ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

বীরের মর্যাদায় কিশোরী

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

বীরের মর্যাদায় কিশোরী

কয়েক দশক ধরে চলা ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনী জনগণের প্রতিরোধের ইতিহাস নানাভাবে বিশ্বের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে। ভবিষ্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী জেরুজালেমকে শুধু ইসরাইলের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতির ঘোষণার পর তা নতুন করে বিশ্বের সামনে চলে এসেছে। তৃতীয় ইন্তিফাদার (প্রতিরোধ যুদ্ধ) ডাকে ফিলিস্তিনজুড়ে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। চলছে আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত প্রশিক্ষিত দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষের লড়াই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে তৃতীয় ইন্তিফাদার ডাক দেয় হামাস। এর আগে দুটি বড় ধরনের ইন্তিফাদার ডাক দিয়েছিল ফিলিস্তিন। প্রথম ইন্তিফাদা ছিল ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত। তখন এটি ছিল মূলত একটি অসহযোগ আন্দোলন ও গেরিলা প্রতিরোধ। প্রথম ইন্তিফাদা চলাকালে শত শত ফিলিস্তিনীকে হত্যা করে ইসরাইলী বাহিনী। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বহু মানুষকে পঙ্গু করে দেয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হন হাজার হাজার মানুষ। প্রথম ইন্তিফাদার সময় ফিলিস্তিনীরা ব্যবহৃত টায়ার থেকে নেয়া রবারের চাকতিতে একটি লোহার পেরেক ঢুকিয়ে এক ধরনের টায়ার ছিদ্রকারী যন্ত্র উদ্ভাবন করে। পশ্চিম তীরে ইসরাইলের দখলকৃত অঞ্চলগুলোর প্রধান সড়কগুলোতে এ যন্ত্র ছড়িয়ে দেয়া হয়। আর সাবেক ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী এ্যারিয়েল শ্যারন কয়েক হাজার সেনা নিয়ে জেরুজালেমের পুরনো শহর (ওল্ড সিটি) এবং মসজিদুল আকসা ভ্রমণ করতে গেলে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হয়। ২০০০ সালে শুরু হয়ে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকে। মূলত ইন্তিফাদার মাধ্যমেই প্রতিবেশী কোন আরব দেশের সহায়তা ছাড়া দখলদার ইসরাইলী বাহিনীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সমর্থ হন ফিলিস্তিনীরা। ব্যাপক অত্যাচার-নির্যাতন, নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ, হত্যাযজ্ঞের মুখেও তারা প্রতিরোধ আন্দোলন থেকে পিছু হটেননি। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনীরা নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। ফিলিস্তিনী কিশোরী আহেদ ২০১২ সালে আল-তামিমি রামাল্লায় নাবি সালেহ গ্রামে তার বাড়ি থেকে ইসরাইলী সেনাদের হটিয়ে দিয়েছিলেন। এ সাহসিকতার জন্য তিনি ‘হান্দালা কারেজ এ্যাওয়ার্ড’ পান ওই বছর। এবার দিনকয়েক আগে তার ভাইকে মাথায় গুলি করে আহত করে ইসরাইলী সেনারা। কোকড়ানো ও সোনালি চুলের এই কিশোরী তাদের বাড়ির প্রবেশ পথের কাছে দাঁড়ানো দুই ইসরাইলী সেনার দিকে হেঁটে এগিয়ে যান। সেনাদের কাছাকাছি গিয়ে নিজেদের বাড়ির আঙিনা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলেন তিনি। কিন্তু ওই দুই সেনা তার কথায় কোন কর্ণপাত না করে দাঁড়িয়ে থাকে। তিনি ওই দুই সেনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু সেনারা কোন তোয়াক্কা না করায় এক সেনার গালে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেন তিনি। ইসরাইলী দুই সেনাকে ফিলিস্তিনী কিশোরীর রুখে দাঁড়ানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এর পরই ফিলিস্তিনের নবী সালেহ গ্রামের ১৬ বছর বয়সী এই কিশোরী নতুন প্রজন্মের এক বীরপ্রতীক হিসেবে ফিলিস্তিনের কাছে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান। দখলদার ইসরাইলীর সেনার মুখে বসিয়ে দেয়া তামিমির ঘুষি মারার ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এটিকে দেখার জন্য এখন রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ফিলিস্তিনীসহ বিশ্বের অন্য দেশের মানুষেরা। তবে ঘুষির ভিডিওটি ইসরাইলে পৌঁছতেও খুব বেশি দেরি হয়নি। এটি দেখে এবার উন্মত্ত হয়ে পড়েছে ইসরাইলী সেনারাও। গত শুক্রবার জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করার প্রতিবাদে পশ্চিম তীরে বিক্ষোভ করছিল ফিলিস্তিনীরা। এ সময় ফিলিস্তিনের বিখ্যাত কিশোরী এ্যাক্টিভিস্ট আহেদ তামিমির পরিবারের এক সদস্যকে মাথায় গুলি করে ইসরাইলী সেনারা। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে কিশোরী আহেদ তামিমি। এই দৃশ্য কেউ একজন মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় ভিডিওটি। এই ভিডিওকে ঘিরে ফিলিস্তিনী কিশোরীর বিরুদ্ধে ইসরাইলী কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে উস্কানি দেয় ইহুদীবাদী সংবাদ মাধ্যমগুলো। থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলী সেনারা মাসহ ওই কিশোরী আহেদ এবং তার ২১ বছর বয়সী চাচাত বোন নুর নাজি আল তামিমিকে গ্রেফতার করে।
×