ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ সাব্বির মুহাম্মদ শাওকাত

ত্বকে সাদা দাগ মানেই শ্বেতি নয়

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

ত্বকে সাদা দাগ মানেই শ্বেতি নয়

শ্বেতি রোগ সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরী। শ্বেতি হচ্ছে কালো রঞ্জক প্রস্তুতকারী বহির্ত্বকের মেলানো সাইটের অনুপস্থিতিজনিত চর্মের বর্ণের এক ধরনের অস্বাভাবিকতা, যার কারণে শরীর ও শ্লেষ্মা ঝিল্লির বিভিন্ন স্থানে দুগ্ধ ধবল সাদা সাদা দাগ সৃষ্টি হয়। তবে সাদা দাগ হলেই যে সেটা শ্বেতি রোগ হবে তা কিন্তু নয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে নানা চর্মরোগও সাদা সাদা দাগ সৃষ্টির কারণ হতে পারে। যেমন- মরকিয়া, লাইকেন স্কেরোসাস, পিট্রিয়াসিস এলবা, পিট্রিয়াসিস ভার্সিকলর, পিন্টা, কুষ্ঠরোগ, রাসায়নিক লিউকোডার্মা, এলবিনিজম পিবালডিজম, লিভাস এনেমিকাস ইত্যাদি। আবার সাদা হলেও যে শ্বেতি রোগ হবে না, তা কিন্তু নয়। শ্বেতি রোগ উজ্জ্বল সাদা বা চকের মতো ধবধবে সাদা বর্ণের হয় এবং এটা স্বাভাবিক বর্ণের চামড়া থেকে সুস্পষ্ট সীমারেখায় পৃথক থাকে। চামড়ার সাদা অংশে কোন রকম আঁশ বা চর্মের গড়নে, গঠনে ও পুরুত্বে অস্বাভাবিকত্ব থাকে না, তবে সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষণের সাহায্যে এ রোগের প্রকৃতি, বিস্তৃতি, বর্ণ ও আনুষঙ্গিক বৈশিষ্ট্য দেখে একজন অভিজ্ঞ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ খুব সহজেই এ রোগ নির্ণয় করতে পারেন। ক্ষেত্রবিশেষে উডসল্যাম্প পরীক্ষা এবং চর্ম বায়োপসির প্রয়োজন হয়। কুসংস্কার আছে, শ্বেতি ছোঁয়াছে রোগ। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। একজন শ্বেতি রোগীর স্পর্শ অন্যকে এ রোগে আক্রান্ত করে না। শ্বেতি রোগ নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, বাবা অথবা মায়ের শ্বেতি থাকলে তার সন্তানদের এ রোগ হওয়ার কিঞ্চিৎ সম্ভাবনা আছে, তবে তা একটিমাত্র জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে বহু জিন বা বংশগতির ধারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। একজন শ্বেতি রোগীর ৩০ ভাগ আত্মীয়-স্বজনের শ্বেতি রোগ থাকতে পারে, তবে বাবা বা মায়ের শ্বেতি থাকলেই সন্তানের হবে- এমন শতভাগ সম্ভাবনা নেই। এ রোগটিতে পুরুষ ও মহিলা সমহারে আক্রান্ত হয়। শ্বেতি কেন হয় তা অদ্যাবধি গবেষকরা আবিষ্কার বা অনুসন্ধান করতে পারেননি। চামড়ায় কালো রং উৎপাদক বহির্ত¡কস্থিত কোষ মেলানো সাইটের স্থায়ী ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে এ দৃষ্টিকটু সাদা দাগের সৃষ্টি; কিন্তু কেন এ কোষের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু, তার কারণ জানার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। শ্বেতি রোগের সঙ্গে কিছু কিছু অভ্যন্তরীণ রোগের সহাবস্থান থাকতে পারে, যেমন-টাইপ এক বহুমূত্র রোগ, চোখের রোগ, পারনিসিয়াস এনিমিয়া থাইরয়েড রোগ, এডিসন্স ডিজিস, এলোপোসিয়া এরিয়াটা ইত্যাদি। এ কারণে শ্বেতি রোগী কোন চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলে তিনি ক্ষেত্রবিশেষ উল্লিখিত অভ্যন্তরীণ রোগগুলো আছে কিনাÑ তা শারীরিক ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে নির্ণয় করে থাকেন। সূর্যের আলো থেকে শ্বেতি রোগীদের সাবধানে থাকা উচিত; কেননা শ্বেতি রোগীর সাদা স্থানে সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি প্রতিরোধক কালো রঞ্জক না থাকায় আক্রান্ত স্থানগুলো এ রশ্মির প্রতি অতি সংবেদনশীল থাকে, ফলে সূর্যালোকের সংস্পর্শে সহজেই চামড়ার এ স্থান (শ্বেত স্থান) পুড়ে যেতে পারে। তাই সব শ্বেতি রোগীর সানস্কিন লোশন ব্যবহার করা উচিত। মনে রাখতে হবে, এ রোগটি সৌন্দর্যহরণ ব্যতীত শরীরের তেমন ক্ষতি করে না। আর খাবারের সঙ্গেও শ্বেতি রোগের কোন সম্পর্ক নেই। তাই টক, দুধ, ডিম বা অন্য কোন খাবার এ রোগ বৃদ্ধি করে না। লেখক : কনসালটেন্ট ও কসমেটিক সার্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অরোরা স্কিন এ্যান্ড এয়েসথিয়েটিক্স ধানম-ি, ঢাকা ০১৭১২৯৭২৮৪৮
×