ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অপরূপ নীলগিরি

সাদা মেঘ যেন হাতের নাগালে, পর্যটকের মিলনমেলা

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

সাদা মেঘ যেন হাতের নাগালে, পর্যটকের মিলনমেলা

মাকসুদ আহমদ নীলগিরি মানে নীল পর্বত। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলে পাহাড়ের সঙ্গে নীল আকাশের মিলনমেলা। কী অসাধারণ দৃশ্য বান্দরবানের পাহাড়ী পথে পথে। চট্টগ্রামের তিনটি পার্বত্য জেলাতেই প্রকৃতি আর পাহাড়ের সমারোহ। সমতল থেকে পাহাড়ের চূড়া যেন আকাশ ছুঁয়েছে নীলগিরিতে। বান্দরবান শহর থেকে ৪৭ কিলোমিটার দূরে নীলগিরি। শহরের দক্ষিণ পূর্ব তথা থানচি সড়কেই এই নান্দনিক স্পটের অবস্থান। যেকোন গাড়িতে নীলগিরি পৌঁছানো গেলেও ঝুঁকি নেয়াটা ঠিক হবে না নুতনদের জন্য। বান্দরবান শহর থেকে চাঁদের গাড়িতে নীলগিরি যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় এসব চাঁদের গাড়ি পাওয়া যায়। আবার জনপ্রতি লোকাল ভাড়ায়ও (৮০০ টাকা) নীলগিরি ঘুরে আসা সম্ভব। নীলগিরির পথ ধরে চললে পথে পড়বে মেঘলা, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড়। অন্য সড়কে আরও দুই হাজার ফুট ওপরে রয়েছে নীলাচল। এই স্থানটিকে পর্যটকরা বাংলার দার্জিলিং হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। সমূদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় দুই হাজার দু শ’ ফুট উচ্চতায় নীলগিরি। পাহাড়ের চূড়ায় আর কিছু না থাকায় চারদিকে শুধু মেঘ আর নীল আকাশ। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় মানুষের জন্য অকৃত্রিম ভালবাসা বিলিয়ে দেয়া হয়েছে নীলগিরিতে। সেনাবাহিনীর পরিচালনাধীন এই স্পটে প্রবেশে দিতে হয় জনপ্রতি ৫০ টাকা আর চার শ’ টাকায় মাইক্রো পার্কিংসহ সিট ক্যাপাসিটি অনুযায়ী বিভিন্ন অংকের অর্থ গুনতে হয়। নীলগিরির পথে পথে সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট রয়েছে নিরাপত্তার খাতিরে। এসব চেকপোস্টে পর্যটকদের আগমন-বহির্গমন রেজিস্ট্রারে পরিচয় লিখে রাখা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্র্রাকশন ব্যাটেলিয়ন প্রথমে নীলগিরির চিম্বুক-থানচি সড়কটিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চৌকি নির্মাণ করে। পরে সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা এই স্পটকে পর্যটনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। বান্দরবানের ¤্রাে জনগোষ্ঠীর কাপ্রুপাড়া এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিন্তে স্পটটি শেষ পর্যন্ত নেপাল আর থাইল্যান্ডকে হার মানিয়েছে। নীলগিরিতে গড়ে তোলা হয়েছে নীলগিরি হিল রিসোর্ট। রয়েছে আকাশনীলা, মেঘদূত, নীলাঙ্গনা ও মারমা হাউস নামে বিলাসবহুল কটেজ। তবে রাতযাপনের জন্য সেনাবাহিনীর বান্দরবান ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। বিলাসবহুল এসব কটেজে যারা রাতযাপন করেন তারা ভোরের সূর্যোদয় যেমন দেখতে পান, তেমনি পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে সন্ধ্যার পর জমে থাকা কুয়াশা মেঘ আকারে সূর্যের আলোয় ভেসে ওঠে আকাশে। অনেকটা মেঘ ছুঁয়ে দেখা যায় দিনের শুরুতে। এ ছাড়াও সারাদিন নীলগিরির চারপাশে কুয়াশায় ঢাকা থাকে শীতকালে। আর বেলা বাড়তে বাড়তে সূর্যের আলোয় দেখা যায় বঙ্গোপসাগরে জাহাজ চলার দৃশ্য। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে সাঙ্গু নদীর এগিয়ে চলাও দেখা যাবে এই গিরি থেকে। এই পর্যটন স্পটে রয়েছে বান্দরবানের মানচিত্র পাথরে সাঁটানো। যা থেকে বোঝা যায়, বান্দরবানের স্বর্ণমন্দির, নীলাচল সমূদ্র পৃষ্ঠ হতে দুই হাজার ফুট ওপরে, এর পাশেই রয়েছে প্রায় সমূদ্রপৃষ্ঠ হতে দুই হাজার ফুট ওপরে শুভ্রনীল পাহাড়, ১৫শ’ ফুট ওপরে মেঘলা, সাঙ্গু নদী, রাখাইং পুকুর, প্রায় ১৫ একর আয়তনের বগালেক যা সমূদ্র পৃষ্ঠ হতে ১৫শ’ ফুট ওপরে উপবন লেক, প্রায় ১০ একর জায়গায় থাকা ক্যামলং জলাশয় পিকনিক ও শুটিংয়ের জন্য বিখ্যাত, প্রান্তিক লেক দুই হাজার ৫শ’ একর এলাকাজুড়ে, চিম্বুক যা সমূদ্র পৃষ্ঠ হতে ১৫শ’ ফুট ওপরে। লামায় রয়েছে মিরিঞ্চা পর্বত যা সমূদ্র পৃষ্ঠ হতে ১৫শ’ ফুট ওপরে, মাতামুহুরী নদী, রোয়াং ছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, বলিপাড়া, থানচী, আজিংডং পর্বতমালা যা বর্তমানে বিজয় নামে পরিচিত। এছাড়াও রয়েছে আলী সুড়ঙ্গ ও কানাপাড়া পাহাড়। জেলা প্রশাসনের পরিচালনায় একটি চিড়িয়াখানা রয়েছে বান্দরবানে। আরও আছে কৃত্রিম হ্রদ, শিশু পার্ক, সাফারি পার্ক, লেকে প্যাডেল বোট, ঝুলন্ত ব্রীজ ও বিভিন্ন পিকনিক স্পট।
×