ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে দু’একদিনের মধ্যেই আলোচনা

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে দু’একদিনের মধ্যেই আলোচনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেতন বৈষম্য দূর করার আশ্বাসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে অনশন স্থগিত করা প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে দু’এক দিনের মধ্যেই আলোচনায় বসছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় আলোচনার মাধ্যমেই দ্রুত সমস্যার সমাধান করার চিন্তা করছে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেছেন, আলোচনায় শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক মনে হলে তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হবে। এর আগে সোমবার মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় দাবি বিবেচনার আশ্বাস পেয়ে অনুরোধে অনশন ভেঙ্গেছেন বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে শহীদ মিনারে তিন দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসা প্রাথমিক শিক্ষকরা। শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক ঘণ্টা আলোচনার পর সন্ধ্যায় শহীদ মিনারে যান প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী। সেখানে তিনি পানি ও ফলের রস খাইয়ে শিক্ষকদের অনশন ভাঙ্গান। বাংলাদেশ প্রাথমিক সরকারী শিক্ষক মহাজোটের নেতা মোঃ শামসুদ্দীন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা অনশন কর্মসূচী স্থগিত করলাম। আমরা মন্ত্রীর সঙ্গে আরও আলোচনা চালিয়ে যাব। সরকারী প্রাথমিক স্কুলে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যেখানে একাদশ গ্রেডে বেতন পান, সেখানে একই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে চাকরিতে ঢোকা সহকারী শিক্ষকরা পান চতুর্দশ গ্রেডে। এই ‘বৈষম্য’ কমিয়ে দ্বাদশ গ্রেডে বেতনের দাবিতে শনিবার থেকে শহীদ মিনারে অনশন শুরু করেন শিক্ষকরা। জাতীয় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ নামে তিনটি সংগঠনসহ সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ প্রাথমিক সরকারী শিক্ষক মহাজোটের ব্যানারে এই কর্মসূচীতে কয়েক শ’ শিক্ষক অংশ নেন। অনশনে গত তিন দিনে অন্তত ৬০ জন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ অবস্থায় মঙ্গলবার মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এ সপ্তাহেই আমরা আলোচনা শুরু করব। আলোচনার টেবিলে যদি দেখা যায় তাদের (শিক্ষক) দাবি যৌক্তিক তাহলে মেনে নেয়া হবে। শিক্ষকদের আশ্বাস দেয়ার বিষয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নীত করা হবে- সেই আশ্বাস আমি দেইনি। ওই আশ্বাস দেয়ার কর্তৃত্বও আমার হাতে নেই কারণ এর সঙ্গে অর্থ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জড়িত। শিক্ষকদের দাবির যৌক্তিকতা বুঝতেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে আলোচনায় বসার উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের মধ্য থেকে পাঁচ থেকে সাত জনের একটি প্রতিনিধি দল ঠিক করতে বলা হয়েছে। শিক্ষক সংগঠনগুলো নিবন্ধিত না হওয়ায় চিঠি দিয়ে তাদের ডাকা যাবে না। এদিকে এবার এমপিওভুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন নন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই তারা নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে অবস্থান নেন। আয়োজক সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার ৯৮ শতাংশ বেসরকারী ব্যবস্থাপনানির্ভর। বিভিন্ন স্তরের ৫-৬ হাজারের বেশি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় আছে। যা এ স্তরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক-চতুর্থাংশ। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন ৮০ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী, যেখানে অধ্যয়ন করছেন ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। কিন্তু এসব শিক্ষক-কর্মচারী ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। ফলে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে ২১ লাখ চাকরিজীবীর বেতন বেড়েছে। প্রতি গ্রেডে বেতন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে বৈশাখী ভাতা। তাই দাবি আদায়ে সারা দেশের ভুক্তভোগী সব শিক্ষক-কর্মচারীকে অবস্থান কর্মসূচীতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার। অবস্থান কর্মসূচীতে আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মচারীরা অংশ নিয়েছেন।
×