ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আজ আবার খালেদার পক্ষে যুক্তিতর্ক রাখবেন আইনজীবীরা

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

আজ আবার খালেদার পক্ষে যুক্তিতর্ক রাখবেন আইনজীবীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পক্ষে আজ ফের যুক্তি উপস্থাপন করবেন তার আইনজীবীরা। এর আগে মঙ্গলবার ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মোঃ আখতারুজ্জামান বকশীবাজারের কারা অধিদফতরের মাঠে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে বেলা সাড়ে ১১টায় মামলায় চতুর্থ দিনের মতো যুক্তিতর্কের শুনানি শুরু করেন, শেষ হয় বিকেল পৌনে ৪টায়। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান। এতে তিনি বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক মামলা। হয়রানি করার উদ্দেশে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাটি করা হয়েছে। এই মামলায় ৩২ জন সাক্ষীর কেউই তাদের জবানবন্দীতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেননি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মূলত এই মামলাটি সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখার। এই শাখার কোন কর্মকর্তাই বলেননি খালেদা জিয়া ওই শাখায় এ্যাকাউন্ট খুলেছেন বা টাকা উত্তোলন করেছেন।’ এ আইনজীবী বলেন, ‘ফটিকছড়ি থেকে এক অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা কর্মচারীকে এনে ঘষামাজা করে দুদক একটি রিপোর্ট দেয়। যার কোনও ভিত্তি নেই।’ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিকেল চারটার দিকে আদালতের দিনের কার্যক্রম শেষ হয়। এর আগে বাকি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য বুধবার দিন ধার্য করে আদালত। এর পরপরই খালেদা জিয়া আদালত থেকে বেরিয়ে যান। এই আইনজীবীর যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে খালেদার পক্ষে তার আরও তিন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের যুক্তি উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার পক্ষে তৃতীয় দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন শুরুর পাঁচ মিনিট আগে বিএনপি নেত্রী এজলাসে এসে বসেন। এর আগে যুক্তিতর্ক শুনানির প্রথম দিন ২০ ডিসেম্বর মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন। এ সপ্তাহে যুক্তিতর্কের শুনানির জন্য মঙ্গলবার থেকে টানা তিনদিন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দিন রেখেছেন বিচারক আখতারুজ্জামান। এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে মোট সাত দিন বক্তব্য দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। গত ৫ ডিসেম্বর তার বক্তব্য শেষ হলে বিচারক যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ঠিক করেন। এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পাশাপাশি বৃহস্পতিবারের শুনানিতে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে খালেদা জিয়ার লিখিত বক্তব্যও গ্রহণ করে আদালত। চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় আসামির পক্ষে কোন সাফাই সাক্ষ্য দেয়া হবে কি না, বিচারক আখতারুজ্জামান তা খালেদার কাছে জানতে চাইলে ওইদিন নেতিবাচক জবাব দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। তখন সাফাই সাক্ষ্য না রাখার সিদ্ধান্তটি লিখিতভাবে দিতে তাকে নির্দেশ দেয় আদালত। পরে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল মামলাটিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানান। তখন বিচারক ২৬ ডিসেম্বর দুদকের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের দিন ঠিক করেন। দুই মামলায় খালেদা স্থায়ী জামিনের আবেদন করলে তাকে মঙ্গলবার পর্যন্ত জামিন দিয়েছিল আদালত। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন আর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। খালেদা জিয়া, সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ এ মামলায় জামিনে আছেন। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান গত নয় বছর ধরে দেশের বাইরে, তার বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এছাড়া কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। মামলার বিচার শুরুর প্রথম থেকেই বার বার শুনানিতে অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া। অনুপস্থিতির কারণে একাধিকবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে আদালত। নানা অজুহাতে অসংখ্যবার উচ্চ আদালতেও গিয়েছেন। তার এসব কর্মকা-কে বিচার বিলম্বিত করার অপচেষ্টা বলেই মনে করেন অনেকে।
×