসিক ক্লান্তির ভারে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের সাবেক ঘাঁটি রাকায় লড়াইয়ের সময় খাদিজা তার সন্তানদের নিয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩০ মাইল) উত্তরে আইন ইসা শিবিরে আশ্রয় নেন। এখানে রাতে তাপমাত্রা নেমে দাঁড়ায় ঠিক চার ডিগ্রী সেলসিয়াস (৩৯ ফারেনহাইট)। খাদিজা তার সামনে চার সন্তানকে কাছে টেনে বলেন, মাঝরাতে আমার ছেলেটির কাশি ও জ্বর উঠেছিল। পরদিনই সে মারা গেল। আইন ইসা ক্যাম্পের ২ হাজার ৫ শ’ ৫০টি তাঁবুতে অবস্থান করছে ১৭ হাজারের বেশি সিরীয়। রাকায় আইএসের বিরুদ্ধে আক্রমণে বেশির ভাগ বাসিন্দা পালিয়ে গেছে। দক্ষিণাঞ্চলে সিরিয়ার দীর এজোর প্রদেশ থেকেও পালিয়ে এসেছে অসংখ্য মানুষ। তাদের অনেক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। শহর ও গ্রামগুলো পরিণত হয়েছে ধ্বংসাবশেষে। এসব স্থানে বিদ্যুত নেই, নেই বেঁচে থাকার মতো পানীয় জল। তাই ফিরে যাওয়ার কথা ভাবা যায়না। শিবিরে সহায়তাকারী জাতিসংঘ বলেছে, এখানে নতুন করে কোন স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা হয়নি। বাসিন্দাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বলেছে, তাদের তাঁবুগুলোর মেরামত বা শীতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। অনেকেই তাদের তাঁবুগুলোর ভেতরটা শুকনো রাখার জন্য অতিরিক্ত নাইলন ত্রিপল টানিয়েছে। ক্যাম্প ম্যানেজার জালাল আল-আইয়াফ স্বীকার করেন, আইন ইসার গৃহচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্কট চলছে। শিশু মৃত্যুর কোন পরিসংখ্যান নেই। অসুস্থতার কারণে মৃত্যু আরও বেড়ে গেছে শীতের জন্য। শিশুরা ক্যাম্পের ভেতর চলাচলের পথগুলোতে খালি পায়ে দৌড়ায় এ শীতের মধ্যে। খুব কমসংখ্যক ছেলেমেয়ের গায়ে দেখা যায় অতিরিক্ত সাইজের সোয়েটার ও জ্যাকেট। ক্যাম্পে একটা অংশে মার্কেট গড়ে উঠেছে। নারীরা এখানে ব্যবহৃত কাপড়-চোপড়ের স্তূপের চারপাশে জড়ো হয়ে জ্যাকেট ও ট্রাউজার খুঁটিয়ে দেখে। আন্তর্জাতিক রেডক্রস সমিতির মুখপাত্র ইনগি মেদকি বলেন, পরিবারগুলো পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে কম্বল ব্যবহার করছে। উম ইউসেফ তার তাঁবুর সামনে গুঁটিসুটি মেরে বসে তার নাতি-নাতনিদের স্নানের জন্য শুকনো পাতা বা আবর্জনা পুড়িয়ে গরম পানি করছেন একটি বড় কালো পাত্রে। ৫৫ বছর বয়স্ক উম ইউসেফ বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে শিশুরা একটু উষ্ণ আমেজ পাবে। উম ওমর (৫০) বলেন, ম্যাট্রেস বা কম্বল ছাড়া আমরা ১০ দিন কাটিয়েছি। উম ওমর এ শীত সত্ত্বেও তার তাঁবুর বাইরে বসে দুপুরের খাবারের জন্য সব্জি কুটছেন। তিনি বলেন, তাঁবুতে আমাদের কিছুই নেই। আমাকে পাঁচটি কম্বল দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা সংখ্যায় সাতজন। ২০১১ সালে সিরীয় সংঘাত শুরু হওয়ার পর ৬০ লাখের বেশি মানুষ দেশের অভ্যন্তরে গৃহচ্যুত হয়ে আছে। প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষ শিবির, ট্রানজিট সেন্টার, স্কুলের মতো ভবন ও গুদামঘরগুলোতে অবস্থান করছে। দামেস্কের বাইরে বিদ্রোহীদের ঘাঁটি এক অর্ধ বিধ্বস্ত স্কুলভবনে অবস্থান করছে প্রায় ১ শ’ জন। এদের মধ্যে ৭১ বছর বয়স্ক আবু মোহাম্মদ শাহহাদ রয়েছেন। -এএফপি।
×